সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ০১:৪৬:২০

প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেলেন ক্রীড়াবিদরা

প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেলেন ক্রীড়াবিদরা

স্পোর্টস ডেস্ক: আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের তারকারা। পেয়েছেন সাফল্যের স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার আনন্দই অন্যরকম। এক বছর পর আবার প্রাণের স্পন্দনে মাতোয়ারা ছিলেন শিলা, শাকিল, মাবিয়ারা। ২০১৬ সাউথ এশিয়ান গেমসের পর দেখা হয়নি নিজেদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সেই সুযোগ করে দিল অ্যাথলেটদের।

রোববার গণভবনের সবুজ চত্বরে যেমন প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছিলেন রোলার স্কেটিংয়ের মহিলা দলের অধিনায়ক জেবিন জেরিন হিয়া, তেমনি বয়সটাকেও যেন হার মানিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার দাবাড়– রানী হামিদ। গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ, জিয়াউর রহমান, গলফার সিদ্দিকুরের সাফল্যে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মক কাপে প্লেট চ্যাম্পিয়ন হৃদয়, আতিফ খান, রাজন কবিররা। স্পেশাল অলিম্পিকের ইউনিফায়েড ফ্লোর হকিতে চ্যাম্পিয়ন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীরা অনুষ্ঠানকে ভিন্নমাত্রায় রূপ দেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশটিও প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা পেয়ে বড্ড খুশি। রাত পৌনে ৮টায় পুরস্কার দেয়া শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার আগে ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্তের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা ও শুটার শাকিল আহমেদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।

একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তিনটি ক্রীড়া ফেডারেশনকে তাদের প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে তুলে দিয়েছে। হকি ও সুইমিং ফেডারেশনকে এক কোটি টাকা করে এবং এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে আঞ্চলিক পর্বের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছে বিসিবি। এছাড়া সদ্যসমাপ্ত শ্রীলংকা সিরিজের টেস্ট দলকে এক কোটি এবং টি ২০ ও ওডিআই দলকে ৫০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দিয়েছে বিসিবি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর।

অন্য সবাইকে ছাপিয়ে কাল অনুষ্ঠানে বড় তারকা হয়ে উঠেছিলেন সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী তিন ক্রীড়াবিদ। কারণ অন্য সবাই যখন আর্থিক পুরস্কার পেয়েছেন, তখন শিলা, মাবিয়া ও শাকিল পেলেন ফ্ল্যাট। ওই তিন ক্রীড়াবিদের হাতে প্রতিশ্রুত ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এমন পুরস্কার পেয়ে দারুণ খুশি তিন ক্রীড়াবিদই। সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পাওয়ার আনন্দই আলাদা। তার ওপর ফ্ল্যাটের চাবি পেয়ে আমি খুব খুশি।’ শুটার শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অনেক বড় উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী।’ ভারোত্তোলক মাবিয়ার কথায়, ‘যতদিন বেঁচে থাকব প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার মনে রাখব।’ তিনজনই এমন পুরস্কারকে ভবিষ্যৎ সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছেন।

রানার্সআপ হওয়া রোলবলের অন্যতম তারকা খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম হৃদয় আবেগে আপ্লুুত, ‘আমি ভাবতেই পারিনি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে অর্থ পুরস্কার পাব। আমার জীবন সার্থক।’ উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদও খুশি। তার কথায়, ‘১৯৮৭ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব জেতার পর এই প্রথম কোনো সরকার প্রধানের হাত থেকে সরাসরি পুরস্কার নিয়েছি। যদিও এর আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

তবে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেও তা আমি দেশে না থাকায় সরাসরি নিতে পারিনি।’ এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সরকার প্রধানের হাত থেকে পুরস্কার নিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। তার কথায়, ‘২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলাম। এবার দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছি। খুব ভালো লাগছে।’

তবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত তারা, যারা এমনটা কল্পনাও করতে পারেননি। হকির গোলকিপার জাহিদ হোসেনের কথায়, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি এএইচএফ কাপে জেতার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নেব। অবাক হলেও তাই ঘটেছে।’ ইসলামিক সলিডারিটি আরচারি গেমসে সোনাজয়ী দলের সদস্য শ্যামলী রায়ের কথা, ‘কত স্বর্ণপদকই তো জিতেছি। কিন্তু এবার সেই পদকজয়টা যেন পূর্ণতা পেল প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে পারায়।’ ব্যাডমিন্টনের ইরিনা, মিনহাজ কিংবা আবু জারেরও একই কথা, ‘প্রথমবার নিজেদের এতটা সম্মানিত বোধ করছি।

এই আনন্দ কাউকে বোঝাতে পারব না।’ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজার কথায়, ‘আগেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে আমি পুরস্কার নিয়েছি। কিন্তু ক্রীড়াবিদদের এমন মিলনমেলায় পুরস্কার নেয়ার আনন্দই আলাদা।’ আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদের কথায়, ‘আগেও আমি পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু নাতি-নাতনি বয়সী ক্রীড়াবিদদের সামনে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে ভালো লাগছে।’

বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপি, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, নাঈমুর রহমান দুর্জয় এমপি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক জালাল ইউনুস, পরিচালক আকরাম খান, যুব ও ক্রীড়া সচিব আছাদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাথলেট ও সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়, ইলিয়াস হোসেন, শেখ মো. আসলাম, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, আবদুল গাফফার, সত্যজিৎ দাস রুপু, আবদুস সালাম মুর্শেদী, অমিত খান শুভ্র, সাবেক তারকা ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাবেক হকি তারকা খাজা রহমতউল্লাহ, মাহবুব এহসান রানা, ক্রীড়া সংগঠক সৈয়দ শাহেদ রেজা, সাজ্জাদুল আলম ববি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, শামসুল হক চৌধুরী এমপি, ফজলুর রহমান বাবুল, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, মহিউদ্দিন আহমেদ মাহি, সালেহ জামান সেলিম, সাব্বির হোসেন ও জাকি আহমেদ রিপন।
১৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে