সোমবার, ০১ মে, ২০১৭, ০১:০৬:৪৬

জাতীয় দলে আবারো আলো ছড়াক শাহরিয়ার নাফিসের ব্যাট!

জাতীয় দলে আবারো আলো ছড়াক শাহরিয়ার নাফিসের ব্যাট!

স্পোর্টস ডেস্ক: আক্ষেপ শব্দটি শাহরিয়ার নাফিসের নামের সাথে যাচ্ছে সেই ২০০৪ সাল থেকে। আক্ষেপ শব্দটি শাহরিয়ার নাফিসের নামের সাথে যাচ্ছে সেই ২০০৪ সাল থেকে। ধুমকেতুর মত আবির্ভাব বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কত দিন টিম টাইগার্স হন্য হয়ে খুঁজেছে এক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, কত দিনের আক্ষেপ ঘুছিয়েছেন।

২১ জুন, ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয় এক স্টাইলিস বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। বলছি শাহরিয়ার নাফিস আহমেদের কথা। অভিষেক ম্যাচে মাত্র ১০ রানে আউট হয়ে গেলেও পরের ম্যাচে দ্যুতি ছড়ানো ৪৭, আবার এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে তখনকার প্রবল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যান্টাবুরিতে নয়নাবিরাম ৭৫ রানের ইনিংস খেলে জানান বাংলাদেশের ক্রিকেটের মহাতারকা হওয়ার জন্যই তিনি এসেছেন।

পরবর্তীতে বছর দুয়েক ছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের ধারাবাহিক এক নাম। ২০০৫ সালেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ডেব্যু হয় শাহরিয়ার নাফিসের। ২০০৬ সালে নিজের মাত্র ৫ম টেস্টে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৮৯ বলে ১৯ টি দৃষ্টিনন্দন চারে সাজানো ১৩৮ রানের এক খুনে ইনিংস।

ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পি, শেন ওয়ার্ন আর স্টুয়ারট ম্যাগগিল এর সমন্বয়ে গড়া বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে খেলা এই ইনিংসটি এখনও বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস। প্রথম ইনিংস শেষে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের বোলিং ফিগার ছিল ২০-১-১১২-০! যেই ইনিংসের কল্যানে পুরো পাঁচ দিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সমানতালে লড়েও মাত্র ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

২০০৬ সালে ওডিআইতে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারীর তালিকায় ছিলেন ৬ নম্বরে। ২৮ ইনিংস ব্যাট করে ৩টি সেঞ্চুরির সাহায্যে করেন ১০৩৩ রান, যার গড় ৪১.৩২। এক পঞ্জিকাবর্ষে ১০০০ রান করা প্রথম বাংলাদেশী শাহরিয়ার নাফিস। ২০০৬ সালে নির্বাচিত হন বাংলাদেশের সেরা ক্রীড়াবিদ, মনোনয়ন পান আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ভাবা হয়েছিলো তাকে। বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচে করেছিলেন অধিনায়কত্ব, যা এখন পর্যন্ত তার খেলা একমাত্র আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ছিলেন বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক।

এরপরই স্বপ্নের মত কাটতে থাকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুঃসময় আসে নাফিসের। বিশ্বকাপের ছয় ম্যাচে মাত্র ৩১! এরপর কিছুদিন জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে সময় কাটে।

২০০৮ সালে আইসিএল খেলে ১০ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা পান। পরবর্তীতে আইসিএলের সাথে চুক্তি বাতিল করলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিসিবি। ২০১০ সালে আবার জাতীয় দলে ফিরে এসেই দ্বিতীয় ম্যাচে করে করেন ৭৩ রান।

ছিলেন ২০১১ সালের বিশ্বকাপ দলে। কিন্তু একাদশে জায়গা পেয়েছেন মাত্র এক ম্যাচে। কিন্ত ব্যাটিং এ ফিরে পাওয়া যায়নি পুরনো সেই শাহরিয়ার নাফিসকে। তাই ২০১১ সালের পর ওয়ানডে আর ২০১৩ সালের পর টেস্ট দলে আর পাওয়া যায়নি শাহরিয়ার নাফিসকে।

২০১৫ সালের পর থেকে ঘরোয়া লিগে দেখা যাচ্ছে আগের মত আত্মবিশ্বাসী অথচ আগের চেয়ে আরও পরিনত শাহরিয়ার নাফিসকে। রানের ফুলঝুড়ি ছুটছে তার ব্যাট থেকে। কি বিপিএল, কি বিসিএল কি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, সর্বক্ষেত্রেই রানের ফোয়ারা।

কিন্তু মন জয় করতে পারতেছেন না নির্বাচকদের। আক্ষেপ হয়েই আছেন পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের মন জয় করে নেয়া শাহরিয়ার নাফিসের। এই আক্ষেপ শব্দটি শাহরিয়ার নাফিসের নামের সাথে যাচ্ছে সেই ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকেই।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ খেলোয়াড় যার হাতে গড়া সেই রিচার্ড ম্যাকিন্স সাথে কি এক মনোমালিন্যের কারনে অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপ দল হতে শধু অধিনায়কত্ব হারাননি, বাদও পড়েছিলেন দল হতে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের আশা বর্তমান ঘরোয়া লিগের পাফরমেন্সের মত আবার হেসে উঠুক শাহরিয়ার নাফিসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ৩২ বছর বয়সে ফিরে আসুক আবার ২২ গজে। বাংলাদেশের হয়ে ইতিমধ্যে খেলেছেন ২৪ টি টেস্ট, ৭৫ ট ওয়ানডে ও ১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারো আলো ছড়াক শাহরিয়ার নাফিসের ব্যাট। বাংলাদেশের ক্রিকেটমোদীদের মত শাহরিয়ার নাফিসও মরিয়া আবার জাতীয় দলে জায়গা পেতে।
১ মে ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে