স্পোর্টস ডেস্ক: কলম্বো টেস্টের চতুর্থ দিন বাংলাদেশের অধিনায়ক কজন ছিলেন? ইতিহাসের দরজায় দাঁড়িয়ে সব ঘটনাকে ফাঁকি দিয়ে কলম্বো টেস্টে টাইগার দলে দেখা গেছে ‘তিন অধিনায়ক’কে। মুশফিক-তামিম ও সাকিবের কাছে শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানের লিড হওয়ার দিনে ওই একটি ঘটনা বিশেষ কিছু হয়ে থাকলো।
এদিন মুশফিকই কাগজে-কলমে অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ যখন পাঁচটা উইকেট তুলে নিল ওই সময় থেকেই তামিম বারবার বোলারের কাছে আসতে থাকেন। সাকিবের সঙ্গে পরামর্শ করে বোলারদের ব্যবহার করতে থাকেন। পরিস্থিতি বলছিল বাংলাদেশ তিন অধিনায়ক নিয়ে খেলছে!
তিনজনে মিলে ফিল্ডিং পরিবর্তন এবং বোলারদের ব্যবহারে দেখিয়েছেন চমক। শেষ বিকেলে মোসাদ্দেককেও বলে আনা হয়।
মুশফিককে প্রায়ই রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্ব করতে দেখা যায়। পেসারদের যখন ব্যবহার করেন একটানা করে যান। স্পিনারদের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু কলম্বো টেস্টের চতুর্থদিন সবাইকে মেপে মেপে প্রান্ত বদল করালেন। তাতে রানের চাকা ঘুরেছে ধীরে। বিভ্রান্ত হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
স্বস্তির শুরু হয়েছিল মিরাজকে দিয়ে। দিনের প্রথম বলে থারাঙ্গাকে বোল্ড করেন তরুণ স্পিনার। এই উইকেটের সঙ্গে তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটের অনেক মিল আছে। চট্টগ্রাম টেস্টে বেন ডাকেটকে যেভাবে বোল্ড করেছিলেন ঠিক সেভাবে এদিন থারাঙ্গাকে ভড়কে দেন। বল মিডল লেগে পিচ করে সামনে যায়। ব্যাটসম্যান অ্যাঙ্গেল মেপে খেলতে যেয়ে বিপাকে। চোখের পলকে নেই অফস্টাম্প!
দ্বিতীয় উইকেট জুটি বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। কুশল মেন্ডিস আর দিমুথ করুনারত্নের ৮৫ রানের সেই জুটি ভাঙেন ‘বিস্ময় বালক’ মোস্তাফিজ। রিভিউতে মেন্ডিসকে ফিরতে হয় ৩৬ রানে। বল হালকা ব্যাটে লেগেছিল। শুরুতে আবেদন করেননি মুশফিকুর রহিম। আবেদন করলেন বোলার মোস্তাফিজকে দেখে। পরে রিভিউ নিয়ে উতরেও যান! এরপর মোস্তাফিজ দিনেশ চান্দিমালকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা চান্দিমাল এবার করতে পারেন ৫ রান। 'ফিজ' পরে আরো দুটি উইকেট নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা যদি নির্দিষ্ট কোনো সময়কে দোষ দিতে চায়, তবে দ্বিতীয় সেশনকেই দিবে।
দ্বিতীয় উইকেট জুটির পর সেভাবে আর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি লঙ্কানদের কোন জুটি। অথচ দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ম্যাচের গল্পটা ছিল স্বাগতিকদের আধিপত্যে ভরা।
হেরাথরা ৩৩৮ করার পর দ্বিতীয়দিনের শেষ বিকেলে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয়দিন আবার গল্পে পরিবর্তন আসে। সাকিবের ‘মহাকাব্যিক’ শতক আর অভিষিক্ত ‘বালক-বীর’ মোসাদ্দেকের ৭৫ রানে ভর করে ১২৯ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ।
চতুর্থদিন বল হাতেও সাকিবীয় দাপটের দেখা মিলেছে। অন্য স্পিনারদের থেকে তার শরীরী ভাষা আর বোলিংয়ে দাপট ছিল বেশি। তাইজুল-মিরাজরা যখন টার্নের জন্য জায়গা খুঁজে হয়রান, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তখন ‘ক্লোজে’ ফিল্ডার রেখে বিপদজ্জনক। নতুন বল নেয়ার ঠিক আগে পেরেরাকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে আলীম দারের অবাক সিদ্ধান্তের শিকার হন। পেরেরা সেবার বেঁচে গেলেও নতুন বলে ঠিকই সেঞ্চুরিয়ান করুনারত্নের (১২৬) ব্যাটের কানা নিয়ে নেন। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের নির্ভুল হাত তাকে তৃতীয় শিকারের দেখা পাইয়ে দেয়। দূর হয় পথের কাঁটা। দশ ওভার বাদে তাইজুল ইসলাম হেরাথকে ফেরান। এরপর দিনের আলো শেষ হয়ে যাওয়ায় রক্ষা পায় শ্রীলঙ্কা। ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা বাড়ে বাংলাদেশের।
১৮ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ডটকম/আ শি