রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৮:৪১

মঈণ-আদিলের কাছে স্পিন সাম্রাজ্যে ভারতের আধিপত্যের অবসান!

মঈণ-আদিলের কাছে স্পিন সাম্রাজ্যে ভারতের আধিপত্যের অবসান!

স্পোর্টস ডেস্ক: ভারতে বর্তমানে সফররত অ্যালেস্টেয়ার কুক’দের এই দলটি যতটা না ইংল্যান্ডের, তার চেয়েও বেশি করে এশীয় বংশোদ্ভূতদের উপস্থিতিতে উজ্জ্বল। দলের তিনজন স্পিনারই এশীয় বংশোদ্ভূত। মঈন আলি, আদিল রশিদ ও জাফর আনসারি।

রাজকোটে ইংল্যান্ডের চেয়ে ৪৯ রানে পিছিয়ে থেকে প্রথম ইনিংস শেষ করা ভারতীয়দের দশটির মধ্যে আটটি উইকেট এই স্পিনার ত্রয়ী নিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। এরপর ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড তুলে ফেলল বিনা উইকেটে ১১৪। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা ১৯ বছরের হাসিব হামিদ ৬২ রানে অপরাজিত। এমনিতেই তাকে নতুন বিস্ময় বালক বলে ডাকা হচ্ছিল। অভিষেকে টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়ে গেলে আরো বিশেষণে ভরিয়ে দেয়া হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু কে হাসিব হামিদ? না, ইসমাইল হামিদের ছোট ছেলে। সেই ইসমাইল, যিনি এই রাজকোটেই বড় হয়েছেন। তারপর কাজের সন্ধানে ইংল্যান্ডে চলে যান। তার ছেলেই এখন স্পিনের দেশে এসে ইংল্যান্ডের পরিত্রাতা হয়ে উঠছেন।

শুধু ইংল্যান্ড বলেই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এরকম উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে। এশীয় বংশোদ্ভূতরা এসে বিশেষ করে স্পিন বোলিংয়ের আকাল মেটাতে শুরু করেছেন। যেমন ইমরান তাহির। পাকিস্তানে জন্ম হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান স্পিনার। চারদিকে এশীয় বংশোদ্ভূতরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভূত হতে শুরু করেছেন। এর ফলে ক্রিকেটের মানচিত্রটাই পাল্টে যেতে পারে। ভারত-পাক এতকালের স্পিনের মৌরসিপাট্টা ভেঙে যেতে পারে।

আদিল রশিদ যেমন অশ্বিন-জাডেজাদের দেশে এসে চারটি উইকেট নিয়ে গেলেন প্রথম ইনিংসে। তাদের সঙ্গে আসা স্পিন গুরুও পাকিস্তানের কিংবদন্তি স্পিনার। সাকলায়েন মুশতাক। এক-এক সময় দেখে সন্দেহই জাগবে যে, টেস্ট ম্যাচটা বিরাট কোহলি’রা কি ইংল্যন্ডের সঙ্গে খেলছেন নাকি ইঙ্গ-এশিয়া সম্মিলিত একাদশের বিরুদ্ধে? দলের চল্লিশ শতাংশ ক্রিকেটার এশীয় বংশোদ্ভূত। এবং, ভারতের মাটিতে পাঁচ টেস্টর সিরিজে এই এশীয় বংশোদ্ভূতরাই কুকের সবচেয়ে বড় ভরসা। তারাই না পার্থক্য গড়ে দিয়ে চলে যান।

ভারতীয় স্পিন অস্ত্ররা সেই তুলনায় বেশ চাপেই পড়ে গিয়েছেন। অশ্বিন যেমন ব্যাট হাতে ফের দুরন্ত অবদান রাখলেন। তার ১৩৯ বলে ৭০ রানের ইনিংসের জন্যই ইংল্যান্ডের ‘লিড’ অনেক কম হলো। না হলে পর-পর উইকেট হারিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে টেস্ট হেরে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারত। কিন্তু বল হাতে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুললেন অশ্বিন। দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেটই পাননি এখনো তিনি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, ভারতের সেরা স্পিন অস্ত্রের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, ধৈর্য হারাতে শুরু করেছেন। সেটা হলে কিন্তু অ্যাডভ্যান্টেজ ইংল্যান্ড।

আজ রোববার টেস্টের শেষদিনে যদি ইংল্যান্ডকে কোণঠাসা করে অভাবনীয় জয়ের দরজা খোলা না-ও যায়, অশ্বিনকে ফর্মে ফিরতেই হবে। না হলে যদি শেষদিনেও অশ্বিনকে নির্ভাবনায় খেলে দেয় ইংল্যান্ড তাহলে বাকি সিরিজের সুর তৈরি হয়ে গেল। অশ্বিনকে নিয়ে ভয়টাই তখন অনেকটা কেটে যেতে পারে ইংল্যান্ড দলের।
সরি, ভুল লেখা হল। ইঙ্গ-এশীয় সম্মিলিত একাদশের।

আর তখন এশীয় বংশোদ্ভূত স্পিনারদের কাঁধে ভর করে পাল্টা ভারতকে চাপে ফেলে দিতে পারেন কুক’রা।
অশ্বিনের সঙ্গে শেষ দিন পরীক্ষা চলবে নতুন কোচ অনিল কুম্বলেরও। এই সিরিজে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডই বেশি চালকের আসনে থেকেছে। এখান থেকে রোডম্যাপ পাল্টাতে হলে কোচকে পথ দেখাতে হবে। অশ্বিনকে বের করে আনতে হবে অন্ধকার থেকে।

রাজকোটে এখন পর্যন্ত কুম্বলেকে যতটুকু দেখা গেছে, তিনি এখনই খুব উদ্বেগ হয়তো প্রকাশ করতে চাইছেন না। লাঞ্চ বা চা-পানের সময় কুম্বলে নিজেই নেমে পড়ছেন রিজার্ভ বোলারদের নেট প্র্যাক্টিস করাতে। কারণ, এই টিমে এখনও বোলিং কোচ নেননি তিনি। কিন্তু সেই রিজার্ভ স্পিনার তো জয়ন্ত যাদব। এই টেস্টে যাঁরা খেলছেন সেই অশ্বিন, অমিত মিশ্র বা জাডেজাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য কোচ লাঞ্চে ড্রেসিংরুমে কেন থাকবেন না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।

হতে পারে কোচ কুম্বলের ধরন এটাই। তিনি ম্যাচ চলাকালীন বেশি পরামর্শ দেয়ায় বিশ্বাসী নন। যেমন ক্যাপ্টেন হিসেবে মনে করতেন, সিনিয়র ক্রিকেটারদের গিয়ে দায়িত্ব বোঝাতে হবে কেন? তাদের নিজেদেরই তো বোঝা উচিত, কী করণীয়। এত বছর ধরে আমার মতোই তো তারাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। সমস্যা হচ্ছে, অধিনায়কত্বের সেই দর্শন কি কোচ হিসাবে খাটবে?

রাজকোটে পরীক্ষা সবে শুরু হয়েছে। হয়তো ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচ টেস্টের সিরিজই বলে দেবে। তবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, খেলোয়াড়জীবনে বরাবর সেরা পারফরম্যান্স করতে চাওয়া কুম্বলে তার দলে কোনো দায়সারা মনোভাব বরদাস্ত করবেন না। কোচের দায়বদ্ধতার ছোঁয়া যদি টিমের গায়ে লাগে, সিরিজের অনেক রাস্তা এখনো যাওয়া বাকি।-নয়া দিগন্ত
১৩ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে