শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:৪২:৪০

পাড়ার ক্রিকেটে আমি ওপেনিংয়ে ব্যাট করতাম: রুবেল হোসেন

পাড়ার ক্রিকেটে আমি ওপেনিংয়ে ব্যাট করতাম: রুবেল হোসেন

আল-মামুন: পরিবারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লুকিয়ে লুকিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ওপেনিং ব্যাটিং করার পাশাপাশি পেস বোলিংয় চালিয়ে যাওয়া রুবেল হোসেনের তারকা হয়ে ওঠার নেপথ্যে গ্রামীণফোনের পেস বোলিং হান্ট প্রোগ্রাম। পেসার হান্টের গতিময় বোলার হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করে যুব দল হয়ে জাতীয় দলে সুযোগ করে নেন ডান হাতি এই পেসার। লম্বা একটা সময় ছিলেন জাতীয় দলের অপরিহার্য অংশ।

সর্বশেষ বিশ্বকাপে রুবেল হোসেনের অসাধারণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ দল। এরপর ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়া রুবেল এখন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দলে ফেরার জন্য।  শনিবারের বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেশের গতিময় এই পেস বোলার কথা বলেন, নিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে।

আপনার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনের গল্প যদি বলেন?

আসলে পরিবার থেকে খেলাধুলার জন্য সাপোর্ট পাইনি। অনেক কষ্ট করে, আমাকে ক্রিকেটার হতে হয়েছে। দিনমজুর পরিবারে আমার জন্ম। বাবা-মা চাননি আমি পড়াশুনা রেখে খেলায় মন দেই। লুকিয়ে লুকিয়ে খেলা করতাম। এজন্য অনেক মারও খেয়েছি। বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতে গেছি। জোরে বল করা এবং বড় বড় ছক্কা মারতে পারায় এলাকায় আমার অনেক নাম ছিলো। আমাকে ছাড়া কোনো ম্যাচ হতো না। অনেক ম্যাচে হায়ারে খেলতে গেছি। এমনকি ঢাকায় তৃতীয় বিভাগেও খেলেছি। কিন্তু এভাবে খেলে কোনো দিন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব না। গ্রামীণফোনের পেসার হান্ট প্রোগ্রামটা আমার জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিয়েছে। পেসার হান্টের দেশের সেরা পেসার হয়ে সাতক্ষীরা থেকে হওয়া সারোয়ার ইমরান স্যারের নজরে পড়ে যাই। তখন থেকে উনি আমার খোঁজ খবর রাখতেন। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার আগে ইমরান স্যার আমাকে নেটেও বোলিং করার জন্য বাগেরহাট থেকে ডেকে নিয়ে আসতেন। নেটে ভালো করার পর প্রথমে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পাই। এরপর জাতীয় দলে।

ক্যারিয়ার শুরুর আগে আপনি ব্যাটিংয়েও পারদর্শী ছিলেন, ওপেনিংয়ে ব্যাট করতেন?

হ্যা, গ্রামে থাকা অবস্থায় পাড়ার ক্রিকেটে আমি ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতাম। খুব বেশি মারতাম আর কী। তামিমের মতো আক্রমনাত্নক ব্যাটিং করতাম। পাশাপাশি বোলিংও করতাম। তখন মেনলি বোলারই ছিলাম। তবে ব্যাটিংয়ে ওপেন করতাম। আর খুব বেশি মারতাম। অনেক বড় বড় ছক্কা মারতাম। তবে মেইনলি বোলার হওয়ায় ব্যাটিংটাকে বেশি গুরুত্ব দেইনি, বোলিংটা খারাপ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। তখন বোলিংয়েই বেশি মনোযোগ দিতাম। বোলিংকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ব্যাটিংটা আস্তে আস্তে পিছিয়ে গেলো।

জাতীয় দলের কোচ হাতুরুসিংহে চান লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যান যেন টুকটাক ব্যাটিং করতে পারেন। সেটা নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?

না ব্যাটিং নিয়ে আমার তেমন চিন্তা নেই। আমি যদি বোলার হিসেবে ভালো করতে না পারি তাহলে দলে আমার জয়গা হবে না। তখন যতোই ভালোই ব্যাটিং করিনা কেনো, কাজে আসবে না। প্রথমত আমার বোলিংটাই মেইন। এখানে যতোটা ভালো করা যায় সেই চিন্তাই আমার মধ্যে আছে। তারপর যদি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাই চেষ্টা করবো ভালো করার। তবে সবার আগে আমার বোলিং। যেটা আমার মেইন। আমার মেইনলি বোলিংটা আমার ঠিকঠাক রাখতে হবে। ব্যাটিং ভালো হওয়াটা আমার জন্য একটু বোনাস পয়েন্ট আরকি। এটার জন্য আমাকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

মাশরাফি বলেছেন, তরুণদের সুযোগ করে দিতেই তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন?

আসলে মাশরাফি ভাইতো সবকিছু জেনেশুনে চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সে নিজেও বলেছে, টি-টোয়েন্টি খেলাটা সে ইনজয় করে না। এটা তিনি বার বার বলেছেন। টি-টোয়েন্টিটা উনি যেহেতু এনজয় করেনা, সে জন্য অবসর নিয়ে জুনিয়রদের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি যে চিন্তা ভাবনা করেছে, সেটা তার পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে জেনেশুনেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেজন্য আমার মনে হয়না এই ব্যাপারে আমাদের বাইরে থেকে কিছু বলার আছে। তবে একটা জিনিস হলো মাশরাফি ভাই আমার খুব পছন্দের ক্রিকেটার। ছোট বেলা থেকেই আমি তাকে আইডল মেনে আসছি। তো একটু খারাপ লাগতেছে যে তার সাথে আমার টি-টোয়েন্টি খেলাটা আর কখনো হবে না। এটাই আর কি, এটার জন্য খুব খারাপ লাগছে। সে তরুণদের সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাশরাফি ভাইয়ের অবসরটা আপনারা কতোটা মিস করেন?

অবশ্যই তাকে অনেক মিস করি। দল তাকে অনেক মিস করবেও। কারণ সে দলের সাথে যেভাবে থাকে। যেভাবে প্লেয়ারদের সাথে কথা বলে, ডেসিংরুমে যেভাবে খেলোয়াড়দের সাথে মজা করে। মাঠে নামার আগে খেলোয়াড়দের সাথে যেভাবে কথা বলে, তিনি আমার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি কথা বলেন। একমদ বন্ধুর মতো আমার সাথে আলাপ করে। এসব জিনিস আমার মনে হয় তার না থাকায় দল অনেক মিস করবে।

মাশরাফির অবসরে পেস বোলিং ডিপার্টমান্টে আপনিই সবচেয়ে সিনিয়র। সেটা কি বাড়তি দায়িত্ব এনে দেবে?

হ্যা ঠিকই। তবে এটা তেমন কোনো চাপ না। আসলে আমি নিজেইতো এখন জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছি না, বুঝছেন না। এটা তেমন কোনো বাড়তি চাপও না। আমি যদি জাতীয় দলে নিয়মিত হতাম তখন হয়ত অন্যরকম হতো। তবে এখন না। এখন আমি নিজেই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। যখন মাঠে থাকবো, তখন মাশরাফির ভাইয়ের মতো আমাকে ভালো করতে হবে। তার জায়গাটা আমাকে পূরণ করতে হবে। এটাই আরকি, এই ধরনের চিন্তাভাবনা নিয়েই মাঠে নামব।

বিশ্বকাপে ভালো খেলার পরও ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের সাথে খেলতে পারলেন না, সেটা কতোটা হতাশার?

আসলে এটা বলে বুঝাতে পারব না। ইনজুরি আমাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের আগে আমি কিন্তু ফিট ছিলাম। কিন্তু আমাকে দলে নেয়া হয়নি। এটা সত্যিই হতাশার। দলে না থাকতে পেরে খুব খারাপ লেগেছে। ইনজুরিতে থেকে ফিরে এখন ভালো করছি। নিয়মিত পারফরম করছি তারপরও যদি সুযোগ না পাই তাহলে হতাশাতো কাজ করবেই। এটা আসলে দুঃখজনক। এটা নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। তারপরও আমি সুযোগের অপেক্ষায় আছি। সুযোগ আসবেই, সেটা কাজে লাগাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

টেস্টে পরিসংখ্যান আপনার পক্ষে না। সেটাকে আরো ভালো করার জন্য কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?

হ্যা, এটাই আমি তেমন সাফল্যই না। এটা নিয়ে আরো অনেক বেশি কাজ করতে হবে আমাকে। সত্যিই আমি এখানে অনেক পিছিয়ে আছি। যখন সুযোগ আসবে তখন আমি এটায় বেশি জোর দিবো। এখানে ব্যাটে বলে অনেক উন্নতি করতে হবে আমার। চেষ্টা করবো ইকোনোমি আরো ভালো করতে। উইকেট বাড়াতে।

এবার প্রিমিয়ারে খেলতে নেমেই ছয় উইকেট নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন?

আসলে ম্যাচটা খুব ভালো হয়েছে। শুরুটা ভালো হলে, আত্নবিশ্বাস বেড়ে যায়। কালাবাগানের বিপক্ষে ভালো বোলিং করেছি, আশা করি এভাবে বাকি ম্যাচগুলোতেই করতে পারবো এবং সফল হবো। এখানে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে। পরিকল্পনাতো আছে ভালো করার। সেই চিন্তা থেকেই সেরাটা দিয়ে যাচ্ছি। এখন নির্বাচকরা আছেন, তারা দেখবেন। ওনারা যদি মনে করেন আমি জাতীয় দলের জন্য উপযুক্ত তাহলে কল করবেন।

আগের দিনে ভালো একটা ম্যাচ খেলার পর বাংলা নববর্ষটা কেমন কাটলো?

হা হা, এটা আসলে মজার একটা দিন। বছরে একবারইতো আসে, ভালোই কাটছে। বিশেষ করে আগে দিনে ভালো একটা ম্যাচ খেলতে পারায় মানসিকভাবেই চাঙ্গা ছিলাম। ভালোই কেটেছে। খুব মজা করেছি।

প্রিমিয়ারে আপনার লক্ষ্য?

আমার লক্ষ্য প্রিমিয়ার লিগের প্রত্যেকটা ম্যাচ ভালো খেলা। দলের জয়ের পেছনে অবদান রাখা। এখানে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। নির্বাচকরা আছেন, ওনারা দেখবেন। ওনারা যদি মনে করেন তাহলে সুযোগ পাবো। এটা নিয়ে আমার তেমন ই নাই। আমার লক্ষ্য ভালো খেলা। বাকিটা ওনারা দেখবেন।

এখন জাতীয়ে দলে সুযোগ পাওয়া কি আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং?

আমার কথা হলো যেই পারফরম করবে সেই দলে থাকবে। যে পারফরম করতে পারবে না সে টিমে থাকবে না। এখন অনেক কমপিটিশন, এভাবে কমপিটিশন থাকাটাও কিন্তু ভালো। বিশেষ করে দলের জন্য। সেই দিক থেকে এখন সুযোগ পাওয়া সত্যিই অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমার এখন লক্ষ্য আরো অনেকদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলে যাওয়া। যতো বেশি পারা যায়। জাতীয় দলে সুযোগ পেলে চেষ্টা করবো নিজের সেরাটা দিয়ে স্থায়ী হওয়ার জন্য।

বাগেরহাটে আপনার একটা কিপনিক স্পট আছে। সেটাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

পার্ক আর কী। ঐটা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য গড়া। যাতে করে তারা এখানে এসে মজা করতে পারে। এটাকে আরো সুন্দর করবো, এটাই আরকি। হ্যা এটা নিয়ে আমার পরিকল্পনা আছে, বাগেরহাটের মানুষের বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা, বিনোদনের পাশাপাশি যদি আর্থিক উন্নতি করা যায় তাহলে দেখব। তবে বিনোদনটাই মেন ব্যাপার। এটা নিয়ে সুন্দর একটা পরিকল্পনা আছে আমার, আরো কিভাবে সুন্দর মনোরম করা যায় সেই চিন্তা আছে।-খেলাধুলা
১৫ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে