স্পোর্টস ডেস্ক: ক’দিন আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা এ অধিনায়কের অবসর অনেক ভক্তই মেনে নিতে পারেননি।
মাশরাফিকে নিয়ে গান, কবিতা গল্প লেখা হয়েছে ইতিমধ্যে। খেলোয়াড় মাশরাফির চেয়ে মানুষ মাশরাফি যে কত বড় মাপের তার প্রামাণ রয়েছে অহরহ। নিজের ভাল কাজকে সবসময় গোপন রাখতে চান লড়াইলে এ কৃতিসন্তান। কিন্তু তারপরও কিছুকিছু প্রকাশ হয়ে যায়। সম্প্রতি জাতীয় দলের হয়ে খেলা পেসার সৈয়দ রাসেলের চিকিৎসার জন্য চার লাখ টাকা দিয়েছেন মাশরাফি। বিষয়টি তিনি গোপন করতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি।
বৈশাখের ছুটিতে মাশরাফি ঘুরতে গিয়েছেন খাগড়াছড়ি। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে যান তিনি। তারসঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছবি তোলেন। মাশরাফি সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তোলা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছেন। নিচে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি তার মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। সৈনিকদের আত্মত্যাগের কথা কথা উল্লেখ করে প্রশংসা করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে নিজেকে ধন্য মনে করবেন বলেও লিখলেন মাশরাফি।
ফেসবুকে মাশরাফি লেখেন, ‘প্রথমে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাদের সবাইকে যারা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য সেবা করে যাচ্ছেন। আমার এবারের খাগড়াছড়ি সেনানিবাস ভ্রমণ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি একজন সৈনিক তাঁর মাতৃভূমির জন্য কি পরিমাণ আত্মত্যাগ করেন।
আপনারা হলেন সেই সব মানুষ যারা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে, কিন্তু আপনাদের বীরত্ব গাঁথা হয়ত কখনো কোন জাতীয় দৈনিক বা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। আমার সাথে এমন একজন সৈনিক এর দেখা হয়েছে যিনি খুব শীগ্রই বাবা হবেন। অথচ দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আজ তাঁর পরিবার থেকে বহুদূরের এই সেনা ক্যাম্প এ অবস্থান করছেন। আমি স্বীকার করি অনেকের কাছেই সেপাই পলাশ এর দেশের প্রতি অঙ্গীকার একটি সামান্য পরিসংখ্যান ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজের কাজ দিয়ে জাতীয় সঙ্গীতকে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা কিংবা গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দেয়াকেই আমরা হয়ত দেশাত্মবোধের পরিচায়ক হিসেবে মনে করি।
কিন্তু মনে রাখবেন, এর কোনকিছুই আপনাদের আত্মত্যাগের সমতুল্য নয়। আজ বাংলাদেশ আর্মির এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রত্যেক সদস্য দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছেন। আমার এই ভেবে খুব কষ্ট হয় যে, আপনারা এবং আপনাদের আপনজনেরা অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করেন- যেন আমরা নিরাপদে ঘুম থেকে উঠতে পারি। যেদিন আমাদের দেশের সকল নাগরিক একইভাবে দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করতে প্রস্তুত হব সেদিন আমরা পাবো সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।
মনে রাখবেন, “সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে”। সর্বশেষ এই বলতে চাই, “যদি কখনো বাংলাদেশ আর্মি সাথে একদিনও কাজ করার সুযোগ পাই, আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।” এত সময় ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদের কে অশেষ ধন্যবাদ।
- আপনাদের মাশরাফি (একজন ব্যক্তি যে শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলে)
১৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি