স্পোর্টস ডেস্ক: কথাছিল ৯ অক্টোবর থেকে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের মধ্যেকার টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়াবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের কথিত নিরাপত্তহীনতার অযুহাতে সিরিজটি না হলেও প্রিয় খেলোয়াড় তামিম ইকবালের খেলা দেখতে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঠিকই ছুটে এসেছেন জ্যাক আন্দ্রেজ্যাক নামের এক অস্ট্রেলিয়ান। তবে যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার-বাংলাদেশের মধ্যেকার সিরিজটি বাতিল হয়েছে, জ্যাক সেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেটেই তামিমের ব্যাটের ঝলক দেখছেন।
এবারের জাতীয় লিগে তামিম ইকবালের এটি তৃতীয় ম্যাচ আর সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই সেঞ্চুরির হাসি হাসল তাঁর ব্যাট। বরিশালের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তামিমের ১৩৭ রানের ইনিংসটি মন ভরিয়েছে স্থানীয় ২০-৩০ জন দর্শক ও কর্মকর্তার। শুধু কি তাই, তামিমের ব্যাটের হাসি ছড়িয়ে পড়েছে এক অস্ট্রেলিয়ান দর্শকের চোখেমুখেও। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচ দেখার স্বাদ পূরণ না হলেও মাঠে বসে প্রিয় ক্রিকেটারের সেঞ্চুরি দেখে উৎফুল্ল তাসমানিয়ার অধিবাসী জ্যাক আন্দ্রেজ্যাক।
বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে আসছে অস্ট্রেলিয়া, এটি জেনেই ক্রিকেটপাগল জ্যাকও ঠিক করে ফেলেন বাংলাদেশে এসে খেলা দেখবেন। তাতে ‘রথ দেখা’র পাশে ‘কলা বেচা’র মতো দেশটিও একটু ঘুরে দেখা হবে! বিশেষ করে দর্শন হবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া শেষ মুহূর্তে যখন সফর স্থগিত করার চূড়ান্ত ঘোষণা দিল, ততক্ষণে ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে জ্যাক ঢাকার মাটি ছুঁয়েছেন।
কোটি বাঙালির মতো তাঁকেও ছুঁয়ে গেল হতাশা। ‘টেস্ট দেখার আশা নিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করেছিলাম। দেশটাও দেখব। শেষ মুহূর্তে সিরিজ বাতিল হওয়ায় হতাশ হয়েছি। বাংলাদেশ অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে এখন। এখানকার অনেক দর্শকও এতে হতাশ হয়েছে বুঝতে পারছি’—কাল দুপুরে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বললেন জ্যাক।
নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া দল সফরে না এলেও জ্যাক নিজেকে এ দেশে অনিরাপদ মনে করছেন না। বাংলাদেশে পা রেখেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দেখার জন্য কক্সবাজার ছুটে যান তিনি। সেখানে ছয় দিন কাটিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামে। ক্রিকেটের ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর মাধ্যমে জানতে পারেন চট্টগ্রামে জাতীয় লিগের খেলা চলছে। আর সেখানে খেলছেন তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। ব্যস, শনিবারই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ছুটে আসেন। এখন প্রাপ্তির আনন্দই তাঁকে ঘিরে ধরেছে, ‘তামিম একজন মারমুখী ক্রিকেটার। আমার তার খেলা ভালো লাগে। তাই মাঠে এসেছি। কাল দুর্দান্ত খেলেছে। আজ শতক পূর্ণ করেছে। অসাধারণ!’ তামিমের পর সাকিব আল হাসানও রয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ানের প্রিয় ক্রিকেটারের তালিকায়।
গায়ে অস্ট্রেলিয়ান দলের হলুদ টি-শার্ট। মাথায় গোল টুপি। তামিমের চার-ছক্কার সঙ্গে হাততালি দিলেন। অস্ফুটে বললেন, ‘হোয়াট আ শট!’ কাল মাঝখানে বৃষ্টির কারণে খেলা সাময়িক বন্ধ থাকলে ভেন্যু ব্যবস্থাপকের কক্ষের টেলিভিশনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দিকেও চোখ রাখলেন এই ক্রিকেটপ্রেমী।
এখন সরকারি চাকরিজীবী ৪৩ বছর বয়সী জ্যাক ক্রিকেট খেলতেন স্কুল ও কলেজজীবনে। অস্ট্রেলিয়ার ছোটখাটো ক্লাবেও খেলেছেন। ক্রিকেট দেখার পাশাপাশি জ্যাকের আরেকটি প্রিয় শখ দেশভ্রমণ। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশভ্রমণ করেছেন। এসব দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার খেলাও দেখেছেন। বাংলাদেশে এটি তাঁর প্রথম সফর। জ্যাকের কথা, ‘আমি ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। সেই সঙ্গে ক্রিকেটও খুব টানে। তাই সাধারণত মিস করি না। তাই বাংলাদেশে আসা।’
অস্ট্রেলিয়ার তরুণ দলটি বাংলাদেশে এসে কেমন করত, সেটি বলত মাঠের খেলাই। তবে জ্যাক মনে করেন স্মিথের নেতৃত্বে দলটি সামনে ভালোই করবে, ‘তরুণ এই দলটিতে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে। বোলিং খুব ভালো। আশা করি তারা ভবিষ্যতে ভালো করবে।’
দেশের প্রিয় খেলোয়াড়ের তালিকায় বর্তমান দলের কেউ নেই, জ্যাকের হৃদয়জুড়ে আছেন লেগ স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ব্যাটসম্যান ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। প্রথম আলো
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ