স্পোর্টস ডেস্ক: আসছে জুনে হতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও তার আগে আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ডাবলিনে আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডকে মোকাবিলা করতে ১৮ জনের দল চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ, আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ১৫ জনের দল।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানান, আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার শেষদিন ছিল। কিন্তু এর আগে আয়ারল্যান্ড সফর থাকায় সময়ের আগেই দল ঘোষণা করেছে তারা।
দিকে দলে ফিরেছেন দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থাকা ‘দ্য ফিনিশার’ খ্যাত অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। তবে তাকে কেবল ত্রিদেশীয় সিরিজের দলেই রাখা হয়েছে। আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য অপেক্ষমাণ চারজনের তালিকায় আছেন নাসির।
টাইগার নাসির হোসেন ছিলেন নিজের সেরা সময়ে ‘দ্য ফিনিশার’ নামেই পরিচিত। বরাবরই বলে এসেছেন বলেন, এই ভূমিকায় নিজেকে মেলে ধরতে খুব পছন্দ করেন। ম্যাচ শেষ করে আসার সেই চ্যালেঞ্জ আবার নিতে মুখিয়ে আছেন। আয়ারল্যান্ডে সুযোগ মিললে কাজে লাগাতে চান দুই হাতে।
“যারা আমাকে নির্বাচন করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ। তারা আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি পারফর্ম করতে। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি পারফর্ম করতে চেয়েছি। এখন সুযোগ পাওয়াই শেষ কথা নয়। আসল কাজ হলো সেখানে গিয়ে পারফর্ম করা। ”
“অবশ্যই চাইবো যে জায়গায় ছিলাম সেখানে ফিরতে। ম্যাচ শেষ করে আসতে সব সময়ই আমার ভালো লাগে। মনে হচ্ছে আগে যে ছন্দে ছিলাম সেটা ফিরে পেয়েছি। যদি সুযোগ মিলে সেই সময়ে যেমন খেলতাম তেমন খেলার চেষ্টা করবো। ”
একাদশে ফিরতে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে নাসিরকে। সাব্বির রহমান টপ অর্ডারে যাওয়ার পরও লড়াইটা সহজ নয়। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার আরও তিন জন আছেন দলে- মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলিংয়ে এগিয়ে থাকায় মিরাজের জায়গা অনেকটাই নিশ্চিত। লড়াইটা তাই মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেকের সঙ্গে।
এসব ভাবনাতেই আনতে চান না নাসির। সতীর্থদের সঙ্গে লড়াই দেখেন না তিনি, “সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। কারা একই ধরনের খেলোয়াড় সেটা নিয়েও চিন্তা করছি না, সবাই বাংলাদেশ দলে খেলে। বড় কথা হলো, সুযোগ এলে ভালো খেলার চেষ্টা করবো। ভালো খেলে দলে জায়গা করে নিতে চাই। ”
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে হারিয়ে যখন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে আসছিলেন নাসির তখন তার চারপাশে জটলা। সেলফি, অটোগ্রাফের আবদার মেটাচ্ছিলেন। নাসির জানান, ভক্তদের ভালোবাসাকে চাপ নয় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখতে চান।
“এটা চাপ তৈরি করে হয়তো। সঙ্গে অনেক আত্মবিশ্বাসও দেয়। মানুষ আমাকে পছন্দ করে, আমার জন্য দোয়া করে- এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। সবাই যে আমাকে ভালোবাসে, উঠতে বসতে এর প্রমাণ পাই। সুযোগ পেলে তাদের প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা তো থাকবেই। ”
পেস বোলিংয়ে খানিকটা দুর্বলতা ছিল নাসিরের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেভাবে রানের মধ্যেও ছিলেন না। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, দলে ফিরতে প্রচুর রান করতে হবে নাসিরকে। সেটা করেছেনও এই অলরাউন্ডার।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ আসরে করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক। ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে করেছেন ঝকঝকে এক শতক। চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ শুরু করেছেন তিন অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংস দিয়ে। নাসির জানান, এই রান পাওয়া তার কষ্টের ফল।
“জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও অনেকগুলো ম্যাচ খেলছি। চার দিনের ম্যাচ খেলছি। ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে খেলছি। অনুশীলনও করেছি। আমার মনে হয় এখন সেটারই পুরস্কার পাচ্ছি। ”
“এখন আত্মবিশ্বাস অনেক ভালো। যখন রান আসে তখন আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমার সেটাই হয়েছে। আর যেটা বললাম, সুযোগ পাওয়াই বড় কথা নয়। ওখানে গিয়ে পারফর্ম করাটাই বড়। ”
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই অপরাজিত নাসির। দলও পেয়েছে সহজ জয়। আয়ারল্যান্ডেও ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তিনি।
এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের গ্রুপে আছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। টুর্নামেন্টের আগে অন্য গ্রুপে থাকা চার দলের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। তার আগে আগামী মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ। শুরুতে ইংল্যান্ডে অনুশীলন ক্যাম্প ও দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে আয়ারল্যান্ড যাবে মাশরাফি বাহিনী।
ইংল্যান্ডের সাসেক্সে ক্যাম্প করার জন্য বাংলাদেশ দল ঢাকা ছাড়বে ২৬ এপ্রিল। সেখান থেকে ৭ মে মাশরাফিরা আয়ারল্যান্ডে যাবেন। ডাবলিনে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ২৪ মে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগারদের প্রথম ম্যাচ ১ জুন, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়টি কেনিংস্টন ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ৯ জুন কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নামবে লাল-সবুজরা।
ত্রিদেশীয় সিরিজের বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাসির হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাঞ্জামুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, শুভাশিষ রায়।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাঞ্জামুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম।
স্ট্যান্ডবাই: নাসির হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শুভাশিষ রায়।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে