হার্দিকের হুমকি ও রানআউটের চিন্তায় ভারত
স্পোর্টস ডেস্ক : সমস্যা এখানে দুটো বিষয় নিয়ে। একটা গুজরাটের সমস্যা। যা রাজকোটেরও বটে। আরেকটা ভারতীয় দলের নিজস্ব। প্রথম সমস্যা যদি, গুজরাটে তৈরি হওয়া পতিদার আনামত আন্দোলন সমিতির নেতা হার্দিক প্যাটেল হয়ে থাকেন তা হলে দ্বিতীয় সমস্যা হল, অবশ্যই ভারতীয় শিবিরে রানআউটের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকা। ধরমশালা থেকে ইন্দোর পর্যন্ত চলতি সিরিজে ধোিনবাহিনীর পাঁচ–পাঁচ জন ব্যাটসম্যান রান আউটের শিকার। ভাবা যায়! চিন্তার বিষয় তো বটেই।
আসা যাক প্রথম সমস্যায়। যেটা বেশ গুরুতর। কিছুদিন আগেই পতিদার আন্দোলন সমিতির নেতা আরও ভাল করে বললে গুজরাটের প্যাটেল সম্প্রদায়ের নেতা হার্দিক খোলাখুলি ঘোষণা করেছেন সামনের রবিবার রাজকোটে ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক হবার সময়ে তাঁদের সংরক্ষণের দাবি মাঠে উপস্থিত থেকে জানাবেন। দলবল নিয়ে। খেলা চলাকালীন। ব্যস, মাথাখারাপ হবার জোগাড় গুজরাট প্রশাসনের। কীভাবে হার্দিকবাহিনীকে আটকানো যায় তা নিয়ে পাগল হয়ে রয়েছে আমেদাবাদ–রাজকোট প্রশাসন।
ভাবা যায়, হার্দিকদের স্লোগান বন্ধ করার জন্য সরাসরি ফৌজদারি ধারা আরোপ করা হবে। করা হবে গ্রেপ্তারও। কোনও ছাড় নেই। মাঠে ঢুকে হার্দিকবাহিনী তাদের জনপ্রিয় স্লোগান, ‘জয় সর্দার’ নাড়া না দিতে পারে তার জন্য যা করছে গুজরাট প্রশাসন তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। শুধু হার্দিক প্যাটেলের দলবলের জন্যই যা আগে রাজকোট কোনওদিন দেখেনি সেই ড্রোন ক্যামেরার পর্যন্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছে। জানা গেল, ম্যাচের দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দুই অফিসার সরাসরি যোগাযোগে থাকবেন রাজকোটের খান্ডেলিতে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের সঙ্গে! হার্দিকের গতিবিধি জানার জন্য!
এই প্রতিবেদন লেখার সময় জানতে পারলাম শুক্র–সন্ধেয় ২২ বছরের হার্দিক হুমকি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রবিবার ম্যাচের দিন খান্ডেরি স্টেডিয়ামে ভারতীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল যাবার সময়েই রাস্তা আটকাবেন। দলবল নিয়ে। কোনওভাবেই মাঠে যেতে দেবেন না দুটো দলকে। খান্ডেরি স্টেডিয়ামকে তাঁর সংগঠন পতিদার আনামত আন্দোলন সমিতি বাইরে থেকে ঘিরে রেখে দেবে। তাদের প্যাটেল সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের দাবি যতক্ষণ না মেনে নেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ তাদের আন্দোলন চলবে। হার্দিক জানিয়েছেন, ‘সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট আ্যাসোসিয়েশনকে জানাতে হবে কেন তারা টিকিট থাকা সত্ত্বেও টিকিট শেষ ঘোষণা করেছে? আসলে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট আ্যাসোসিয়েশন বি জে পি নেতাদের হাতেই সব টিকিট দিয়ে দিয়েছে। সেজন্য আ্যাসোসিয়েশনকে টিকিট বিক্রির সবটা জানাতে হবে।’
বুঝুন অবস্থা। আর অন্য দিকে এ বি ডিভিলিয়ার্সের দল পাগল করে দিয়েছে ভারতীয় শিবিরকে। যে পরিমাণে হোমওয়ার্ক করে রান আউট করে চলেছেন তারা প্রতিটি ম্যাচে, তা না দেখলে বোঝা যায় না। ইন্দোরে বিরাট কোহলি যেভাবে রানআউট হয়েছেন যা চোখে দেখা যায় না। মাঠের যেখান সেখান থেকে নিশানায় বল ছুঁড়ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। বোলারদের সাহায্যে উইকেট তো পড়ছেই পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররাও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উইকেট তুলে নিচ্ছেন প্রবল ক্ষিপ্রতায়!
ভারতীয় শিবিরে যা বেশ দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। আসলে অনুশীলনের সময় দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররা গোটা মাঠের বাউন্স কেমন তা বল ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেখছেন। কোথা থেকে কীভাবে বল এক বাউন্সে না সরাসরি উইকেটকিপার কুইন্টন ডি’কককে ছুঁড়লে সুবিধে হবে তা নিয়ে ব্যাপক হোমওয়ার্ক করছে ডিভিলিয়ার্স বাহিনী। ভারতীয়দের রান নেবার ব্যাপারে সতি্য এবার আরও মনোযোগী হতে হবে। একদিনের জন্য মুম্বইয়ে বিশেষ কাজে যাওয়া ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী দলকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবতে।
এ তো গেল সমস্যার কথা। এবার আসা যাক অন্য বিষয়ে। রাজকোটে পা দিয়েই আমন্ত্রিত ধোনিবাহিনী টেস্ট সতীর্থ চেতেশ্বর পুজারার বাড়িতে। নৈশভোজে। পুজারা যত্ন নিয়ে গোটা ভারতীয় দলকে খাইয়েছেন তাঁর বাড়িতে। পুজারার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয় নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি। শুক্রবার ভারতীয় শিবিেরর পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরও বিশ্রাম নিয়েছে। তবে কোহলি, রোহিত, রায়না, ভুবনেশ্বর কুমাররা গিয়েছিলেন স্টেডিয়ামে জিম করতে। একটানা ম্যাচ আর এ শহর থেকে অন্য শহর দৌড়নো। সেজন্য বেশিরভাগ ক্রিকেটার বিশ্রামেই ছিলেন। রবিবার ম্যাচের আগে শনিবার দুটো দলই অনুশীলনে নামবে।
রাজকোট শহর থেকে বেশ দূরে জামনগর হাইওয়ের ওপর খান্ডেলিতেই ম্যাচ। বাইশ গজ রান উজাড় করে দেবে বলেই জানিয়েছেন কিউরেটর ধীরজ পারসানা। শিশির ফ্যাক্টর খুব একটা নেই বললেই চলে। তবে দিনের বেলায় তাপমাত্রা কিন্তু চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। হঁ্যা, অক্টোবর মাসেও কেমন যেন লু বইছে! সব কিছু মিলিয়েই বোর্ড কর্তা নিরঞ্জন শাহের শহর তৈরি তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য। কিন্তু কোথায় যেন একটা গান্ধী–ম্যান্ডেলা অহিংস সিরিজে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেল।
১৭ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি