স্পোর্টস ডেস্ক: ইউসুফ-মানিকই পেশাদার ফুটবল কোচের ‘বাতিঘর’। নব্বইয়ের দশকে দুই দেশি কোচ শুরু করেছিলেন ‘সম্মান ও সম্মানীর’ লড়াই। দেশে কোনো মেসি বা নেইমার তৈরি হচ্ছে না। তবে কোচদের সন্মানী বড় অঙ্কেরই।
‘আমার জন্য ব্যাপারটা কঠিন ছিল। আর কিছুই করব না, ফুটবল কোচ হব—মারাত্মক ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। অনেকে নিষেধ করলেও শুনিনি। এখন মনে হচ্ছে, ফুটবল কোচিং পেশাটা আস্তে আস্তে একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে’—বেশ স্বস্তি নিয়েই বলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ সাইফুল বারী টিটু। গত কয়েক বছর আগেও এটাকে পেশা হিসেবে দেখার সুযোগ ছিল না। কারণ ক্লাব ম্যানেজমেন্টের কাছে ফুটবল কোচিং ব্যাপারটাই ছিল ডালভাতের মতো সহজ। সকাল-বিকাল ফুটবলারদের মাঠে নিয়ে চক্কর দেওয়ানো আর কি! এই কাজটা ক্লাবের যেকোনো সাবেক ফুটবলার করে দিলেই হয়ে যায়। একাদশ বাছাই, বদলি নামানো—এসব তো কর্মকর্তারাই করতেন। সুতরাং সেখানে আবার আলাদা কোচ কিসের! এই কর্মকর্তারা এমনকি জাতীয় দলের বিদেশি কোচের সঙ্গেও তর্ক জুড়ে দিতেন। তাঁদের ফুটবল জ্ঞানের বহর দেখে বিস্মিত হয়ে নামি-দামি বিদেশি কোচও মানে মানে কেটে পড়েছিলেন! এসব খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, আশি-নব্বইয়ের দশকেও ঘটেছে। সেই ফুটবলাঙ্গনে আজ দেশি কোচরাই করে খাচ্ছেন, ফুটবল কোচিংকে পেশা হিসেবে ভাবতে পারছেন—এটা কম বড় কথা নয়। সেই পেটেভাতে কোচিং পেশায় এখন সম্মান ও সম্মানী দুটির দুর্দান্ত সংযোজন হয়েছে।
সাইফুল বারী এই সংগ্রাম শুরুর কৃতিত্বটা দিতে চান তাঁর দুই অগ্রজ ফুটবলার আবু ইউসুফ ও শফিকুল ইসলাম মানিককে, ‘চুক্তি করে কোচিং করানো, অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে ফুটবল কোচিং শুরু করেন ইউসুফ ভাই আর মানিক ভাই। সেই সময়ে তাঁরা কোচ হিসেবে সম্মান রক্ষার লড়াই শুরু করেছিলেন, সেই ধারায় আজ দেশি কোচরা পারিশ্রমিকের দিক থেকে অবশ্যই একটা অবস্থানে পৌঁছেছে। ক্লাব ম্যানেজমেন্ট এখন বোঝে, কোচকে অবশ্যই সম্মানজনক একটা পারিশ্রমিক দিতে হবে। ’ মানিকের মতোই টিটু ফুটবল কোচিং ছাড়া অন্য কিছুই করেন না। গত মৌসুম থেকে বাফুফের চাকরি বাদ দিয়ে ক্লাব কোচিংয়ে মনোযোগী হয়ে তিনি পেয়েছেন আর্থিক নিরাপত্তা। আরামবাগ ক্লাব ছেড়ে এবার চট্টগ্রাম আবাহনীতে গেছেন ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে। উত্তরসূরিদের অবস্থার পরিবর্তন দেখে শফিকুল ইসলাম মানিকেরও ভীষণ ভালো লাগছে, ‘কোচিং পেশাটা আস্তে আস্তে ভালো জায়গায় চলে যাচ্ছে। তিন-চার বছরে কোচদের পারিশ্রমিক দেখলে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথম মারুফের পারিশ্রমিক বেড়েছে, গত বছর থেকে টিটুও ভালো করছে। পারিশ্রমিকের দিক থেকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আগে দেশি কোচদের যে পার্থক্য থাকত, সেটা এখন আর নেই। ক্লাবগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। ’
সেই খেলা ছাড়ার পরও ফুটবলের সঙ্গ ছাড়েননি শফিকুল ইসলাম মানিক। ব্রাজিল থেকে ফুটবল কোচিংয়ের ওপর পড়াশোনা করে এসে তিনি কোচিং করানো শুরু করেন। এরপর এএফসির মানদণ্ডে লাইসেন্স কোর্সও করেছেন। এখনো দারুণ সক্রিয় এই কোচ স্মৃতি রোমন্থন করছেন এভাবে, ‘এক টাকা পাই আর দুই টাকা পাই, সব সময় আমি চুক্তি করে কোনো ক্লাব কিংবা জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছি। ৯৬/৯৭ সালে বোধ হয় দুই লাখ টাকার চুক্তি করেছিলাম প্রথম মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। আজ সেই জায়গাটা কত উন্নত হয়েছে, বেড়েছে কোচের স্বাধীনতাও। ’ গত মৌসুমের মাঝপথে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের দায়িত্ব নেওয়া মানিক দলবদল করেননি এবার, নতুন মৌসুমে পাচ্ছেন ৩১ লাখ টাকা।
২০০৮ সালে মোহামেডানের কাছ থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা পাওয়া মারুফুল হক এবার গেছেন আরামবাগ ক্লাবে। পুরো মৌসুমের চুক্তি ৩৫ লাখ টাকায়। তিনি মনে করেন, ‘দেশি কোচের অর্থ প্রাপ্তির জায়গাটায় আসলে শতভাগ পরিবর্তন এসেছে। পারিশ্রমিকের দিক থেকে দেশি কোচদের অবস্থান এখন ভালো। সবার হয়তো বেশি নয়, তবে সম্মানজনক পারিশ্রমিক পায় সবাই। আগের মতো পেটেভাতে অবস্থা নেই, কোচের সম্মানী দেওয়ার ইস্যুটা এখন সর্বসম্মত ব্যাপার হয়ে গেছে। ’ আসলেও তা-ই। গতবার মুক্তিযোদ্ধায় দারুণ করেছেন আবদুল কাইয়ুম সেন্টু। সেই সুবাদে এবার ‘ভালো অফারে’ মোহামেডানে গেলেও শেষ পর্যন্ত বিপাকে পড়েছেন সৈয়দ নঈমুদ্দিনের আগমনে। তরুণ কোচ কায়সার মুক্তিযোদ্ধার দায়িত্ব নিয়েছেন ভালো পারিশ্রমিকে। বারবার দলের পারফরম্যান্স দিয়ে চমকে দেওয়া কামাল বাবু বেতন বরাবরই রহস্যময়, ‘রহমতগঞ্জেই আছি। পারিশ্রমিকও ভালো। ’পারিশ্রমিক নিয়ে দেশি কোচরা সন্তুষ্ট, এটাই-বা কম কিসে।-কালেরকন্ঠ
১৬ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর