শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৩:৩৬:২১

ক্রিকেটার হিসেবে যেভাবে উঠে এলেন মেহেদী মারুফ

ক্রিকেটার হিসেবে যেভাবে উঠে এলেন মেহেদী মারুফ

স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিকেটের জন্য প্রিয় খেলা ফুটবল, শৈশবের আনন্দ, বন্ধু এমনকি তারুণ্যের প্রেম- সব কিছুই ত্যাগ করেছেন মেহেদী হাসান সিদ্দিকী। তাকে এখন সবাই চেনেন মেহেদী মারুফ নামে। জীবনের ২৮টি বছর কেটে গেছে। ১২ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলছেন। তার সঙ্গেকার ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম ও তামিম ইকবাল এখন জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। কিন্তু তিনি এখনও জাতীয় দলে সুযোগই পাননি।

হয়তো এবার সুযোগ আসবে, বিপিএলে তার আলোকিত পারফরমেন্স স্বপ্ন দেখাচ্ছে। না এলেও ভাবনা নেই মারুফের। তবে বয়স! চিন্তা নেই ৩০ এরপর উপরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হওয়া এমন ভূরিভূরি ক্রিকেটার তার অনুপ্রেরণা। ক্রিকেট ঘুম, ক্রিকেট খাওয়া, ক্রিকেট আনন্দ, ক্রিকেট বেদনা, ক্রিকেট স্বপ্ন নিয়ে জীবন চলা মেহেদী মারুফ তার ক্রিকেটময় জীবন নিয়ে কথা বলেছেন। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: ক্রিকেটে এলেন কিভাবে?
মারুফ: সত্যি কথা বলতে ক্রিকেট আমার প্রিয় খেলা ছিল না। আমি ফুটবল খেলতেই পছন্দ করতাম। বাবা খুব ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন। টাঙ্গাইলে আমাদের বাড়ির কাছের মাঠে বাবার সঙ্গেই ফুটবল খেলতে যেতাম। আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তখন আমার বয়স ১২। এলাকার তিন বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম। তারা হলেন- সুমন ভাই, আরাফাত ও আরেক জন ছিলেন যার নাম লারা। আসলে তার নাম সুজন। কিন্তু তিনি লারার মতো কালো ও খেলার ধরনও ছিল বলে তাকে লারা বলে ডাকতো সবাই। এরপর আজমদার ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ৬ মাস কাটিয়ে চলে যাই বিকেএসপিতে। সেখান থেকে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলের তামিম, মুশফিকদের সঙ্গে ভারতে খেলতে যাই। এভাবেই ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গী তামিম, মুশফিকরা জাতীয় দলের সেরা ক্রিকেটার। কিন্তু আপনি এখনও সুযোগই পাননি!
মারুফ: প্রথম সত্যি হলো আমার চেষ্টাটা মনে হয় জোরালো ছিল না। যে কারণে সবার নজরে আসতে সময় লাগে। বাংলাদেশে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ না খেললে নজরে আসা যায় না। কিন্তু আমি শুনেছিলাম প্রিমিয়ারে খেলতে গেলে বসে থাকতে হবে, সুযোগ না দিলে ব্যাট করা যাবে না। কিন্তু আমার দলে ঢুকে বসে থাকা একেবারেই পছন্দ ছিল না। তাই আমি প্রথম বিভাগ খেলতে শুরু করি। টানা পাঁচ বছর প্রথম বিভাগে খেলি প্রতি বছরই আমি সর্বোচ্চ রান করতাম। অবশেষে প্রিমিয়ারের দল প্রাইম দোলেশ্বর আমাকে দলে সুযোগ করে দেয়। তখন বুঝলাম এইবার হয়তো নজরে এসেছি। ২০০৬ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু করি। ১৮ ম্যাচ খেলে ২টি সেঞ্চুরি ও ১টি ফিফটি করি। এছাড়াও লিস্ট ‘এ’ এর ১৫টি ম্যাচ খেলেছি। সেখানে ২টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ১০টি ফিফটিও আছে। মাঝে ইনজুরিতে বেশ কিছুদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিলাম।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়াতে কি মনে হয় আর হবে না?
মারুফ: কখনও মনে হয়নি জাতীয় দলে সুযোগ পাবো না, এখনও ভাবি না সুযোগ পাবো না। বয়স নিয়ে ভাবছেন? দেখেন পৃথিবীতে অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা ৩০ বছর বয়সের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে। আমি তাদের আমার অনুপ্রেরণা মনে করি। যদি সুযোগ না পাই এমনভাবে খেলবো যেন সুযোগ দিতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন: ক্রিকেট খেলে প্রথম উপার্জন শুরু করেন কবে?
মারুফ: আমি যেবার কাঁঠাল বাগান ক্রিকেট একাডেমির হয়ে খেলেছিলাম সেবার ওরা আমাকে প্রথম ১৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেটাই আমার ক্রিকেট থেকে প্রথম উপার্জন। সেই টাকাটা আমি আমার বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কারণ নিজের জন্য কিছু প্রয়োজন ছিল না।

প্রশ্ন: ক্রিকেট খেলায় কোন কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল?
মারুফ: না, আমার পরিবার বিশেষ করে আমার বাবা আমি ক্রিকেট খেলি সেটাই চান। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনদিন ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিতে চাপ আসেনি। আর আর্থিকভাবে কোনোদিন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি যে, ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার মতো কিছু হয়।

প্রশ্ন: বিপিএল-এ সুযোগ ও এত ভাল খেলা প্রত্যাশিত ছিল?
মারুফ: বিপিএল-এ সুযোগ পাবো এবং তাও ঢাকাতে, ভাবতেও পারিনি। আর মাঠে এত ভালো খেলবো তাও না। আমাকে যখন কোচ সুজন ভাই বললেন যে, তুই কাল মাঠে নামবি, ০ রানে আউট হলেও কোনো সমস্যা নেই। মাঠে নামার আগেও বললেন এক বল খেলেও যদি আউট হস তাও সমস্যা নেই নিজের মতো খেল। আগের দিন একটু চাপ ছিল, সাঙ্গাকারার সঙ্গে ওপেন করতে নামা। কিন্তু কোচ আমাকে এমনভাবে উৎসাহ দিলেন মাঠে নামার পর কোনো চাপই অনুভব করিনি। আর আল্লাহ্‌ও সহায় ছিলেন, সব বলেই আমার শট ঠিকঠাক মতো হচ্ছিল। তখন আমার ভীষণ ভালো লেগেছে যে, আমি ব্যাট করে দল জিতিয়েছি। বিপিএল’র শুরুটা ছিল আমার কাছে একেবারে স্বপ্নের মতো। দু’দিন আগেও কোচ আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছেন যে, আমি যেন বিপিএল-এর এই আসরে সবচেয়ে বেশি রান করি। তিনি বলেছেন মুশফিককে দেখ, ও জাতীয় দলের পারমানেন্ট ক্রিকেটার তারপরও কত রানের ক্ষুধা। তোর তো ওর চেয়ে আরও বেশি ক্ষুধা থাকা উচিত। বিদেশিদের দেখ। ওরা সেঞ্চুরি করে ফেলে তুইতো সেঞ্চুরি করলি না। এই সব আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আমি চেষ্টা করি আরো ভালো খেলার।

প্রশ্ন: অনুশীলনের ফাঁকে ফাঁকে আপনাকে দেখা যায় সাঙ্গাকারা, মাহেলার সঙ্গে কথা বলতে?
মারুফ: আমি মনে করি এটাই আমার সুযোগ সাঙ্গাকারা ও মাহেলার মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখে নেয়া। তাই আমি সুযোগ পেলেই তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা আমাকে মানসিকভাবে শক্ত হতে শিখিয়েছেন। কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে কেমন ব্যাট করতে হবে এই সব টিপ্‌স দেন।

প্রশ্ন: আপনি ছয় মারতে ভালোবাসেন। কিন্তু সব বলেই কি সেই চেষ্টা করেন?
মারুফ: না, আমার খুব ভালো লাগে কাভার ও মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় মারতে। যখনই সুযোগ আসে তখনই আমি চেষ্টা করি সেই ভাবে মারতে। এমনিতে আমি কাভার ও পয়েন্ট খুব বেশি খেলি।

প্রশ্ন: ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনো শখ?
মারুফ: না, আমি ক্রিকেটের জন্য আমার প্রিয় খেলা ফুটবল ছেড়েছি। এমনকি এই ক্রিকেটের জন্য আমার  শৈশবে কোনো বন্ধু হয়নি কারণ আমি বিকেএসপিতে হোস্টেলে চলে গিয়েছিলাম। আমার কোনো বন্ধুবান্ধব নাই। এমনকি প্রেমও করিনি। ক্রিকেটের জন্য অনেক জীবনের অনেক আনন্দই ছেড়েছি।

প্রশ্ন: কেমন ক্রিকেটার হতে চান?
মারুফ: মাঠে ব্যাট হাতে এগ্রেসিভ ও বাইরে বিনয়ী। কারণ আমার আইডল শচীন টেন্ডুলকার। তার সব কিছু ভালো লাগে। আর মাঠের খেলায় ম্যাথু হেইডেন ভালো লাগে কারণ ও বেশ শট খেলতে পছন্দ করে। আর দেশে আমার প্রিয় ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই সবার কাছ থেকে আমি বিনয়ী হতে শিখেছি।

প্রশ্ন: আপনার পারফরমেন্সে সবচেয়ে বেশি খুশি কে?
মারুফ: খুশি হয়েছে আমার টাঙ্গাইলবাসী, আমার বাবা মোহাম্মদ আলী ও আমার মা। অবশ্য আমার পরিবারের আমি, বাবা-মা ছাড়া আর কোনো ভাই- বোন নেই।-এমন জমিন
২ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে