বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:৩৪:৫৭

নায়ক নন, তিনি মহানায়ক

নায়ক নন, তিনি মহানায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক : সাংবাদিকদের সাথে এক আড্ডায় বলছিলেন, ‘রাতে মাঝে মাঝে আমার অবস্থা দেখে সুমি (মাশরাফির স্ত্রী) ভয় পেয়ে যায়। ব্যথায় পা’টা হাঁটু থেকে যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে…আমি অদ্ভুত শব্দ করে উঠি!’ মাশরাফি এভাবে বেঁচে আছেন। এভাবে বল করে যাচ্ছেন। এমন একটা মানুষকে নায়ক বলা তো ‘অপরাধে’! তিনি যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মহানায়ক!

টি-২০ ক্রিকেটে আজ এই মহানায়কের বিদায়। বৃহস্পতিবার রাতে প্রেমাদাসায় লাল-সবুজ রঙের ২ নম্বর জার্সি পরে যে লোকটা মাঠ ছাড়বেন, তার জন্য লঙ্কা থেকে বাংলা! ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর একটা হাহাকার পড়ে যাবে। সুযোগের অভাবে কেউ হয়ত উপর থেকে ফুল ছুঁড়বেন না। কিন্তু দূর থেকে নায়ক বলে সম্বোধন করবেন। যদি তাই হয়, তবে ওই লোকটা ভীষণ আপত্তি করবেন। এর আগে বহুবার বলেছেন, নায়ক শব্দে তার ঘোর আপত্তি। তাহলে তার পরিচয় কী?

মাশরাফি চোখে আসল নায়ক সেই মুক্তিযোদ্ধারাই। এমনকি নায়ক কৃষকরাও। যারা কাঠফাঁটা রোদে ফসল ফলিয়ে চলেন। এই কথা বলেছিলেন চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করে ফেরার পথে। মাশরাফি সেদিন সগর্বে বলেন, ‘আমি নায়ক নই। নায়ক তো তারাই, যারা জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে গেছেন। আমরা জাতির জন্য এমন কিছু ত্যাগ করিনি, যা তারা করেছেন। আমাকে ভুল বুঝবেন না, ক্রিকেটই সব নয়। আমরা শুধু জাতিকে আনন্দ দিতে পারি।’

বৃহত্তর যশোহরের নড়াইলের ছেলে মাশরাফি।  নড়াইলের কৌশিক কবে কখন কিভাবে বাংলার আপামর জনতার কাছে লিডার হয়ে গেছে সেটা হয়ত তিনি নিজেও জানেন না। টাইগারদের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের চোখে তিনি একজন ‘সত্যিকারের যোদ্ধা’। তামিমে চোখে ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’। মুশফিকে কাছে ‘সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন’।

ক্রিকেটার মাশরাফির যে উপস্থিতিটা সবাই মাঠে দেখে, তা আসলে রুপালি পর্দার সেসব চরিত্রের মতই, পর্দার বিনোদনদায়ী চেহারায় যারা ঢেকে রাখেন বাস্তব জীবনের কষ্টের ছবি। মাঠে উইকেট পেয়ে মাশরাফি উদ্বাহু হন, ফেটে পড়েন জয়োল্লাসে, দর্শক শুধু এটুকুই দেখে। এই খেলার জন্য তাকে কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে খবর কজন রাখেন?

১৬ বছরের ক্যারিয়ারে দুই হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখনোও বেশি পরিশ্রমে হাঁটু ফুলে যায়, ব্যথা হয়। খেলা শেষে সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে বের করে নিতে হয় হাঁটুতে জমা বিষাক্ত রস। ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নামতে পারেন না। হাঁটু দুটো কয়েকবার ভাঁজ করতে হয়, সোজা করতে হয়—তারপর শুরু হয় দিন। মাঝেমধ্যে রাতগুলোও হয়ে ওঠে আতঙ্কের। ঘুমের মধ্যেই অনুভব করেন, কোন একটা পা বাঁকানো যাচ্ছে না।

এভাবে বল করে যাচ্ছেন। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। নিজের কষ্ট, ব্যথা নিজের মধ্য রেখেই দেশের জন্য লড়ে চলেছেন তিনি। এমন একটা মানুষকে নায়ক বলা তো ‘অপরাধ’! তার পাশে ‘মহানায়ক’ শব্দটাই বসানো যায়!
০৬ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে