আরিফুর রাজু: পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্মটাই শুধু অন্যের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্যে। যারা নিজের চাইতে অপরের কল্যাণটাই বেশি কামনা করেন। তাদের খুশি কেবল অপরের উন্নতিতে। দেশের প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিতেও কিঞ্চিত দ্বিধাভোধ নেই এই দেশপ্রিমীদের। ৫২’র সেই ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছে কেবল তাদেরই আত্মত্যাগের কারণে। তারা যুগ যুগ ধরে নিজের দেশটাকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন অবিরত।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কিছু দেশপ্রেমী তাদের জান-মাল থেকে শুরু করে নানা উপায়ে বিশ্ব দরবারে এদেশের ভাবমূর্তিকে ফুটিয়ে তুলছেন।তাদেরেই একজন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। শত সমস্যা মোকাবেলা করেও যিনি র্দীঘ দিন ধরে খেলা যাচ্ছেন জাতীয় দলের হয়ে। ধরা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বর্তমানে যে প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রয়েছে তা সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী দল। ঘুণে ধরা অতীতের ভাঙা-চোরা দলটাকে আজকের এই পর্যায়ে নিতে আসতে যার অবদান সব চেয়ে বেশি নিঃসন্দেহে তিনি সবার প্রিয় মাশরাফি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইলে মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্ম। ছোট বেলাটা কেটেছে দস্যিপনা মধ্যদিয়ে। পড়াশুনার বাঁধাধারা নিয়ম তাকে কখনই আকৃষ্ট করতে পারেনি। পড়াশুনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাটমিন্টন খেলাকেই বেশি পছন্দ করতেন। সুযোগ পেলেই চৈতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো ছিল তার অন্যতম কাজ। এই তারুণ্যের শুরুটা ছিল ব্যাট হাতে। ছোটবেলায় বোলিংয়ের প্রতি তার খুব একটা টান ছিল বলে আজও জানা যায়নি। তবে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সফলতম বোলারদের মধ্যে তিনি একজন।
অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা অবস্থায় তিনি নজর কাড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কোচ অ্যান্ডি রবার্টেস । পরবর্তীতে তার অনুরোধে মাশরাফিকে জাতীয় ‘এ’ দলে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার পরই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়ে যান মাশরাফি। ৮ নভেম্বর ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মধ্যদিয়ে অভিষেক ঘটে তার। জিম্বাবুয়ের সাথে বৃষ্টিভেজা ওই ম্যাচে নিজেকে প্রমান দিতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি । ১০৬ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। একই সাথে তার আগমনে বাংলাদেশ দলে থাকা র্দীঘদিনের পেসার ঘাটতিটি পূরণ হয়েছিল। এর পর যা হয়েছে সবই ইতিহাস।
মাশরাফির জীবনে কালো অধ্যায় শুরু হয় তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে খেলা অবস্থায়।ও ম্যাচে নেমেই ইনজুরির মুখে পড়েন তিনি। পায়ে চোট পেয়ে প্রায় দুই বছরের জন্য মাঠের বাহিরে চলে যেতে হয় তাকে। এর পর সুস্থ হযে ফিরে এলেন মাঠে। কিন্তু না এবারও পারলেন না তিনি। আবারও ইংল্যান্ডের সাথে খেলা একটি ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে ১ বছরের জন্য মাঠের বাহিরে চলে যান তিনি। নানান সময় নানাভাবে ইনজুরির কবলে পড়েছেন দেশের এই পেসার।তার পরও দেশের কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কখনওবা পায়ে ইনজেকশন দিয়ে দেশের জন্য খেলে গেছেন এবং খেলে যাচ্ছেনা।
যদি প্রশ্ন করা হয় অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি কেমন? জানি না কোন সংজ্ঞাটা তার জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে সৌম্য সরকার এবং নাসির হোসেনদের ভাষায় মাশরাফি ভাই অসধারণ। দলের প্রয়োজনে শান্তু মাশরাফি মাঝে মাঝে হয়ে উঠেন অশান্ত। আবার কখনওবা কপালে চুমু খান কিছুক্ষন আগে বকা দেয়া নাসির বা তাসকিনের কপালে।খেলার মাঠে যেমন সবাইকে বুকে টেনে নেন ঠিক তেমনটা মাঠের বাহিরেও। মাশরাফি এমন একজন গর্বিত অধিনায়ক যিনি দলের প্রয়োজনে ম্যানেজম্যান্টের বিপক্ষেও কথা বলতে দ্বিধাভোধ করেন না। অর্থাৎ তিনি ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলার সৎ সাহস রাখেন।
বাংলাদেশ দলের মাশরাফিকে নিয়ে ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী একবার গর্ব করে বলেছিলেন, ‘ইস আমাদের যদি এমন একটা মাশরাফি থাকতো।’ সত্যিই এমন একজন নেতা, এমন একজন অকুতোভয় বীরকে নিযে ‘ইস’ কথাটা বলতে পারেন যে কেউ। আমরা চাই এ দেশের মাটিতে মাশরাফির মত হাজারো বীর সেনানী জন্ম নিয়ে দেশটাকে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে রাখতে সাহায্য করুক।
লেখক : সাংবাদিক
১০ অক্টোবর ২০১৫,এমটি নিউজ২৪/আরিফুর/রাজু