শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ০৯:৫৩:৩১

টি-টোয়েন্টিতে এ কী উইকেট!

টি-টোয়েন্টিতে এ কী উইকেট!

স্পোর্টস ডেস্ক : অনন্য এক লড়াইয়ে এ আসরে বরিশালের প্রথম জয়। আর আরেকটি হার মাশরাফি বিন মর্তুজার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ১২৯ রানে আটকে রাখার পর মুশফিকুর রহিমের ৩৩ ও থিসারা পেরেরার ৩৪* রানে এবারের আসরে প্রথম জয় (৬ উইকেটে) তুলে নেয় বরিশাল বুলস।  

মরা গাঙে হঠাৎ ভরা জোয়ার! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দর্শকখরা নিয়ে হাপিত্যেশ ছিল এই আগের দিন পর্যন্তও। কিন্তু কাল দৃশ্যপট পাল্টে যায় ভোজবাজির মতো। ছুটির দিন দুপুরে খেলা শুরুর পর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরতে সময় লাগেনি। বিশেষত পূর্ব গ্যালারিতে তো দাঁড়িয়েও খেলা দেখেন অনেকে। ওদিকে বাইরে দর্শকদের দীর্ঘ লাইনও হ্রস্ব হওয়ার লক্ষণ নেই। আয়োজকদের কপালে পড়া দুশ্চিন্তার বলিরেখা তাই মুছে যাওয়ার কথা!

কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের যে স্বস্তি মিলছে না কিছুতে! বিপিএলে দর্শক আগ্রহের পালাবদল হলেও রূপবদল হচ্ছে না উইকেটের। আর ব্যাটসম্যানদের মাইনফিল্ড হয়ে থাকা অমন চৌকো ২২ গজ যে ২০ ওভারের ক্রিকেটের আদর্শ না, তা তো কাল বলে যান মুশফিকুর রহিম। একই সঙ্গে প্রত্যাশা, বিপিএলের সামনের ম্যাচগুলোয় আরেকটু ব্যাটিং-বান্ধব উইকেটের।

ওই প্রত্যাশা শুধু বরিশাল বুলসের অধিনায়কের না, সবার। পিঁপড়ে-লাইনে দাঁড়িয়ে নানা হ্যাপা পেরিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকা দর্শকদের। টি-টোয়েন্টি তারা দেখতে আসেন মূলত চার-ছক্কার হাততালি দেওয়ার জন্য। দুই দলের ব্যাটসম্যানরা ছোটাবেন রান ফোয়ারা—তবেই না পয়সা উসুল! কিন্তু এবারের বিপিএলে তা হচ্ছে কই! কালকের প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস যেমন হাঁচড়ে-পাচড়ে যেতে পারে ১২৯ পর্যন্ত। ওই রান টপকে যাওয়ায়ও দাপট নেই বরিশালের। এমনকি ১৫ ওভার পর্যন্ত তো জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। শেষ দিকে দ্রুতগতিতে রান তোলায় ১৯তম ওভারে জয় নিশ্চিত হয় মুশফিকের দলের। তবে দর্শকদের তৃষ্ণা তা মেটাতে পারেনি সেভাবে।

পারেনি বিপিএলের আগের বেশির ভাগ ম্যাচও। পরশু যেমন খুলনা টাইটানস অলআউট হয়ে যায় বিপিএল ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৪৪ রানে। মাহমুদ উল্লাহর দল নিজেদের প্রথম ম্যাচ জেতে আবার মোটে ১৩৩ রানের পুঁজিতে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে চিটাগং ভাইকিংস সব কটি উইকেট হারায় ১২৪ রানে। প্রথম দিনটি ব্যতিক্রম ধরে বিপিএল যে ক্রমশ বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে বোলারদের প্রতি! কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের সঙ্গে যা মানানসই নয় মোটেও।

বরিশাল বুলসের অধিনায়ক মুশফিকও কাল ম্যাচশেষে বলে যান তা, ‘সত্যি বলতে কী, উইকেট দেখে মনে হয় ভালো কিন্তু ব্যাটিং করতে গেলে অনেক কঠিন মনে হয়। নতুন বলে স্পিনটা কঠিন আবার কিপিং করেও বুঝলাম পেস বোলিংও কঠিন। একটা বল লাফ দেয়, আরেকটা বল নিচু হয়।’ আবহাওয়ার পটপরিবর্তনের কারণে উইকেট তৈরি করার কাজটি কিউরেটরের জন্য কঠিন হচ্ছে—এটি অনুমেয়। কিন্তু তা যে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানদের, সেটি বলে যান মুশফিক, ‘হয়তো-বা এটা আবহাওয়ার কারণে হতে পারে। প্রতিদিন ম্যাচ হচ্ছে; কিউরেটরের বোঝা কঠিন কতটুকু পানি দিতে হবে। রোদ কতটুকু উঠবে এটাও অনুমান করা যায় না। এখন আবার রোদের উত্তাপও আগের মতো থাকে না। শীতের শীতের ভাব। এটি তাই কিউরেটরের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং।’

সেই চ্যালেঞ্জে ব্যাটসম্যানরা এখনো সেভাবে জিততে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৬১ রানের ইনিংস দেয় সে সাক্ষ্য। মুশফিক তাই সামনে আরেকটু ভালো উইকেটের আশা করছেন, ‘ভবিষ্যতে আশা করব উইকেট যেন একটু ভালো হয়। কারণ দর্শক আসে মাঠে রান দেখার জন্য। আশা করছি যদি এগুলো করতে পারি ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো হবে।’ জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের কথা ধরলে তাদের এই ভোগান্তির শুরু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই। সেখানে না হয় টেস্ট জয়ের জন্য ফাঁদ পাতে স্বাগতিকরা! কিন্তু টি-টোয়েন্টির চাহিদাপত্রে তেমনটা তো নেই। টেস্ট দলের অধিনায়ক এখান থেকেও ভালো কিছু খুঁজে নিতে চাইলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে বিদেশের মাটিতেও এরকম অনেক সময় হয়ে থাকে। এটাও মানসিকভাবে অনেক শক্ত করে যে, সেট হলে প্রতি বলে মারা যায় না। এক-দুই রান করে নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করা শিখতে হবে। তার পরও উইকেট আরেকটু স্পোর্টিং হলে ভালো হয়।’অন্তত কুড়ি-বিশ ফরম্যাটের চাহিদা তো তাই!
১২ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে