স্পোর্টস ডেস্ক: আজ বিকেলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ তো আসলে দুই বাংলাদেশি তারকার ব্যক্তিগত লড়াইও। অন্তত এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে তো বটেই। কিন্তু সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের আকর্ষণীয়, রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের সম্ভাবনা টসের সঙ্গে-সঙ্গেই শেষ। কলকাতা আর হায়দরাবাদের একাদশে বাংলাদেশের দুই তারকার কেউ নেই!
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ায় আইপিএলের শুরু থেকে কলকাতা সঙ্গে ছিলেন না সাকিব। ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ছিল শ্রীলঙ্কায়। সফর শেষে সাকিব আর দেশে ফেরেননি, পরদিনই তড়িঘড়ি যোগ দেন দলের সঙ্গে। তবে সেদিন, অর্থাৎ ৭ এপ্রিল কলকাতার ম্যাচ থাকলেও তার মাঠে নামার সম্ভাবনা তেমন ছিল না। হয়েছেও তা-ও, সাকিবকে ছাড়াই রাজকোটে গুজরাট লায়ন্সের মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা। কিন্তু এরপরের তিন ম্যাচেও বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার কেন উপেক্ষিত, তা সত্যিই রহস্যময়।
মুস্তাফিজ অবশ্য সাকিবের মতো দুর্ভাগা নন। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দেশে ফিরে এনওসি সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে তিনি ভারতের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন ১১ এপ্রিল। সেদিনই দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরদিন নেমেও পড়েন মাঠে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। `কাটার-মাস্টার-এর কাটার কিংবা অন্য অস্ত্র বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ওপর। ২ ওভার ৪ বল করার সুযোগ পাওয়া মুস্তাফিজ দিয়েছেন ৩৪ রান, যার পরিণতি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৪ উইকেটের হার।
সেদিনের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সই হয়তো আজ (শনিবার) একাদশের বাইরে ছিটকে দিয়েছে মুস্তাফিজকে। তবে একটা ম্যাচের ব্যর্থতার কারণে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও বিস্ময়কর। গতবারের কথা তো হায়দরাবাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০১৬ সালের আইপিএলে সানরাইজার্সের অবিশ্বাস্য সাফল্যের অন্যতম রূপকার ‘দ্য ফিজ’। ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬.৯০-এক কথায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। হায়দরাবাদের প্রথম শিরোপা জয়ে বিশাল ভূমিকা রেখে আইপিএলের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নিয়েছিলেন তিনি।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাফল্যেও সাকিবের অবদান অনস্বীকার্য। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো আইপিএল জিতেছিল কলকাতা। সেবার আট ম্যাচে মাত্র ৬.৫০ ইকোনমি রেটে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে অবশ্য জ্বলে উঠতে পারেননি, সব মিলিয়ে ৯১ রান করেছিলেন। তবে দুই বছর পর কলকাতার শিরোপা জয়ে ব্যাটসম্যান-বোলার দুই ভূমিকাতেই ঔজ্জ্বল্য ছড়ান বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। পরিসংখ্যানেই তা পরিষ্কার। ১৩ ম্যাচে প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেট ও ৩২.৪২ গড়ে ২২৭ রান করার পাশাপাশি ৬.৬৮ ইকোনমি রেটে তুলে নেন ১১ উইকেট।
২০১৫ সালে জাতীয় দলে ব্যস্ততার কারণে আইপিএলে ৪টির বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সাকিব। গতবার অবশ্য ১০টি ম্যাচ খেলেছিলেন। কিন্তু এবার কলকাতা ৪ ম্যাচ খেলে ফেললেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট-তারকার মাঠে নামার সুযোগ হয়নি এখনও। অন্যদিকে মুস্তাফিজ এক ম্যাচের ব্যর্থতার মাশুল দিয়ে আজকের ম্যাচে মাঠের বাইরে।
বহু ইতিহাসের সাক্ষী ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা-হায়দরাবাদের লড়াইয়ে দুই দলের সাফল্যের নায়ক সাকিব-মুস্তাফিজ উপেক্ষিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!
১৫ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি