স্পোর্টস ডেস্ক: সময়ের হিসাব কষলে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনেক দূরের বাতিঘর। ২০১৭ সালের মাঝপথই পেরোয়নি, এখনই তাই বছর দুয়েক পরের বিশ্বকাপ নিয়ে খুব বেশি ভাবার আছে কী? আছে বৈকি। হিসাবের অঙ্ক লম্বা সময়ের ব্যবধান দেখালেও ২২ গজের বিশ্ব আসরে মিশে আছে অন্য হিসাব। সরাসরি মূল পর্বে থাকতে হলে যে মেলাতে হবে র্যাংকিংয়ের হিসাব!
সেখানে আছে আবার সময়ের বেড়াজালও। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ৮ দেশ সরাসরি নিশ্চিত করবে ইংল্যান্ড-ওয়েলসের বিশ্বকাপ। সেই হিসাব মিলাতে বাংলাদেশ ঢেলে দিচ্ছে নিজেদের সেরাটা। এখন পর্যন্ত হিসাবের পথটা ঠিকঠাকই চলছে বাংলাদেশের, সপ্তম স্থানে থেকে আছে নিরাপদ জায়গায়। তবে একটু এদিক-ওদিক হলেই পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ। তাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কিংবা আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের আগেও ভাবতে হচ্ছে র্যাংকিংয়ের হিসাব নিয়ে।
সামনের বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়ার লড়াইটা মূলত বাংলাদেশের দুই দেশের সঙ্গে। প্রথমত বাংলাদেশের এক ধাপ নিচে থাকা পাকিস্তান, দুই নম্বর-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ানরা বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও হিসাবের খাতা থেকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না তাদের। এই মুহূর্তে আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সপ্তম স্থানে থাকা বাংলাদেশের পয়েন্ট ৯২। ২ পয়েন্ট পেছনে থাকা পাকিস্তান (৯০) আছে আট নম্বরে। আর ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নবম স্থানে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিশ্বকাপে খেলাটা নির্ভর করছে আসলে নিজেদের ওপরই। পাকিস্তান কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ হিসাবটা যা একটু কঠিন করে দিতে পারে, এই যা। নইলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দুটো ম্যাচ না হারলে র্যাংকিংয়ের হিসাবে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির তিন ম্যাচের (গ্রুপ পর্ব পেরোলে বাড়বে ম্যাচ সংখ্যা) আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলবে চার ম্যাচ। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া র্যাংকিংয়ের সময়সীমার আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে হাতে থাকা ১০ ম্যাচের হার-জিতের ওপর নির্ভর করবে টাইগারদের ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ।
এমন নয় যে, র্যাংকিংয়ের আটে থাকতে না পারলে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের। তখন ইংল্যান্ডের টিকিটের জন্য বাংলাদেশকে খেলতে হবে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ বাছাই, যেখান থেকে সেরা দুই দল যোগ দেবে আগেই মূল পর্ব নিশ্চিত করা ৮ দেশের সঙ্গে। যদিও ওয়ানডেতে গত কয়েক বছর অপ্রতিরোধ্য দল হয়ে ওঠা বাংলাদেশ সেই হিসাবে যাবেই বা কেন!
র্যাংকিংয়ের সাত নম্বরে থাকার সুবিধাটা ধরে রাখতে পারলেই কাজ হবে যাবে মাশরাফিদের। সে জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা, সেটা হলো কোনও মতেই হারা যাবে না আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগের এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে আইরিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলবে দুই ম্যাচ, যার একটিতে হারলে টাইগাররা হারাবে ৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ দুটো ম্যাচ হারলে ৬ পয়েন্ট হারাবে বাংলাদেশ, যাতে সাত থেকে আট নম্বরে নেমে যেতে পারে, সমান্তরালে পাকিস্তান উঠে যাবে সপ্তম স্থানে।
হিসাবটা আবার উল্টোও হতে পারে। র্যাংকিংয়ে যেমন নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তেমনি আবার পয়েন্ট বাড়িয়ে নেওয়ার পথও খোলা আছে বাংলাদেশের জন্য। আইরিশদের বিপক্ষে না হেরে যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটো ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ, তাহলে প্রাপ্তির খাতায় যোগ হবে ৪ পয়েন্ট, তাতে আরও একটু শক্তিশালী হবে বিশ্বকাপে খেলার জায়গাটা।
ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো করাটাই বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ হারলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না টাইগারদের। কারণ গ্রুপে থাকা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড-তিন দলই বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে র্যাংকিংয়ে। তাই তাদের বিপক্ষে ভালো করলে ছয় নম্বরে উঠেও শেষ হতে পারে বাংলাদেশের মিশন। র্যাংকিংয়ের সব হিসাবই আসলে নির্ভর করছে এখন ‘যদি’, ‘কিন্তু’র ওপর।
সেখানে অবশ্যই পাকিস্তানের সম্ভাব্য ছয় ম্যাচ (চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ন্যুনতম তিন ম্যাচ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচ) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০ ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। যদিও ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা আটে থাকাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নিজেদের ওপর। আর সেটা মাশরাফিদের বেশ ভালো করেই জানার কথা!
৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি