দেবাশিস দত্ত: লজ্জা! ইডেনের পালকে। ভেজা মাঠের কারণে এর আগেও বহুবার লজ্জা মুকুট হিসেবে ছিল। এক নয় একাধিকবার। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন টি–২০ ম্যাচ বৃহস্পতিবার শুরু করতে না–পারা। সি এ বি কর্তাদের শতকরা ৯৯ শতাংশ আঙুল তুললেন কিউরেটর প্রবীর মুখার্জির দিকে। অন্যতম যুগ্ম সচিব বাবলু গাঙ্গুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, প্রবীরবাবুকে কী পদত্যাগ করতে বলা হবে?
প্রথমে বললেন, ‘নো কমেন্টস।’ পরে যোগ করলেন, ‘গ্রাউন্ড কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। তারপরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ এবার জানানো যাক, ঠিক কী কী কারণে খেলা শুরুই করা গেল না? আউটফিল্ড ভিজে থাকা। পৌনে ১টার সময় হঠাৎ যে বৃষ্টিটা এসেছিল, তখন মালিরা গিয়েছিলেন সবাই মিলে লাঞ্চে। ওই পশলার বৃষ্টিতেই দফারফা হয়ে গেছিল আউটফিল্ড। এখানে যথেষ্ট ঝঁুকি নিয়ে খেলতে হত দু’দলকেই।
২–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে চাইছিল না। সামনে একদিনের সিরিজ, তারপর টেস্ট সিরিজ। ফলে কেনই বা ওঁরা ঝুকি নেবেন। ভারতও কী চাইছিল? এই তর্কে ঢুকতে চাইছি না। টসই হয়নি। তাই, প্রথম এগারোয় কে কে থাকছেন, এটা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। তবে, মাঠে আসার পর অমিত মিশ্রর চলাফেরায় যে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নজরে এল, তাতে মনে হয়, খেলা শুরু হলে অমিত প্রথম এগারোয় থাকতেন।
তিনদিন আগে ভারতের ব্যাটিং–ব্যর্থতার কারণে পরাজয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন কটকের বারাবাটি স্টেডিয়ামে জলের বোতল উড়ে এসেছিল। আমরা লজ্জিত হয়েছিলাম। ইডেন–অপদার্থতার কারণে, আমরা আরও একবার লজ্জিত হলাম।
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড সাড়ে ৯টার সময়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলে তিনতলায় নিজের চেম্বারে দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই সিঁড়িতে ধরলাম এবং জানিয়ে দিলেন যে, খেলা হবে না। অন্যতম দুই নির্বাচক রজার বিনি এবং বিক্রম রাঠোর আশা করেছিলেন যে, অন্তত ৫ ওভারের একটা ম্যাচ হবে। কিন্তু মাঠের নরম ভাবের জন্য েখলার শুরুই করা গেল না।
ইডেনের গ্যালারিকে ধন্যবাদ দিতে হবে যে, তারা প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা হাত গুটিয়ে অসহায়ের মতো বসে থাকলেন এবং সেভাবে, মােন কটকের মতো প্রতিবাদ করলেন না। উদ্যোক্তারা দর্শক মনোরঞ্জনের কথা কোনওকালেই ভাবেন না। তাই, আরও একবার শূন্য হাতে ফিরে যেতে হল। এমনিতেই পুজো, পেলের আগমন এবং ০–২ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার কারণে এই ম্যাচ দেখার আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছিল। যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকেই সি এ বি কর্তাদের প্রবল গালাগাল দিতে দিতে মাঠ ছাড়লেন।
বৃষ্টি হলেই যেমন কলকাতার কয়েকটি রাস্তা ডুবে যায়, ইডেনের ক্ষেত্রেও ঠিক এই কথাটাই প্রযোজ্য। দুঃখের বিষয় এই যে, চা–টোস্ট এবং গাড়ির পিছনে সি এ বি কর্তারা যত টাকা খরচ করেন, তার কিছুটা অংশও প্রতি বছর খরচ করার মানসিকতা দেখালে ইডেনের জলনিকাশি বন্দোবস্ত এবং ৩৬০ ডিগ্রি মাঠ ঢাকার প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম কিনে ফেলার উদ্যোগ নিতেন।
খেলা বাতিল এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সি এ বি–র ৫ প্রাক্তন কর্তা হা–হুতাশ করলেন, ‘আমরা চেয়ারে নেই বলে তো কী হয়েছে, লজ্জিত হচ্ছি আমরাও। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ করার জন্য যতটা প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, তা তো এবার নেওয়া যায়নি।’ মেনে নিতেই হবে? কে তাদের দিব্যি দিয়েছিল যে, ৮ অক্টোবর কলকাতায় বৃষ্টি হতে পারে জেনেও এই ম্যাচ ইডেনে ছিনিয়ে আনার? যিনি এনেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন সি এ বি–র সভাপতি। এখন তিনি নেই।
তাই সরাসরি সর্বত্র একমুখী আক্রমণ প্রবীর মুখার্জিকে। অনেকটাই তিনি দায়ী। ৮৫ বছরের একজন মানুষের সঙ্গে আরও কয়েকজন বিচক্ষণ উঠতি কর্মকর্তাদের কী প্রবীরবাবুর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেত না? এখন পালে বাঘ পড়েছে, তাই শুরু হবে সরেজমিন তদন্ত। অচিরেই তা বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাবে। হয়ত বলি হয়ে যাবেন প্রবীরবাবু। হয় তঁাকে বরখাস্ত করা হবে, নয়ত পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু ইডেনের সমস্যাগুলো তো থেকেই যাবে, যদি না ১৫ অক্টোবর হবু সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আবহ তৈরি করতে না পারেন। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্বে এক, দুই বা তিনজন থাকতে পারেন না।
গৌতম দাশগুপ্ত, চিত্রক মিত্র, বাবলু কোলে, প্রবীর চক্রবর্তীরা অভিমানে দূরে সরে আছেন, লজ্জার চাদর সরিয়ে এখন সবার উচিত সব বিভেদ ভুলে ইডেনের সুনাম ফেরানোর জন্য ঝঁাপিয়ে পড়া। তা না হলে আবারও নতুন লজ্জা সি এ বি–কে গ্রাস করে নেবে। সামনের ফেব্রুয়ারিতেই লজ্জার ইডেনে টি–২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেভাবে সি এ বি–র অন্দরমহলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা যদি আটকে দেওয়া না যায়, তাহলে আরও বড় লজ্জার ঢেউ কিন্তু ইডেনের দিকে ধেয়ে আসবে।
পুনশ্চ: দু’দিন আগে প্রবীর মুখার্জি আজকাল-কে বলেছিলেন, ‘পিচ নিয়ে কাউকে সমালোচনা করতে দেব না৷’ খেলা শুরুর আগেই ভেজা আউটফিল্ডকে কেন্দ্র করে তার গাফিলতির সমালোচনায় সবাই মুখর৷ কোনও কিছুকেই নিশ্চিতভাবে ধরে নিতে নেই, ৮৫ বছর বয়সী মানুষটা কি ভুলে গেলেন? ইডেন অবশ্য এদিন তৈরি হয়েছিল ডালমিয়া, নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল, ঠিক সময়ে ইডেনের আউটফিল্ড সম্পূর্ণভাবে ঢেকে না রাখার কারণে। এ কারণেই রাতে ইডেনের খলনায়ক হয়ে উঠলেন ৮৫ বছরের ওই তরুণ।
৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি