মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর, ২০১৬, ০১:১৬:৩৬

বন্ধু মোস্তাফিজের পরামর্শ না মেনে বিপদে পড়লো মিরাজ

বন্ধু মোস্তাফিজের পরামর্শ না মেনে বিপদে পড়লো মিরাজ

রানা আব্বাস: খুলনায় আসার আগে মেহেদী হাসান মিরাজকে মোস্তাফিজুর রহমানের সাবধানী বার্তা, ‘গতবার আমি বুঝেছিলাম। এবার তোর পালা। বাড়ি যা, মানুষের ভিড় কাকে বলে বুঝবি!’
বন্ধু হলে কী হবে, এদিক দিয়ে মোস্তাফিজ তো ঢের সিনিয়র। মানুষের এই ভালোবাসার মধুর যন্ত্রণা এড়ানোর সাবধানী টিপসও দিয়েছিলেন গোটাকয়।

কাল দুপুরে বিসিবি একাডেমি ভবনে এসেছিলেন মিরাজ। সেখানেই মোস্তাফিজের সঙ্গে তাঁর দেখা। দুজন এমনিতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দীর্ঘদিন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন একসঙ্গে। দুজনের একটা আশ্চর্য মিল—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই উপহার দিয়েছেন বিস্ময়।
মোস্তাফিজ যখন গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে সাতক্ষীরায় ফিরলেন, হুলুস্থুল কাণ্ড হয়েছিল। যশোর বিমানবন্দর থেকে তাঁর কালীগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রাম পর্যন্ত তাঁকে এক পলক দেখতে মানুষের ভিড়।

মিরাজের ক্ষেত্রে কাল অতটা লোকারণ্য হয়নি বটে, তবু এত গোপনীয়তার পরও কী করে যেন সবাই টের পেয়ে গেল। ভালোবাসার বুঝি অদ্ভুত এক তরঙ্গ আছে।
মিরাজ চাননি তাঁকে নিয়ে বেশি মাতামাতি হোক। কদিন পর আবার ক্রিকেটের ব্যস্ততা। বিপিএলের আগে মনটা সতেজ, চনমনে করতে মাত্র এক দিনের জন্য খুলনার খালিশপুরের বাসায় ঘুরে আসতে চেয়েছেন। কাল সকালে তাঁর কাছে রওনা হওয়ার সময়টা জানতেই অনুরোধ করেছিলেন, ‘বাড়ি যাচ্ছি, কাউকে বলবেন না প্লিজ।’
সংক্ষিপ্ত সফরটা নিরিবিলি ও নিজের মতো করেই কাটাতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু তা কি আর হয়! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে রেকর্ড ১৯ উইকেট পেয়েছেন। বিস্ময়-বালকের প্রতি মানুষের তুমুল আগ্রহ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। হলোও তাই। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে খুলনার খালিশপুরের নতুন রাস্তার মোড়—মিরাজকে এগোতে হয়েছে মানুষের ভিড় ঠেলেই। কেউ জড়িয়ে ধরে, কেউ সেলফি তোলে, কেউ এক পলক দেখেই খুশি। এ কান–ও কান হয়ে খুলনায় ছড়িয়ে পড়ে মিরাজ এসেছেন। রাতে তাঁদের বাড়ির ছোট্ট উঠানের মতো জায়গাটায় লোকে লোকারণ্য।


মিরাজের বাবা জালাল তালুকদার মানুষকে আতিথেয়তা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। ছোট বোন রুমানা আক্তার বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে দেখেন, তাঁর ভাইকে নিয়ে সবার কী মাতামাতি, কী হইচই! যশোর বিমানবন্দরে এই দুজনই গিয়েছিলেন মিরাজকে বরণ করে নিতে। সেখানে আরেক অপার্থিব দৃশ্য। দুজনই তাঁকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না। মিরাজ যেন অপ্রস্তুতই ছিলেন অদ্ভুত সুন্দর এই দৃশ্যের জন্য। মাঠের পারফরম্যান্সে যেমন তাঁর পরিপক্বতার ছাপ, এখানেও তাই। বাবা-বোনকে সামলে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়েন।
মিরাজের জন্য ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরাটা নিশ্চয়ই নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষে যখন খুলনায় ফিরলেন, তখনো বেশ হইচই হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। তবে এবারের তুলনায় সেটির সঙ্গে কিছুতেই নয়। আসার খবর তেমন কাউকে জানাননি, তবু মানুষের ভিড় লেগে আছে বাড়িতে। অবশ্য এই ভিড়ভাট্টা মোটেও যন্ত্রণা মনে করছেন না মিরাজ, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফেরার পরও বেশ ভিড় হয়েছিল। তবে এবার আগেরগুলো ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় দলে খেলার গুরুত্বই আলাদা। বাংলাদেশে ভালো খেলেছে, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি বলেই মানুষের এত আগ্রহ।’
রাত প্রায় ১১টা, মিরাজের বাড়িতে মানুষ আসতেই থাকে। এই সময় হঠাৎ লোডশেডিং। অন্ধকারে ডুবে যায় মিরাজদের দুই রুমের বাড়িটা। অগত্যা তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়। আজ নিশ্চিত বিরাট হ্যাপাই পোহাতে হবে তাঁকে। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর বাড়ি ফেরার খবরটা গোপন রাখা যায়নি। মোস্তাফিজের ভাষায়, ‘মানুষের ভিড় কাকে বলে’ মিরাজ বুঝবেন!

অকপট, স্বার্থহীন যে ভালোবাসা, তাকে কি বাঁধ দিয়ে রোখা যায়?-প্রথম আলো
১ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে