স্পোর্টস ডেস্ক: শততম টেস্টে এসে আরও একটি পরিবর্তনে চোখ কপালে উঠে সবার। সিনিয়র মাহমুদউল্লাহকে স্কোয়াড থেকে বাদ দিযে তরুণ মোসাদ্দেককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সিদ্ধান্তটি যে যুগোপযোগী ছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শততম টেস্টে অভিষেক ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম ইনিংসে মোসাদ্দেক খেলেছেন ৭৫ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসেও তার ব্যাট হেসেছে। এমন দলীয় নৈপুণ্যেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে মুশফিক বাহিনী।
জন্মদিনের আগে সতীর্থদের কাছ থেকে অমূল্য এক উপহার পেলেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ২০ মার্চ তামিমের জন্মদিন। তার আগের দিনে শততম ম্যাচটি নিজেই বের করে নিয়েছেন লঙ্কানদের কাছ থেকে। ৮২ রানের ভয়ঙ্কর এক ইনিংস খেলে তামিম বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে আক্ষেপে পুড়তে পারেন লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ। জন্মদিনে সতীর্থরা তাকে সিরিজ জয়ের উপহারটা দিতে পারলেন না। বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো স্বাগতিকদের।
২০০৭ সালের আগে ২০০৫ কিংবা ২০০২ সালে পি সারা ওভালে খেলে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাফল্য বলতে কিছুই ছিল না। তিন ম্যাচের সবকটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে এই মাঠকে ‘অপয়া’ হিসেবে নোট করে রেখেছিল ক্রিকেট ভক্তরা।
অবশেষে সেই ‘অপয়া’ মাঠেই জয় ধরা দিল বাংলাদেশের। দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের পর তৃতীয় দল হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে হারালো বাংলাদেশ। তাও আবার শততম ম্যাচে এসে। মাইলফলকের এই ম্যাচে বাংলাদেশ বেশিরভাগ সেশনই আধিপত্য বিস্তার করে ম্যাচ জিতেছে।
ম্যাচ শুরুর আগের দিন অধিনায়ক মুশফিক স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘পরিসংখ্যান সবকিছুর নির্ধারক নয়। গলে সুখস্মৃতি আমরা কাজে লাগাতে পারেনি তাই বড় ব্যবধানে হেরেছি। কলম্বোতে পরিকল্পনাগুলো ঠিকঠাক মতো কাজে লাগাতে পারলে শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখা সম্ভব হবে।’
মুশফিকের যেই কথা সেই কাজ। গল টেস্টে বাজে পারফরম্যান্সের পর দলের চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা লক্ষ্য করা গেছে পুরো পাঁচদিনেই। শরীরি ভাষাতে এসেছে অনেক বড় পরিবর্তন। এসব ইতিবাচক বিষয়গুলোই ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছে।
রবিবার ইনিংসের শুরুতেই সৌম্য-ইমরুলের দ্রুত ফিরে যাওয়া দলের জন্য বিপদ ডেকে আনে। সেখান থেকে তামিম ও সাব্বির জুটি ম্যাচে ফেরায় বাংলাদেশকে। বিস্ফোরক ব্যাটিং করতে থাকা তামিম ৮২ রানে বাজে শট খেলে আউট না হলে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান আরও একটু বড়ই হতো।
কিন্তু ভালো খেলতে থাকা তামিমের আউটটা সব সময়ের মতো বাজে শটেই হয়! এই ধারাটা অব্যাহত ছিল কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও। তামিমের এমন আউটে রেগে গিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। বিরক্ত হয়ে মাথার ক্যাপটা ছুড়ে মেরেছিলেন নিচে! তামিমের আউটের পর সেই একই ভুল করলেন সাব্বির। সুইপ করতে গিয়ে বিসর্জন দেন ৪১ রানের মূল্যবান ইনিংসটি!
এরপর আরও কিছু উইকেটের পতন হলেও জয় পেতে কষ্ট হয়নি মুশফিকদের। উইকেটে থেকে তরুণ মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে জয়ের কাছাকাছি গিয়ে শেষ পর্যন্ত মেহেদির সঙ্গে শততম জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক।
এই জয়ে বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলল অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানকে। তারাও তাদের শততম ম্যাচ জিতেছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ৩৮ বছর বিরতির পর কোনও টেস্ট খেলুড়ে দেশ শততম টেস্টে গিয়ে জয়ের দেখা পেল। যদিও এই সময়ে মাত্র দুটি দেশ (জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কা) শততম টেস্ট খেলেছে। তাদের কেউই শততম টেস্টে এসে জয় পায়নি।
শততম টেস্টে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে একাদশে বড় দুটি পরিবর্তন আনা হয়। সেই পরিবর্তনটা রেজাল্ট বিবেচনায় ইতিবাচকই হয়েছে! টেস্ট স্কোয়াডের নিয়মিত সদস্য মুমিনুলকে বসিয়ে খেলানো হয় ইমরুলকে। যদিও দুই ইনিংস মিলে ইমরুল ছিলেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতা দলে খুব বেশি প্রভাব পড়তে দেয়নি দলের মিডল অর্ডারে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম,জে