শেহবাগকে দেখে শেখা উচিত ভারতীয়দের!
অশোক মলহোত্র : যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক খেলার মাঠে যে কমবেশি রেষারেষি থাকবে, একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাও বোধহয় এখন সেটা বুঝে গিয়েছে। কিন্তু ইদানীং ক্রিকেট মাঠে যা দেখছি, সেটা খেলোয়াড়সুলভ রেষারেষির সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
কয়েকটা ঘটনা মনে পড়ছে। বছরচারেক আগে বিরাট কোহলির অস্ট্রেলীয় গ্যালারিকে মধ্যমা দেখানো। গত শ্রীলঙ্কা সফরে বিপক্ষের কোনও একটা উইকেট নিয়ে ইশান্ত শর্মার অদ্ভুত ভঙ্গিতে মাথা চাপড়ানো। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখছি ব্যাপারটা এখন আমদানি হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, গৌতম গাম্ভীর আর মনোজ তিওয়ারির ঝামেলার কথা বলছি।
এ সব দেখে মনে হচ্ছে, এখনকার ক্রিকেটারদের বীরেন্দ্র শেহবাগকে দেখে শেখা উচিত। ওর থেকে আগ্রাসনের সঠিক পাঠটা নিক এরা। ওর খেলা দেখে বুঝুক যে, মাঠে একে অপরের দিকে রে রে করে তেড়ে যাওয়াটাকে কখনওই আগ্রাসন বলে না। আগ্রাসন দেখানো মানে মুখ বন্ধ রেখে ব্যাট বা বলকে নিজের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা। যে কোনও গালাগালির চেয়ে যে ভাষা অনেক বেশি বিষাক্ত, ধারালো।
আধুনিক ক্রিকেটের আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের কোনও তালিকা যদি করা হয়, সেখানে সহবাগকে প্রথম পাঁচে রাখতেই হবে। এমন বোলার নেই যাকে নিজের দিনে কাঁদিয়ে ছাড়েনি সহবাগ। অথচ সেই আক্রমণ, আগ্রাসনের সেই জান্তব চেহারাটাকে ও এক মুহূর্তের জন্যেও নিজের ব্যাটের বাইরে আসতে দেয়নি। কারও সঙ্গে শেহবাগকে কোনও দিন ঝগড়া করতে হয়নি। বা কাউকে গালাগালি দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে হয়নি। যা বলার, বলেছে ওর ব্যাট। বোলার যত জোরে বল করত, তাকে তত জোরেই মাঠের বাইরে তুলে ফেলত যে ব্যাট। হাসিমুখে, নিঃশব্দে ম্যাচের রং পাল্টে দিত। ‘স্মাইলিং অ্যাসাসিন’ বলে একটা কথা আছে না? শেহবাগ ছিল তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
শেহবাগের মতো ক্রিকেটার সত্যিই খুব কম হয়। ভারতের এই টিমটার কথা যদি বলেন, তা হলে বলব রোহিত শর্মা কিছুটা হলেও শেহবাগের জাতের প্লেয়ার। মাঠে ছুটকোছাটকা মাথা গরম হয়তো করে। কিন্তু বিরাট বা ইশান্তের মতো সর্বক্ষণ অগ্নিশর্মা হয়ে খেলতে নামে না। আগ্রাসন ওর ব্যাটেও কম নেই। নিজের দিনে ওকে থামানো প্রায় অসম্ভব।
আর টি-২০ ক্রিকেটে শেহবাগের ঘরানার কেউ থেকে থাকলে সেটা এবি ডে’ভিলিয়ার্স। বরং আমি তো বলব এবি সহবাগের এই ব্যাপারটাকে আরও উঁচুতে নিয়ে গিয়েছে। কারণ ও ইম্প্রোভাইজ করে খেলতে পারে। যেটা শেহবাগকে খুব একটা করতে দেখিনি। আর ওই যে আগে যেটা বলছিলাম, মাঠের বাইরে একদম ঠান্ডা-ঠান্ডা কুল-কুল। সব সময় দেখি ওর মুখে হাসি। গোটা বিশ্বে এবি যে এত জনপ্রিয়, ভারতের মাঠেও যে লোকে ‘এবি এবি’ বলে চেঁচায়, এগুলো তার হাতেগরম উদাহরণ।
রোহিত বা এবিকে দেখলে মনে মনে শান্তি পাই। ভাবি যে, যাক সহবাগের আগ্রাসনের ব্র্যান্ডটা তা হলে এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তবে আশা করব এখনকার প্লেয়াররা এই ব্র্যান্ডের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। বুঝতে পারবে যে, মাঠে ঝামেলা করে কখনও নিজের ক্রিকেটের উন্নতি হয় না। বিপক্ষের উপর বিশাল কোনও সুবিধেও কিন্তু পাওয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়া যে ধরনের স্লেজিং করে মানসিক চাপ তৈরি করে, সেটা আলাদা। কিন্তু গম্ভীরদের ব্যাপারটা প্রচণ্ড দৃষ্টিকটু।
আরে, হাতাহাতি বা গরমাগরম ডায়লগের নাটক চাইলে তো আমি সিনেমা দেখতে পারি। লোকে ক্রিকেট দেখে ব্যাট-বলের লড়াইটা উপভোগ করবে বলে। ক্রিকেট মাঠের ‘মারপিট’ তাই ব্যাটে-বলেই হোক না।
লেখক : ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক
২৮ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস