কোহলিকে বিরাট চ্যালেঞ্জে ফেলে গেলেন ধোনি
স্পোর্টস ডেস্ক : মুম্বাই নগরী তাদের কাছে অভিশাপ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহর ছাড়তে পারলেই যেন বাঁচেন। তাই সাতসকালেই মুম্বাই ছাড়ার হিড়িক। ভুবনেশ্বর কুমার থেকে শুরু করে মোহিত শর্মা, চোখমুখ বিধ্বস্ত। রাতেও মনে হয় স্বপ্নে দেখেছেন এবি ডি’ভিলিয়ার্স, ফাফ ডুপ্লেসিসদের। অনেক ম্যাচ স্মৃতিতে রয়ে যায়। ফ্রিডম সিরিজে সীমিত ওভারের শেষ ম্যাচ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুলতে চাইবেন ভুবিরা।
কিন্তু চাইলেই কি সম্ভব? যতবার দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবেন, ভেসে উঠবে ওয়াংখেড়ের প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের ‘গণপ্রহার’–এর স্মৃতি। ধোনি যতই ফ্ল্যাট উইকেটের কথা বলুন, ভারতীয় বোলারদের সীমাবদ্ধতার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সিরিজ নির্ধারক ম্যাচেই ভারতীয় বোলিংয়ের কঙ্কালসার চেহারাটা ফুটে উঠেছে। অতীতে বহুবার ধোনির মুখে ডেথ ওভারের বোলিং নিয়ে আক্ষেপ শোনা গেছে। সময় গড়িয়েছে, ছবিটা কিন্তু বদলায়নি। এখনও সেই স্ট্রাইক বোলার খুঁজে চলেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’।
না হলে আর কেনই বা বলবেন, ‘আমরা এখনও ভাল স্ট্রাইক বোলার খুঁজে পেলাম না। ডেথ বোলিংয়ে একেবারেই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছি না। আমার মনে হয় এই বিষয়টা নিয়ে বসে চিন্তাভাবনা করতে হবে। ডেথ ওভারের বোলিং নিয়ে আমাদের অনেক সময় লড়াই করতে হচ্ছে। বোলারদের নিয়ে বসতে হবে।’ শুধু বোলিং নয়, এইরকম জঘন্য ফিল্ডিংও নাকি তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে দেখেননি মাহি। তবে গোটা সিরিজে স্পিনারদের পারফরমেন্সে খুশি ভারতীয় ক্যাপ্টেন।
দল যখন জয়ের রাস্তায় থাকে, দুর্বলতাগুলো প্রকাশ্যে আসে না। আর হারলেই বেরিয়ে আসে যাবতীয় সমস্যা। এত বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অথচ উপযুক্ত সিমিং অলরাউন্ডার পেলেন না। সবেধন নীলমণি স্টুয়ার্ট বিনি। এমন পরিবেশে খেলতে হচ্ছে সেখানে কম্বিনেশনের দিকে তাকাতে গিয়ে বিনিকে খেলানোর সুযোগ হচ্ছে না। আর এতেই লোয়ার অর্ডারের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠছে। সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন ধোনি।
বলেছেন, ‘আমাদের দলে প্রকৃত সিমিং অলরাউন্ডারের অভাব রয়েছে। আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তার মধ্যেই সমাধান খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি। স্টুয়ার্ট বিনিকে দিয়ে অভাব পূরণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সবাই সমালোচনা করছে। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে সেরা সিমিং অলরাউন্ডার বলতে স্টুয়ার্ট বিনি, স্পিনিং অলরাউন্ডার বলতে রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল। আরও একটা দুর্বলতার জায়গা লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং। ভাল জোরে বোলিংয়ের বিরুদ্ধে একবারেই দাঁড়াতে পারছে না।’
এইরকম কঠিন সিরিজেও ব্যাটিং অর্ডারে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়েছেন। কখনও কোহলিকে চারে নামিয়ে রাহানেকে তিনে তুলে নিয়ে এসেছেন। কোনও ম্যাচে আবার নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে নিয়ে এসেছেন। এই রকম কঠিন সিরিজে কেন এত পরীক্ষা–নিরীক্ষা? ভারতীয় অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘এটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। একটা নির্দিষ্ট সিরিজের কথা ভাবতে গেলে এটা ক্ষতিকর। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে কম্বিনেশন তৈরি করতে হচ্ছে। মিডল ও লোয়ার অর্ডারকে শক্তিশালী করতে হবে।
কে কোন পজিশনে ভাল মানিয়ে নিতে পারবে, তা দেখার জন্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে।’ বোলিং কম্বিনেশন নিয়েও ভাবনা–চিন্তা করতে হচ্ছে ধোনিকে, ‘সব জায়গায় তো আর তিন স্পিনার নিয়ে খেলতে পারব না। এমন বোলার খুঁজে বার করতে হবে, যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে নিতে পারবে। বেশ কয়েকজন জোরে বোলারকে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছি। কিন্তু কেউ–ই সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি।
দিলীপ ট্রফি, দেওধর ট্রফি, আইপিএলে ভাল খেলছে, অথচ দেশের হয়ে মাঠে নেমে সেভাবে সাফল্য পাচ্ছে না। আমি এখনও বিশ্বাস করি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সেরা বোলার আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা বোলারের মধ্যে আকাশ–পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আমরা এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছি। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। আমার মনে হচ্ছে আমাদের দল এখনও তৈরি নয়।’
একদিনের সিরিজ হারেই এই রকম অবস্থা? এখনও তো টেস্ট সিরিজ বাকি। সেখানে ধোনি থাকবেন না, প্রোটিয়াদের সামলানোর দায়িত্ব নিতে হবে বিরাট কোহলিকে। টোয়েন্টি ২০, একদিনের সিরিজ হারিয়ে কোহলিকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে গেলেন ধোনি। এবি ডি’ভিলিয়ার্স তো বলেই দিয়েছেন, টেস্ট সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ে দেশে ফিরতে চান। ফর্মের শিখরে থাকা প্রোটিয়াদের আটকাতে ভারতের ভরসা স্পিনিং ট্র্যাক, সঙ্গে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, অমিত মিশ্ররা। তাতেও কি হাসিম আমলাদের বিরুদ্ধে স্বস্তিতে থাকতে পারবে টিম ইন্ডিয়া? টিম হোটেল ছাড়ার সময় কোহলিদের দেখে কিন্তু মনে হল না।
২৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস