মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৩:৪৫

অঢেল টাকায় জন্ম থেকেই অলস পড়ে আছে বরিশালের আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম

    অঢেল টাকায় জন্ম থেকেই অলস পড়ে আছে বরিশালের আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম

স্পোর্টস ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মানের খেলা অনুষ্ঠানের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামটিকে অত্যাধুনিক করে গড়ে তোলা হলেও জাতীয় স্তরের কোন প্রতিযোগিতার ভেন্যু হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না এটিকে। এমনকি স্থানীয় পর্যায়েও নেই তেমন কোন বড় মাপের টুর্নামেন্টের আয়োজন। সব মিলিয়ে বলা চলে অলসই পড়ে আছে ৪৮ বছরের পুরনো এ স্টেডিয়ামটি। অঢেল টাকায় জন্ম থেকেই অলস পড়ে আছে বরিশালের আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম।

ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ২৯ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর ১৯৬৬ সালে এ স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। তৎলীন জেলা প্রশাসক মাহফুজুর রহমান ছিলেন এর মূল উদ্যোক্তা। ১৯৭০ সালে স্টেডিয়ামটিতে বাউন্ডারি ওয়াল দেয়া হয়। পরবর্তীতে এর ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বর্তমানে সেখানে একত্রে ৩৫ হাজার দর্শকের খেলা দেখার মতো ব্যবস্থা আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ভেন্যু হিসাবে এ স্টেডিয়ামকে ব্যবহারের জন্য  ২০০৫ সালে ২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এর গ্যালারী, পাঁচতলা প্যাভিলিয়ন ও মিডিয়া সেন্টার, ফ্লাড লাইট, স্টেডিয়ামের মূল ফটক, পাবলিক টয়লেট ও সংযোগ সড়ক। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে এর আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়। উইকেট ও আউট ফিল্ড নির্মাণসহ অল্প কিছু কাজ সে সময় বাকি থাকলেও আন্তর্জাতিক আসরের ভেন্যু থেকে বরিশালের নাম বাদ পড়ায় তা আর করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক আসর বসবে এমন প্রত্যাশায় ২০০৯ সালে এ স্টেডিয়ামে উন্নত মানের উইকেট এবং আউট ফিল্ড গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়েছিল। উইকেট ও আউটফিল্ড বানানোর কাজ কিছুটা এগোলেও আবারো ভেন্যুর তালিকা থেকে বাদ পড়ে স্টেডিয়ামটি। এভাবে দফায় দফায় বিপুল টাকা খরচ করা হলেও তা কোন কাজে আসছে না। আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসাবে এ স্টেডিয়ামকে ব্যবহার না করায় হতাশ বরিশালের ক্রীড়া প্রেমীরা।

ক্ষুব্ধ ক্রীড়া সংগঠকরা জানান, যেসব স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা হচ্ছে তার চেয়ে বরিশাল স্টেডিয়ামের মান অনেক উন্নত। অথচ জাতীয় লিগের কোন খেলা পর্যন্ত এ স্টেডিয়ামে দেয়া হয় না। ক্রীড়া সংস্থার নেতারা জানান, অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম থাকা সত্ত্বেও শুধু ভাল আবাসিক হোটেল ও যাতায়াত সুবিধা পর্যাপ্ত নয় এমন অজুহাতেই টানা প্রায় ১০ বছর ধরে বঞ্চিত বরিশাল স্টেডিয়াম।

অথচ আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ের কোন ম্যাচ এ স্টেডিয়ামে না দেয়ায় স্থানীয় খেলাধুলায়ও ভাটা নেমেছে। বড় খেলার আসর না বসলে তরুণ কিশোররা খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হয় না। বরং যারা খেলাধুলার সাথে যুক্ত তারাও দূরে সরে যায় বলে মনে করেন এখানকার সংগঠকরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল আলম গুলজার এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বর্ণালী সময়ে বইছে অথচ বরিশাল এর অংশ হতে পারছে না। সাবেক ক্রিকেটার ও জেলা ক্রিকেট উন্নয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য  ইব্রাহিম কামাল মনে করেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার অভাবে বরিশালে খেলাধুলায় মন্থর গতি নেমে এসেছে।  বরিশালে আন্তর্জাতিক মানের খেলা হলে তৃণমূল খেলোয়াড়দের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকরা আগ্রহী হতো। খেলার মান বেড়ে যেতো।  নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হতো।

জেলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ফজলে রাব্বী মাহামুদের অভিমত আন্তর্জাতিক ম্যাচ বরিশালে অনুষ্ঠিত হলে জুনিয়র খেলোয়াড়রা উদ্বুদ্ধ হতো। তারা আরো আগ্রহী হয়ে নিয়মিত মাঠে আসতো প্রাকটিস করার জন্য। বিভাগীয় সদরে এতো পুরনো মানসম্মত স্টেডিয়াম অবহেলিত পড়ে আছে। অথচ অবহেলার কারণেই এখন থেকে নতুন কোন ভাল খেলোয়াড় বের হচ্ছে না।

বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন খান আলো অবশ্য জানান, স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও বরিশালে পাঁচ তারকা বা তিন তারকা মানের হোটেল না থাকায় আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভেন্যুর বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছে। তবে গত ১০ বছরে যে কয়টি হোটেল তৈরি হয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি বিমান চালু হয়েছে তাতে আগামীতে তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভেন্যু হিসাবে আশা করতে পারেন বলেও মত দেন তিনি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে