মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০৬:১৯:৪২

শৈশবে ‘প্রায় অন্ধ’ সেই মেয়েটিই এখন দেশসেরা টেনিস তারকা!

শৈশবে ‘প্রায় অন্ধ’ সেই মেয়েটিই এখন দেশসেরা টেনিস তারকা!

স্পোর্টস ডেস্ক : জিততে হলে লড়তে হয়। কঠিন লড়াই। কখনও তা ভাগ্যের বিরুদ্ধে, কখনও অভাবের বিরুদ্ধে, কখনও অন্যায় রাজনীতির বিরুদ্ধে, কখনও বা নিজের শরীরের সঙ্গে। যেমনটা লড়েছেন ভারতের পুনের মলিকা মারাঠে। ছোটবেলায় এক কঠিন অসুখে একটি চোখই হারাতে বসেছিলেন তিনি। কিন্তু লড়াই থামাননি। এখন অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে তিনি দেশের এক নম্বর খেলোয়াড়। আর কঠিন লড়াইয়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন বাবা-মাকে।

১৩ বছরের মলিকা জন্ম থেকেই অ্যামব্লিওপিয়া (Amblyopia) রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সহজ ভাষায় বললে, এই রোগে যে কোনও একটি চোখের অপটিকাল নার্ভ ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যার ফলে এক সময় সেই চোখে আর দৃষ্টিশক্তি থাকে না। ৪ বছর বয়সে এই রোগ ধরা পড়ে। তত দিনে রোগ বেশ বেড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন দুর্বল চোখে দৃষ্টি ফেরাতে গেলে ভালো চোখটিকে ঢেকে রাখতে হবে। যাতে মস্তিষ্ক বাধ্য হয়ে দুর্বল স্নায়ুগুলোকে ঠিকঠাক কাজ করায়।

সেই ৪ বছর বয়স থেকে এক চোখে একটি প্যাচ পরে যাবতীয় কাজ করতেন মলিকা। ৯ বছর বয়স পর্যন্ত এ ভাবেই কাটাতে হয় তাকে। পেশায় চিকিৎসক তার মা বৈজয়ন্তী বলেন, ‘প্রথম দিকে ও প্রায় কিছু দেখতে পেত না। পড়ে যেত, ধাক্কা খেত। আমরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এত ছোট বয়সে ওকে বোঝানো খুব কঠিন ছিল কেন ওর একটা চোখ ঢেকে রাখা হয়েছে।’

মলিকারও বেশ ভালই মনে আছে সেই দিনগুলো। তিনি বলেন, ‘খুব বরিক্তিকর ছিল গোটা ব্যাপার। স্কুলে বন্ধুরা রাগাত আমায়। আমিও চাইতাম প্যাচটা খুলে ফেলতে। মা-বাবা আমায় বোঝান, এটা না করলে আমার একটা চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। তার পর থেকে আমি আর জেদ করিনি।’

তবে জেদটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন মলিকা। চেম্বারে যাওয়ার সময় ছোট ভাই এবং তাকে পাশের একটি টেনিস অ্যাকাডেমিতে রেখে যেতেন বৈজয়ন্তী। ফেরার সময় বাড়ি নিয়ে যেতেন। তার সহাস্য উক্তি, ‘খালি সময়ে যাতে আমায় জ্বালাতন না করে এবং সঠিকভাবে যাতে ওদের শরীর চর্চা হয় তার জন্য ওটাই ছিল সবচেয়ে সহজ উপায়।’

কোচ সন্দীপ কিরতানে অবশ্য খেলোয়াড় চিনতে ভুল করেননি। ৭ বছর বয়সে এক চোখে প্যাচ লাগানো একটা মেয়ে যে ভবিষ্যতে টেনিস কোর্ট কাঁপাতে পারে তা খেলায় দেখাতে শুরু করেন মলিকা। তখন ৯ বছরও পূর্ণ হয়নি তাঁর। এর আগেই প্রতিযোগিতামূলক খেলা শুরু হয়ে যায়।

অত ছোট বয়সে ১৭-১৮ বছর বয়সিদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন মলিকা। তার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র ১৩ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ৩৫০-৪০০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মলিকা। এখন দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে তাকে। ভবিষ্যতে তিনি সিঙ্গলসেও যে দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন তা নিয়েও বাজি ধরছেন তাবড় টেনিস বোদ্ধারা। ইন্ডিয়া টাইমস।
১৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে