সোমবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৭:৫৯

সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা জাইদি

সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা জাইদি

সামীউর রহমান: এমন নয় যে এবারই প্রথম বাংলাদেশে এসেছেন আসহার জাইদি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন। তবে চোখ ধাঁধানো কিছু করে দেখাতে পারেননি। তাই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তাঁকে দলে নেওয়াটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়ে ওঠেনি। ক্রিস গেইল, কুমার সাঙ্গাকারার মতো ক্রিকেটাররা যে আসরে খেলছেন, সেখানে জাইদির তো জনারণ্যে হারিয়েই যাওয়ার কথা। কিন্তু খেলা যত মাঠে গড়িয়েছে, ততই তাঁকে খুঁজে ফিরেছে স্পটলাইট। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের শিরোপা জয়ে দারুণ অলরাউন্ড অবদান পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ডে অভিবাসন করা জাইদির। তাই তো অনেক তারকাকে ছাপিয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছিল তাঁর হাতেই। এবারে তাই শুরু থেকেই চোখ জাইদির ওপর। কাল মেঘলা বিকেলে সংক্ষিপ্ত অনুশীলন শেষে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই জাইদি জানালেন তাঁর জীবনের গল্প, স্বপ্নের কথা।

বাঁ হাতে ব্যাট করেন, সঙ্গে বাঁ-হাতি স্পিন। যে বৈশিষ্ট্য সাকিব আল হাসানেরও। মাঠের কৃতিত্ব দেখিয়ে সাকিব বিশ্বে অলরাউন্ডারদের র্যাংকিং টেবিলে ওপরের দিকে থাকেন, ভিনদেশে খেলতে ডাক পান, সেই সাকিবের ঘরের মাঠেই গেল মৌসুমের বিপিএলে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তাক লাগিয়ে দেওয়া জাইদিকে নিয়ে তাই কৌতূহল বাড়ে। সুলুকসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিন খেলার পর বিভিন্ন কাউন্টিতে ট্রায়ালের সুযোগ চেয়ে চিঠি লিখতেন জাইদি। এভাবেই সুযোগ হয় ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে, সেখান থেকে সাসেক্স হয়ে এখন খেলছেন এসেক্সে। পেয়েছেন ব্রিটিশ পাসপোর্টও। তাঁর কাছেই শুনুন বাকিটা, ‘আমার জীবনটা রোলার কোস্টার রাইডের মতো। ইংল্যান্ডে আসার আগে দশ বছর পাকিস্তানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। ইংল্যান্ডে থিতু হওয়ার পর বেশ কিছু কাউন্টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, যাতে আমাকে তারা অন্তত ট্রায়ালে ডাকে। সব মিলিয়ে আমার ক্যারিয়ারে অনেক উত্থানপতনই ছিল বলা যায়, তবে এখন যে অবস্থায় আছি তাতে বেশ সন্তুষ্ট।’ ২০১৩-তে মন্টি পানেসার সাসেক্স ছাড়ার পর দলে যখন একজন স্পিনারের খোঁজ চলছিল, তখন সুযোগটা আসে জাইদির সামনে। সাসেক্সের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে একটি ম্যাচে অপরাজিত ১৯২ রান ও ৬ উইকেট নেওয়া জাইদির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে সাসেক্স, নিজের ভাগ্য গড়ে নেন জাইদি।

বিপিএলের গত আসরে ১১ ম্যাচের ৮ ইনিংসের ৪টিতে অপরাজিত থেকে করেছিলেন ২১৫ রান, স্ট্রাইকরেট ছিল ১৩৮। বল হাতে ১১ ম্যাচে ১৭ উইকেট, ওভারপ্রতি গড় রান পাঁচের নিচে।  মাত্র ৩০ হাজার ডলারের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এমন নৈপুণ্য নিঃসন্দেহে আশা করেনি খোদ ভিক্টোরিয়ানস কর্তৃপক্ষও! পরে অবশ্য বোনাস দিয়ে অঙ্কটা বাড়িয়েই দেওয়া হয়েছে শিরোপার অন্যতম কারিগরকে। তাতে এবার প্রত্যাশার চাপটা বুঝতে পারছেন তিনিও, ‘চাপ তো আছেই। অবশ্য পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। আশা করছি দল হিসেবে গতবারের ফর্মটা এবারেও ধরে রাখতে পারব।’

ক্রিকেটের টানে দেশ ছেড়েছেন জাইদি। কিন্তু জন্মভূমি পাকিস্তান বা অভিবাসিত হওয়া ইংল্যান্ড; কোনো দলের পক্ষেই খেলা হয়নি তাঁর। তবে ব্রিটিশ পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়া ও ইংল্যান্ড দলে আদিল রশিদ, জাফর আনসারিদের মতো স্পিনারদের দেখে আশাবাদী হচ্ছেন জাইদিও, ‘আসলে এই মুহূর্তে সবই সম্ভব। কারা খেলছে, কারা খেলছে না সেসব নিয়ে খুব একটা ভাবছি না। আমি চেষ্টা করছি নিজের সেরাটা দিতে। জাতীয় দলে খেলাটা অনেক গর্বের, সুযোগ যদি আসে সেটা আমি অবশ্যই কাজে লাগাব।’-কালের কণ্ঠ
০৭ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে