জাহিদের ‘নতুন’ পৃথিবী
স্পোর্টস ডেস্ক: মাঝখানে নানা সমস্যাদীর্ণ এই উইঙ্গারকে নতুন করে চেনাল শেখ কামাল টুর্নামেন্ট। তিন ম্যাচে পেয়েছেন চার গোল। করাচি ইলেকট্রিকের মোহাম্মদ রসুল চার গোল নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছেন। সেরা গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে এখন জাহিদই অগ্রবর্তী নাম।তিনটি গোলই পরশু করাচি ইলেকট্রিকের বিপক্ষে। যেকোনো পর্যায়েই এটি তাঁর প্রথম হ্যাটট্রিক। করাচি ইলেকট্রিকের বিপক্ষে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৪-২ গোলে জিতিয়ে তুলে এনেছেন সেমিতে। হ্যাটট্রিকের পাশে বাকি গোলটিও তাঁর বানিয়ে দেওয়া। তবু ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পাননি বলে মন খারাপ। বিস্ময়করভাবে বিচারকেরা বেছে নিলেন এক গোল করা এলিটা কিংসলেকে! ওই ক্ষোভ জাহিদের মনে জ্বেলে দিয়েছে আগুন, ‘আমি চাই দলকে ফাইনালে তুলতে, চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা জিতব আশা করি।’
তাঁর কথায় আস্থা আছে অনেকেরই। সবাই একবাক্যে বলেন, জাহিদ খেললে দলকে জয়ের জন্য ভাবতে হয় না! কিন্তু খেলাটা তাঁর ‘ইচ্ছের’ ওপর নির্ভর করে। ‘মুড’ না থাকলে নিষ্প্রভ। কিন্তু কোচ মাঠ থেকে তুলে নিলে মেজাজ হারিয়ে পানির বোতলে সজোরে লাথি হাঁকান। নিয়মিত না খেলার অভিযোগ মোহামেডানের সঙ্গে চুক্তির অর্ধেক ১৭ লাখ টাকাই ফেরত দিতে বাধ্য হন। চোটের কারণে তাঁকে জাতীয় দলে পাওয়া যায় কম। ঘরোয়া ফুটবলেও একই গল্প।
কিন্তু জাহিদ মানে বিপুল সম্ভাবনা। ২০০৮ মারদেকায় ভিয়েতনামের বিপক্ষে ছয়জনকে কাটিয়ে করা তাঁর একটি গোল দেখে খোদ কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘তোমার মতো খেললে আমি ইউরোপে সুযোগ করে নিতাম।’ জাহিদে মুগ্ধ সাবেক তারকা ফুটবলার ওয়াসিম ইকবাল, ‘ব্রাদার্সে ওকে পেয়েছিলাম। রাইট আউটে ওর মতো ফুটবলার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখিনি।’ জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল বলেন, ‘পাগলা খেললে আর কোনো চিন্তা থাকে না।’
‘খেয়ালি’ ‘দুর্বিনীত’, ‘উদ্ধত’, শব্দগুলো তাঁর সঙ্গে খুব যায়। ভুলোমনও কি নয়? কাল সকালে সবাই এক রকম টি-শার্ট পরে নাশতার টেবিলে গিয়েছেন, জাহিদ তালগোলে অন্য টি-শার্ট পরে এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন! বয়স কত হলো জিজ্ঞেস করলে অনেকক্ষণ ভাবেন, ‘বয়সটা কত যে, নাহ্ মনে নেই!’ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে হিন্দি-বাংলা গান শোনেন। পত্রিকায় রাশিফল দেখেন সকালে। তা রাশিটা কী? প্রথমে বলেন, ‘আমার মনে হয় বাঘ রাশি!’ বাঘ রাশি! পরে বলেন, ‘ওহ্, মনে হয় সিংহ রাশি।’
কিন্তু ভুলোমনা এই ফুটবলার মাঠে প্রতিপক্ষকে চূর্ণ করার ক্ষমতা রাখেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভক্ত চুলের স্টাইলটাও করেছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকার মতো। হাতে উলকি আঁকা। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘আমি তো ভয়ংকর। ফেসবুকে অনেক ভক্ত হয়েছে, অনেকে আমাকে বলে জেএইচ-সেভেন।’
এই জাহিদ কাল হোটেলের সুইমিং পুলে বসে কথা বলতে বলতে ছোটবেলায় ফিরে গেলেন। দুরন্তপনার জন্য গ্রামে অনেক ‘নামডাক’ কুড়িয়েছেন, বাবার অনেক মার খেয়েছেন। সেই বাবাই ভোরবেলা মাঠে নিয়ে বলতেন, ‘ফুটবল খেল।’
বিকেএসপির ছাত্র প্রথম ধাপেই অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল ফেস্টিভ্যালে নেপালে ১৪ গোল করে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন। এখন তো টাঙ্গাইলের গর্ব। ঘাটাইলের সাদুটি গ্রামের মানুষজন টিভির সামনে শেখ কামাল ক্লাব কাপে তাঁর খেলা দেখে সাগ্রহে। চট্টগ্রামের গ্যালারিতেও দর্শক টানছেন জাহিদ, গ্যালারিতে তাঁর নামে পরশু স্লোগানও উঠেছে। সব দেখে জাহিদের উপলব্ধি, ‘আগের সব ভুলে শুদ্ধ হতে চাই। এই টুর্নামেন্ট আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে।’
‘নতুন’ জাহিদ সত্যিই ‘শুদ্ধতার’ পথেই পা বাড়িয়েছেন! প্রথম আলো
২৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ