রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:১৬:৫৬

চট্টগ্রামে সাকিব, ঢাকায় মাহমুদউল্লাহ

চট্টগ্রামে সাকিব, ঢাকায় মাহমুদউল্লাহ

সাইদুজ্জামান: চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিব আল হাসান। ঢাকা টেস্টে মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের ফল যা-ই হোক, ফুটনোটে জায়গা করে নিয়েছেন এ দুজন। বলার অপেক্ষা রাখে না, যা তাঁদের কারোরই ভালো লাগার কথা নয়।

সাকিব আল হাসান নিঃসন্দেহে দেশের সেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের অনেক জয়ের নায়ক। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ের অন্যতম দুটি কারণের একটি অবশ্যই প্রথম ইনিংসে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে সাকিবের আউট হওয়াটা। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেও সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ। এ অবস্থা থেকে জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে স্বাগতিকরা। তবে স্বপ্নের সেই ডানা গতকাল শেষ বিকেলে প্রবলভাবে মুচড়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ। টেস্টে ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেন যখন, তখন ধরেই নিতে হবে তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য উচ্চমার্গীয়, সাকিবের মতো তিনিও সুনাম এনেছেন দেশের জন্য। কীর্তিমান বলেই দিনের খেলা মিনিট তিনেক বাকি থাকার আগে ইংলিশ বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ খেলে বোল্ড হয়ে কাঠগড়ায় মাহমুদ। নিকৃষ্টতম আলোচনাও হচ্ছে তাঁকে ঘিরে।

নিকৃষ্টই তো! ৪ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানের কাছে বড় ইনিংসের দাবি থাকে দলের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩০টা ফিফটি থাকা মাহমুদের এমন লালায়িত থাকার কথাও নয়। কিন্তু ম্যাচ পরিস্থিতি ধরে সাধারণের সেন্টিমেন্ট—ফিফটির জন্যই ওই সময় আপনি ওই শটটি খেলেছিলেন মাহমুদ!

জাফর আনসারির একটু ওপরে করা বলটা যখন সুইপ করে বাউন্ডারিতে পাঠাতে চাচ্ছিলেন, তখন মাহমুদের স্কোর ৪৭। বাউন্ডারি হলেই ফিফটি পেরিয়ে যান তিনি। ওই বলটা ফ্রন্ট ফুটে গেলেই ব্যাটে পেয়ে যেতেন মাহমুদ। এরপর বড়জোর এক ওভার খেলা হতো কাল। তাতে ১২৮ রানের লিডের সঙ্গে ৮ উইকেটের স্বস্তি নিয়ে হোটেলে ফিরতে পারত বাংলাদেশ।

দলের পক্ষ থেকে এসে সংবাদ সম্মেলনে সতীর্থের বদনাম করার রীতি নেই ক্রিকেটে। আর মেহেদী হাসান মিরাজ তো অত্যন্ত জুনিয়র। তাই চট্টগ্রামে সাকিব কিংবা ঢাকায় মাহমুদের ‘পাগলামি’র সমালোচনা করার কথা নয় তাঁর, করেনওনি তিনি, ‘আসলে কোনো ব্যাটসম্যানই চায় না আউট হতে। তবে ব্যাটসম্যান তো আউট হয়ই। কখনো কখনো ক্ষণিকের ভুলে ফোকাসটা সরে গেলে আউট হয়ে যায়।’ একই প্রশ্নের উত্তরে টানা দুই টেস্টে এক ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া তরুণ অফস্পিনার প্রবোধ দেন, ‘আমাদের আরো ৭ ব্যাটসম্যান আছে। আশা করি তারা বড় লিড দেবে দলকে।’

সে না হয় দেবেন তাঁরা। এ-ও জানা কথা যে ব্যাটসম্যান আউট হতেই পারেন, সেটা প্রথম বলেও। কিন্তু সেট হয়ে দিনের শেষভাগে এবং তার চেয়েও বড় কথা এমন হঠকারী শটে কেন উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসবেন একজন সিনিয়র ব্যাটসম্যান? ব্যক্তিগত ল্যান্ডমার্ক যদি গুরুত্ব পেয়েই থাকে মাহমুদের মনে, তাহলে ফিফটি কেন সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি করারও সময় হাতে ছিল তাঁর। টেস্টের অলিখিত নিয়ম হলো দিনের শেষ এক-দুই ওভার দেখেশুনে উইকেট আগলে রাখা, ১৫ মাসের অনভ্যস্ততায়ও যা ভুলে যাওয়ার কথা নয় বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। কেন ওই সময় এমন শট খেলতে গেলেন মাহমুদ?

বাংলাদেশ দলের ভেতরে যে চর্চা হয়, তাতে এমন প্রশ্ন তাঁকে কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। পেশাদারত্বের নামে বাংলাদেশের টিম কালচারে অদ্ভুত একটা পদ্ধতি চালু হয়েছে। তুমি জুনিয়র তো তোমার ভুলগুলো একভাবে শুধরানো হবে, সিনিয়রদের জন্য ভিন্ন নিয়ম। উদাহরণ দিয়েই বলা যাক, জুনিয়র ক্রিকেটার বড় কোনো ভুল করলে প্রকাশ্য সমালোচনা থেকে শুরু করে দল থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাও আছে। সিনিয়রদের বেলায় ভিন্ন রীতি। খোঁজ নিয়ে যত দূর জানা গেছে, চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন সকালে ‘আত্মঘাতী’ শট খেলে দলকে বিপদে ফেলার পর সামান্য ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়নি সাকিবের কাছে। এ ট্রেন্ড থেকে অনুমান করা যায়, সিনিয়র হওয়ায় একই ‘রেয়াত’ পাবেন মাহমুদও।

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ক্লাসের ‘ফার্স্ট বয়’-এর মর্যাদা পেয়ে আসছেন দীর্ঘদিন হলো। মিডল অর্ডারে পদোন্নতি পাওয়া মাহমুদ ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্র এখন। তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমরাও একই গোত্রের। বাকি জুনিয়র, ক্লাসে নতুন কিংবা তুলনামূলক ‘মিডিওকার’। তাঁদের কেউ ক্যাচ ফেললে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় বোলারের। কিন্তু প্রথম সারির কোনো খেলোয়াড়ের ভুলেরই প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া দেখায় না দল। তাঁরা সিনিয়র যে!

কোনো সন্দেহ নেই, সম্মানের জায়গা অনেকটাই তাঁদের নিজেদের তৈরি। নৈপুণ্য দিয়ে, সাফল্যের পথ দেখিয়ে জুনিয়র ক্রিকেটারদের কাছে অনুসরণীয় তাঁরা। অনুসরণীয় বলেই দলের সিনিয়রদের দায়িত্বটা আরো বেশি। তবে দিনের দ্বিতীয় বল ডাউন দ্য উইকেটে তুলে মারা সে দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না। দল যখন যক্ষের ধনের মতো উইকেট আগলে রাখতে চাচ্ছে শেষবেলায়, তখন সুইপ শটে উইকেট বিলি করাও চরম নিন্দনীয়।

অবশ্য তেমন নিন্দামন্দ তাঁদের কোনো পর্যায় থেকে করা হয়েছে কিংবা হচ্ছে বলে জানা যায়নি!-কালের কন্ঠ
৩০ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে