রেজাউল করিম: জুভেন্টাসের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে বার্সেলোনা। গত চার মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো শেষ আট থেকে বিদায় নিল কাতালানরা।
কেন এমনটা হচ্ছে? জুভেন্টাস ম্যাচের পরই শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বার্সার এই নিয়তির পেছনে কাজ করছে অনেকগুলো কারণ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুবছরে খেলােয়াড় কেনাবেচা কর্মকাণ্ডেরই খেসারত দিচ্ছে বার্সেলোনা।
লুইস এনরিকে যোগ দেয়ার প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জেতে বার্সা। তার আগে ২০১৩-১৪ মৌসুমের হতাশা দূর করতে এবং ফিফার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে গ্রীষ্মে দল বদলের বাজারে প্রচুর বিনিয়োগের পথ নেয় ক্লাবটি। লুইস সুয়ারেজ, ইভান রাকিটিচ, মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন, ক্লদিও ব্রাভো এবং জেরোমি ম্যাথিউসহ আরও বেশ কয়েকজন খেলােয়াড় কেনে ন্যু ক্যাম্পের দলটি।
কম বয়সী খেলোয়াড় কেনাবেচার অভিযোগে বার্সার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফিফা। যা নিয়ে বেশ চাপে ছিল ক্লাবটি। এর মধ্যে ২০১৫ এর জানুয়ারিতে ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে হেরে যান ক্রীড়া পরিচালক আন্দোনি জুবিজারেতা। খেলােয়াড় কেনার ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেটা মানতে চাননি তার উত্তরসূরি রবার্ট ফার্নান্দেজ। তাকে সমর্থন করেছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট বার্তেমিউও। তখন খেলােয়াড় কেনার ক্ষেত্রে ফিফার নিষধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০১৫’র গ্রীষ্মে তুর্কি মিডফিল্ডার আর্দা তুরান ও অ্যালেক্সিস ভিদালকে কেনে বার্সা।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ৩৪ মিলিয়ন ইউরোতে তুরানকে দলে নেয়া হয়। ২০ বছরের আলোকিত ক্যারিয়ার শেষে জাভি কাতারে পাড়ি জমানোর কারণেই তুরানকে আনা হয়। আর ১৮ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে সেভিয়া থেকে ভিদালকে কেনা হয় দানি আলভেজের জায়গা পূরণ করতে।
তুরান-ভিদালকে কিনলেও নিষধাজ্ঞার কারণে ২০১৬’র জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের বেঞ্চেই বসিয়ে রাখতে হয় বার্সাকে। আর্দা তার দ্বিতীয় মৌসুমে মাঠে নেমে ভাল করেছেন। নেইমারের ব্যাক-আপ হিসেবে এই ফরোয়ার্ডের খেলা কার্যকর ছিল, কিন্তু মিডফিল্ডে তার উপস্থিতি একটু গুণমান সম্পন্ন হলেও সেটি জাভির বিকল্পের মত কিছু ছিল না।
আর মারাত্মক ইনজুরির কারণে ভিদাল প্রায় পুরো মৌসুম সাইডলাইনে বসেই কাটান। দানি আলভেজ জুভেন্টাসে চলে যাওয়ায় এই সময়ে রাইট-ব্যাক নিয়ে সমস্যায় পড়ে বার্সা। পার্স ডেস প্রিন্স ও সার্জিও রবের্তো সেই জায়গায় খেলতে থাকেন।
প্রিন্স ও সার্জিও ছাড়াও আরেক নতুন রিক্রুট আন্দ্রে গোমেজ রাইট-ব্যাকে কিছুটা সহায়তা করেন। তবে ভ্যালেন্সিয়া থেকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে কেনা পর্তুগীজ তারকার আরও সময় লাগবে কাতালান স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।
রাইট-ব্যাকে সমস্যা হলেও লেফট-ব্যাক বেশ সাবলীল বার্সার। এই পজিশনে জর্ডি আলবার পাশাপাশি ভাল পারফর্ম করেন ম্যাথিউ এবং সাড়ে ১৬ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজি থেকে কেনা লুকাস ডিগেনি। মাঝে ড্যানিশ সুয়ারেজ ও আয়াক্স থেকে আসা গোলরক্ষক জাসপার কিলিসেনও মন্দ করেনিন।
আগের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর রাইট-ব্যাকে একজন টপক্লাস বিকল্পের কথা ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে বলেছিলেন এনরিকে। সে অনুযায়ী ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে ভ্যালেন্সিয়া থেকে কেনা হয় পাকো আলকাসারকে। লুইস সুয়ারজকে বেশি বিশ্রাম দিতেই তাকে দলে নেয়া হয়।
পাকোকে কেনার কারণে দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন মুনির আল-হাদ্দাদি। কিন্তু দলে যোগ দেয়ার পর এপর্যন্ত মাত্র ৫ গােল করেছেন পাকো। যার ফলে কোচের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ তিনিও। দলে কম সুযোগ পাওয়ায় হাদ্দাদির ফর্মেও ভাটা পড়ে।
নতুন রিক্রুটদের মধ্যে শুধু ব্যতিক্রম স্যামুয়েল উমতিতি। লিঁও থেকে ২৫ মিলিয়নে কেনা ফরাসি ডিফেন্ডার প্রথমার্ধে খেলেছেন মালাগা ছাড়া এমন কোনে ম্যাচে হারেনি বার্সা।
খেলােয়াড় কেনায় গত দুই বছরে যে ১৭৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে বার্সা, তার মধ্যে উমতিতির ২৫ মিলিয়নই ঠিকঠাক কাজে লেগেছে। অন্যান্য খেলোয়াড়রা যথেষ্ট ভাল না করার কারণ তারা সময়ের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারেননি। খেলােয়াড়দের এতো বেশি সময় দেয়া যে একটা বিলাসিতা সেটা ভেবে বার্সাও সুযোগটা দেয়নি। সাফল্যও আসেনি।
কাতালানদের এখন এমন সব খেলোয়াড় কেনা দরকার যারা দ্রুতই নিজেদের মানিয়ে নিয়ে দলকে সাহায্য করতে পারবে। সেই সঙ্গে ‘লা মাসিয়া’(বার্সার ফুটবল একাডেমি) যতক্ষণ পর্যন্ত জাভি, পেদ্রো এবং আলভেজের মতো খেলােয়াড়দের যোগ্য বিকল্প তুলে আনতে পারবে না, তাদের মত কাউকে অন্য উপায়ে খুঁজে বের করা দরকার। নয়তো মাঠে এমন অনেক খাবি খাওয়া সময় অপেক্ষা করছে বার্সার জন্য!-চ্যানেল আই
২০ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস