স্পোর্টস ডেস্ক: ইউরোপে ক্রিকেট খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ নাকি ক্রিকেটে অসংখ্য আইনের বেড়াজাল। তবে এশীয়বাসীর আপত্তি নেই এতসব আইন কানুন মেনে খেলতে। কিন্তু ক্রিকেটের সব আইন যে মুখস্থ করে রাখা সম্ভব নয়—এটা সবাই জানে। এমন অনেক আইন আছে, যার ব্যবহৃত হয় কালে-ভাদ্রেই। প্রিয় পাঠক, আসুন আজ জেনে নেওয়া যাক ক্রিকেটের এমন ছয়টি আইন যেগুলো সম্বন্ধে হয়তো ধারণা নেই অনেকেরই...
১. বল হারালেই, ‘ডেড বল’
প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে এই নিয়মের কথা প্রায় ভুলতেই বসেছে সবাই। অথচ একসময় এই নিয়ম নিয়ে মাঠে লেগে যেত রীতিমতো বচসা। আগে ক্রিকেট মাঠে প্রায়শই নানা খানা-খন্দে, ঝোপের ভেতর, গাছের ডালে বল হারিয়ে যেতো। হারানো বলের নিয়ম অনুযায়ী মাঠে বল খুঁজে পাওয়া না গেলে, বলটি ‘ডেড বল’ হিসেবে ঘোষিত হবে এবং সম পরিমাণ ওভার বল করা হয়েছে—এমন কোনো বল দিয়ে খেলা শুরু করতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো, ‘ডেড বল’ ঘোষিত হলেও বল হারানোর আগে ব্যাটসম্যান কোনো রান নিতে পারলে সেই রানের বৈধতা দেওয়া হয়েছে এই আইনে।
২. আপিল নয় তো আউটও নয়
চোখের সামনে দেখছেন নিশ্চিত এলবি অথবা নিজের কানে শুনলেন বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট-রক্ষকের হাতে গেছে। তবুও আম্পায়ার আউট দিলেন না! ক্রিকেটের একটি বিশেষ আইন যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে এটা আপনি স্বাভাবিকভাবেই নেবেন। আরে, ফিল্ডিং দল আপিল না করলে আবার আউট দেবে কেন! কিন্তু আইনটি বিশ্লেষণ করলেই এর গুরুত্ব বোঝা যাবে। ব্যাটসম্যান পরিষ্কার আউট, কিন্তু আম্পায়ার যদি আপিল না শোনেন, তাহলে তিনি আউট দেবেন না। এই আইনে আরেকটি মজার ব্যাপারও রয়েছে। কোনো ব্যাটসম্যান যদি নিজেকে আউট ধরে নেওয়ার পর সাজঘরের দিকে হাঁটাও দেন (২০০৩ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে গিলক্রিস্টের উদাহরণ) কিন্তু আম্পায়ার তা আউট মনে না করলে তাঁকে ফিরিয়ে আনতেই পারেন।
৩. মাঠ ছাড়ার শাস্তি
ক্রিকেট মাঠে চোট পেয়ে কিংবা ক্লান্ত হয়ে প্রায়ই মাঠ ছাড়তে দেখা যায় ফিল্ডিং দলের খেলোয়াড়দের। এ রকম পরিস্থিতিতে কোনো খেলোয়াড় যদি আম্পায়ারকে না জানিয়ে মাঠ ছাড়েন তবে ব্যাটিং দলকে বাড়তি পাঁচ রান উপহার দেওয়া হবে।
আর খেলোয়াড় যদি মাঠের বাইরে ১৫ মিনিটের বেশি সময় পাড় করেন তাহলে মাঠে ফিরে ওই পরিমাণ সময় বোলিং থেকে বিরত থাকতে হবে তাঁকে।
এ সময়ের মধ্যে যদি প্রতিপক্ষ অলআউট হয়ে যায় তবে ওই সময়টুকু সময়ে ব্যাটিংয়েও নামতে পাড়বেন না ওই খেলোয়াড়!
৪. হ্যান্ডেলিং দ্য বল
‘হ্যান্ডেলিং দ্য বল’ আউট ক্রিকেটের বিরলতম কিছু ঘটনার একটি। এই আইনে বলা আছে, ‘হ্যান্ডেলিং দ্য বল’ আউট তখনই দেওয়া হবে, যখন খেলার সময়ে শট খেলার সময় কিংবা খেলে ফেলার পর কোনো ব্যাটসম্যান খালি হাতে বল ধরেন। তবে দুটি কারণে হাত দিয়ে বল ধরা যাবে, (১) নিজেকে চোটের হাত থেকে বাঁচানোর সময় কিংবা (২) ফিল্ডারের অনুমতি নিয়ে তাঁকে বল কুড়িয়ে দিলে।
৫. মানকাদিং কিংবা চুপিচুপি আউট
ক্রিকেটে এই আউটের প্রথম দেখিয়েছিলেন ভারতীয় বোলার ভিনু মানকড়। ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে প্রথম খেলছিলেন মানকড়। বোলারের প্রান্তে ছিলেন বিল ব্রাউন। মানকড় বোলিং করতে গিয়ে দেখেন, ব্রাউন উইকেট থেকে বের হয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে উইকেট ভেঙে ব্রাউনকে আউট করে দেন মানকড়। তখন থেকেই এই ধরনের আউটকে মানকাদিং বলা হয়।
মানকাদিং সঠিকভাবে করতে পারলে সেটিকে রানআউট হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু আউট করতে ব্যর্থ হলে সেটি ‘ডেড বল’ হিসেবে ঘোষিত হয়।
৬. ইনিংস ছেড়ে দেওয়া
এটি কেবল বড় দৈর্ঘ্যের খেলাতেই সম্ভব। খেলায় উত্তেজনা কিংবা ফলাফল আনার জন্য চাইলে যেকোনো দলের অধিনায়ক নিজেদের একটি ইনিংস ছেড়ে দিতে পারে।
টেস্ট ক্রিকেট কেবল একবারই এমন ঘটনা দেখেছিল। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যানসি ক্রোনিয়ে প্রথমবারের প্রতিপক্ষের নাসের হোসেইনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন একটি করে ইনিংস ছেড়ে দেওয়ার। সেবার দুই দলই তাদের একটি করে ইনিংস ছেড়ে দিয়েছিলেন ফলাফল পাওয়ার আশায়। সেবার টেস্টটি জিতেছিল ইংল্যান্ড।-সূত্র প্রথম আলো
১০ অক্টোবর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস