আরিফুর রাজু: ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার হয়ে লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচে পায়ে চোট পেয়ে মারাত্মক আহত হয়ে প্রায় দু’মাসের জন্য মাঠের বাহিরে বিরক্তিকর সময় কাটাতে হবে আর্জেন্টাইন গ্রেট তারকা লিওনেল মেসিকে। অন্যদিকে ম্যাচে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সঙ্গে বাজে আচরণের দায়ে লাল কার্ড পেয়ে জাতীয় দলের হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাঁছাই পর্বে অংশ গ্রহন করতে পারছেন না ব্রাজিলের উদীয়মান তারকা নেইমার।
মেসি বিহীন আর্জেন্টিনা, আর নেইমার বিহীন ব্রাজিল কেমন আছে বা খেলছেটাইবা কেমন? তা বিচার করতে আমাদের অতীত না গেটে একটু পিছনে গেলেই তার সঠিক সমাধান মেলবে। যদি আমরা সম্প্রতি ব্রাজিল আর্জেন্টিনার গত দুই/তিন ম্যাচের খেলার পারফরম্যান্স এবং ফলাফল লক্ষ্য করি তাহলে হয়তোবা বিষয়টা পুরোপুরি স্পষ্ট হবে।
নেইমার খেলতে পারছেন না জাতীয় দলের হয়ে। আর তাতে একটুও বিচলিত নন বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন ব্রাজিলের তারকা খেলোয়াড় মার্সেলো। অন্যদিকে মার্সেলোর মত ঠিক তেমনটাই ঘোষনা দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রাও। কিন্তু দেখা গেল, নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিল প্রথম ম্যাচেই অপেক্ষাকৃত দুর্বল চিলির বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে দিশেহারা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনাও এ্যাকুয়েডরের কাছে ২-০ গোলে পরাস্ত। আসলে দুই তারকাকে ছাড়া জাতীয় দল যে প্রচন্ড জ্বরের কাঁপুনিতে আছে তা প্রমান মেলল বিশ্বকাপ বাঁচাই পর্বের দ্বিতীয় খেলায়ও এসে। একটি দল মরি মরি করেও না মরে ড্র করল। অপর একটি দল কোন রকম জয়ের দেখা পেল।
জাতীয় দলের মত মেসির অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ক্লাব বার্সাও। পালমাসের বিপক্ষে ইনজুরির দিনে অনেকটা হেরেও সুয়ারেজের গোলে সম্মান বাঁচালো বার্সা।পরের ম্যাচেই মেসির পথে ইনেয়েস্তার হাঁটার ফলে বাড়তি চাপ সামাল দিতে হচ্ছে নেইমার-সুয়ারেজকে। মেসির জায়গাটুকু পূরণ আদৌ সম্ভব কিনা তা দেখছে ফুটবল বিশ্ব। বার্সা থেকে চাপ আসছে নেইমারের ওপর সে যেন মেসির ঘাটতিটা পূরণ করে। আর তাই নেইমারও প্রাণ পনে লড়ে যাচ্ছেন। বিশেষ খাবার তৈরীর জন্য রাঁধুনীকে পরামর্শ দিচ্ছেন। আরও কত কি!
আর্জেন্টিনার ভক্তদের অনেককে অভিযোগ তুলতে দেখা যায় মেসি আসলে কার, বার্সার না আর্জেন্টিনার? অভিযোগ উঠাটাই স্বাভাবিক। কারণ মেসি তার নিজ দেশের চেয়ে ন্যূ ক্যাম্পে সাফল্য বেশি দেখিয়েছেন। তার পরও গেল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পতাকা হাতে দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের দ্বারপ্রান্থে। কিন্তু ফাইনালে হিগুয়েনের ভুলের খেসারতে স্বপ্নের বিশ্বকাপ হাত ছাড়া হয়ে যায় মেসি-তেভেজদের। কিন্তু সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা তার হাতেই আসে। এই পর্যন্ত দেশের হয়ে ১০৩ ম্যাচ খেলে ৪৬ গোল করেছেন মেসি (৪ জুলাই ২০১৫ সালের গণনা অনুযায়ী)। জাতীয় দলের হয়ে ১০ নাম্বার জার্সি পরিহিত এই খেলোয়াড়ের অধিনায়কের দায়িত্বটাও তার হাতে।
অপরদিকে ব্রাজিল দলের তারকা নেইমারের ক্লাবের ন্যায় জাতীয় দলেও সমান তালে চলছে তার পা। একের পর এক রেকর্ড গড়ছেন তিনি। ভাঙছেন বড় বড় তারকাদের রেকর্ড। যেন দূর থেকে দূরন্তে তার ছুটে চলা। জাতীয় দলের হয়ে ৬৭ ম্যাচ অংশ নিয়ে করেছেন ৪২ গোল (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালের গণনা অনুযায়ী)। দেশের হয়ে ১১ নাম্বার জার্সিধারী এই তারকা খেলোয়াড়ের হাতেও ব্রাজিল দলের ঝান্ডা।
যুগে যুগে আমরা যদি বড় তারকাদের দিকে খেয়াল করি তাহলে সুস্পষ্ট লক্ষ্যনীয় যে তারা সর্বদা দেশের জন্য নিজেদের অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাদের কাছে সর্বদা দেশটাই আগে। ঠিক চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠবে ফ্রান্সের হয়ে থিউরি অঁরির ফাইনালে জিদানের অনুপস্থিতিতে মারাত্মক ইনজুরিতে পড়েও পেইন কিলার নিয়ে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত দেশের জন্য লড়াই করে যাওয়ার দৃশ্য।
লেখক : সাংবাদিক
১৪ অক্টোবর ২০১৫,এমটিনিউজ২৪/আরিফুর/রাজু