রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:২৮:১৪

২০১৬ বিপিএলে ম্যাজিক বয়ে রুপ নিলেন রিয়াদ

২০১৬ বিপিএলে ম্যাজিক বয়ে রুপ নিলেন রিয়াদ

স্পোর্টস ডেস্ক: রিয়াদ রিয়াদ বন্দনা। চলুন এবার গাওয়া যাক রিয়াদের গান। গতকাল (শনিবার) শেষ ওভারে এমন করে জয় এনে দেওয়া, পার্ট টাইম বোলিং করে ম্যাচের চিত্র ঘুরিয়ে দেওয়া; এমন একটা বোলার তো বাংলাদেশের চাই।

সেই বোলারটা আবার জাতীয় দলে থাকেন; কিন্তু গত দুই বছর তার এই জাদুটা কিছুতেই দেখা যাচ্ছে না। খুলনাকে শেষ ওভারে ম্যাচ জেতান রিয়াদ। ম্যাজিক বয়ে রুপ নিয়েই দল জেতান তিনি।

জয় প্রতিটি ম্যাচের শেষ ওভারে ৩ টি করে উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বিপিএল নতুন এক বিনোদনের সংযোজন করেছেন রিয়াদ।

রিয়াদের জাদু জাতীয় দলে কেনো দেখা যাচ্ছে না, সে বিষয়ক আলোচনায় যাওয়ার আগে একটু বোলার রিয়াদের পুরোপুরি ব্যাটসম্যান রিয়াদ হয়ে ওঠাটা বুঝে নেওয়া যাক।

রিয়াদ ২০০৭ সালে তার অভিষেক ওয়ানডেতে ৭ নম্বরে ব্যাট করেছিলেন এবং ৬ নম্বর বোলার হিসেবে বল করেছিলেন। ২০১৩ সাল অবদি কম-বেশী এটাই ছিলো জাতীয় দলে রিয়াদের ভূমিকা-নিখাদ অলরাউন্ডার। সাত নম্বরে ব্যাট করবেন, পঞ্চম বা ষষ্ঠ বোলার হিসেবে এসে কিছুটা হাত ঘোরাবেন।

ব্যাটে এই ভূমিকাটা অপরিবর্তিত থাকলেও বোলিংয়ে রিয়াদ সময়ের সাথে সাথে আরও নিয়মিত হতে থাকেন। যার প্রমাণ আমরা দেখি, ২০১৪ সালের নভেম্বর অবদি ৬৬টি উইকেট ঝুলিতে পুরে ফেলেছেন রিয়াদ।

এই উইকেটসংখ্যা ঠিক বোঝাতে পারবে না, এই সাত বছরে রিয়াদের কাছ থেকে ওয়ানডেতে অন্তত কতোশত ম্যাজিক স্পেল পেয়েছে বাংলাদেশ। তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ২০১৩ সাল অবদি রিয়াদ ছিলেন বিশ্বের সেরা ৭ নম্বর ব্যাটসম্যান এবং ৬ নম্বরে বল করা সবচেয়ে সফল বোলার।

কিন্তু ২০১৪ সালের শেষে এসে রিয়াদের ভূমিকাটা হঠাৎ বদলে গেলো। তিনি হঠাৎ করে দলের সবচেয়ে ভরসার ব্যাটসম্যান হয়ে উঠলেন। টেস্ট ও ওয়ানডেতে চার নম্বরে এবং টি-টোয়েন্টিতে সাত নম্বরে দলের মূল ব্যাটসম্যানের ভূমিকা নিতে হলো। এই নতুন ভূমিকায় রিয়াদ কতোটা সফল, সেটা আর বলে বোঝানোর দরকার নেই।

অলরাউন্ডার হিসেবে যেমন, ক্যারিয়ারের প্রথম ৬-৭ বছর সেরাটা দিয়েছেন, তেমনই ব্যাটসম্যান হিসেবেও হয়ে উঠলেন সেরা। বিশ্বকাপে দুই সেঞ্চুরি বা দলকে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে তোলাটা এর বিজ্ঞাপন বলা যেতে পারে।

তবে এই রিয়াদের ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার ভেতর দিয়ে জাতীয় দলে বোলার রিয়াদ যেনো হারিয়েই গেলেন। রিয়াদ ওয়ানডেতে সর্বশেষ পুরো ১০ ওভার বল করেছেন ২১ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে; আজ থেকে দুই বছর আগে!

এখন সরল চোখে মনে হতে পারে, ব্যাটিংয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বলেই রিয়াদ বোলিং থেকে নজরটা ঘুরিয়ে নিয়েছেন। সেটাই সত্যি হলে আমরা তো সাকিব আল হাসানকে পেতামই না। সাকিব তো বছরের পর বছর ব্যাটিংয়ে দলের প্রধাণ ভরসাদের একজন এবং দলের সেরা বোলার।

আসলে ওই সময়ে সমস্যাটা হয়েছিলো রিয়াদ নিজেই বোলিংয়ে খুব স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। এটা হয়। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে এসে মনে হয়, ঠিক আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। অনেকের জন্য এটাই ব্যাডপ্যাচ হয়ে আসে। এই ক্ষেত্রে অলরাউন্ডারদের সুবিধা হলো, একটা না হোক, অন্যটায় পুষিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পেরেছেন।

রিয়াদের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে, বোলিংটা হচ্ছিলো না; তখনই ব্যাটিংটা আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন।

আবার সমস্যাটা হলো, বোলিংয়ে ছন্দ ফিরে পাওয়ার পরও ঠিক আগের রোলটা আর পাচ্ছিলেন না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই বোলার রিয়াদ নিজেকে মোটামুটি খুজে পেয়েছেন।  কিছুদিন আগে এক সাক্ষাতে সে কথা বলছিলেনও রিয়াদ। কিন্তু এখনও আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বল হাতে নিয়মিত হতে পারেনি।

গত দুই বছরে ২৫টা ম্যাচ খেলেছেন। একটা ম্যাচেও ১০ ওভার বল করার সুয্গে পাননি, ৫টা ম্যাচে বলই পাননি এবং ৫টি মাত্র ম্যাচে ৫ বা ততোধিক ওভার বল করেছেন। এখন ম্যানেজমেন্টকে, অধিনায়ককে আমাদের বুঝিয়ে বলার কিছু নেই।

রিয়াদের মতো একজন অফস্পিনারকে পেলে যে কারোরই বর্তে যাওয়ার কথা। বিশেষত দল যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড সফরে। সেখানে কন্ডিশন পারমিট করবে না দলে এক ঝাক স্পিনার রাখতে। এমন একটা অবস্থায় সাকিব ও রিয়াদ, দলের দুই অভিজ্ঞতম খেলোয়াড়ই যদি স্পিন অপশন হয়ে ওঠেন, তাহলে বাংলাদেশ অনায়াসে তিন-চার পেসার নিয়েও খেলতে পারে।

রিয়াদ নিজেই দলের এখন নীতিনির্ধারকদের একজন। এই ম্যানেজমেন্টে তার ব্যাপারে অন্তত ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খোজা বাতুলতা মাত্র। ফলে আশা করা যায়, দ্রুতই রিয়াদকে আমরা সেই পুরোনো বোলার ভূমিকাতেও দেখতে পাবো। কিন্তু শর্ত একটাই, সে জন্য ব্যাটসম্যান রিয়াদকে এক ইঞ্চিও হারাতে চাই না
১৩ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে