বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৩:১৮

ভালোভাবে ফিরতেই বিশ্রাম নেয়া

ভালোভাবে ফিরতেই বিশ্রাম নেয়া

স্পোর্টস ডেস্ক: ১০ বছরে মাত্র ৫১ টেস্ট খেলা সাকিব আল হাসান কেন ছুটি নিলেন! গত দু’দিনে এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই! আর উত্তরটাও যে যার মতো করে তৈরি করে নিচ্ছেন। খুব কমসংখ্যক ক্রিকেটভক্তই তার টেস্ট বিশ্রামের বিষয়টি ভালোভাবে নিয়েছেন। যারা মেনে নিতে পারেননি তাদের বড় একটি অংশের ধারণা বিশ্বের নানা প্রান্তে টি-টোয়েন্টি লীগ খেলতেই তার এই টেস্ট থেকে বিশ্রাম চাওয়া! কারো কারো মতে টাকার জন্য লালায়িতা সাকিব, আবার কারো বা ধারণা তিনি আসলে টেস্ট খেলতেই চান না! বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষের আড্ডাতেও প্রশ্ন ও বিস্ময়ের শেষ নেই। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেই হয়তো সাকিব গতকাল দুপুরে সংবাদমাধ্যমের অনুরোধে সাংবাদিকদের সামনে প্রাণ খুলে কথা বললেন নিজের বাসায়। স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন বেশি টেস্ট খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেই তার এ বিশ্রামে যাওয়া! আর এই ছুটিটাও তার প্রাপ্য। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: ছুটির কারণটা যদি নিজেই বলতেন?
সাকিব: আমি মনে করি আমার আরও বেশ অনেকদিন খেলা বাকি আছে। যদি আমি ভালোভাবে খেলতে চাই তাহলে এই বিশ্রামটা আমার জরুরি। আমি চাইলেই খেলতে পারি। কথা হচ্ছে, আপনারা কি চান যে আমি আরও ৫-৬ বছর  খেলি নাকি ১-২ বছর? আমি  যেটা অনুভব করি, এভাবে খেলতে থাকলে ১-২ বছরের বেশি খেলতে পারবো না। এইভাবে খেলার চেয়ে না খেলাই ভালো। তাই  যতদিন  খেলবো, সে পর্যন্ত যেন ভালোভাবে খেলতে পারি-সেটিই লক্ষ্য আমার। এই বিরতি পেলে শারীরিকভাবে যতটা না, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ফিরলে, হয়তো পরের ৫ বছর আমার টেনশন ছাড়া  খেলা সম্ভব হবে। বিরতিটা নেয়ার কারণ, আমার যেন ওই অনুভূতি থাকে যে, আমি খেলবো ও ভালো করবো। খেলার প্রতি ভালোবাসা থাকলে বাড়তি কিছু করার আগ্রহ থাকে।
প্রশ্ন: ছুটি চেয়েছিলেন ছয় মাসের কিন্তু পেয়েছেন মাত্র দুই টেস্টের।
সাকিব: দু’টি টেস্ট হলেও প্রায় এক মাসের একটি বিরতি পাবো। এ রকম বিরতি আমি গত ৩-৪ বছরে পাইনি। আমার জন্য এটি অনেক বড় বিরতি। আমি বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমার ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন। ৬ মাসের জন্যই আবেদন করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর দু’টি টেস্ট ম্যাচ আছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত এবারের দু’টি টেস্ট অনুমতি দিয়েছে। এরপর যখন খেলা শুরু হয়ে যাবে, দক্ষিণ আফ্রিকা যাব, বিপিএল হবে, তারপর ওই সময়টা চিন্তা করবো যে, ওই দু’টি  টেস্ট খেলব কী খেলবো না।  

প্রশ্ন: বিশ্রাম কেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নয়?
সাকিব: সীমিত ওভারের  খেলা ১ ঘণ্টার হয় বা ৩ ঘণ্টার হয়।  টেস্ট ম্যাচ ৫ দিনের হয়, প্রস্তুতি আরও ১০-১৫ দিনের হয়। সেই সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ থাকে তিন দিনের। সেই হিসাবে তো একটি  টেস্ট সিরিজ  থেকে বিশ্রাম নিলে পাওয়া যায় এক মাসের বিরতি। টি-টোয়েন্টি থেকে বিশ্রাম নিলে পাওয়া যায় ৩ দিনের বিরতি, ওয়ানডে সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিলে পাওয়া যাবে ৭ দিনের বিরতি। আমার একটু বড় বিরতি দরকার।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিকেই বেশি গুরুত্ব দেন এমন সমালোচনা আছে, সেই বিষয়ে কী বলবেন?
সাকিব: কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাই না আমি। কারণ আমার শরীর আমি বুঝতে পারি যে, কতটা ধকল যাবে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কেন বিশ্রাম নিলাম না, বাইরের টি-টোয়েন্টিতে কেন নিলাম না, এই প্রশ্ন এলে একটু অবাকই লাগে। কারণ আমি যখন বাইরের টি-টোয়েন্টি খেলি, তখন না কোনো চাপ থাকে, না ভাবনা থাকে। আমার কাছে হলিডে মনে হয়। পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও যেমন হয় তেমন আর্থিক দিকও অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
 
প্রশ্ন: টেস্ট ছেড়ে শুধু রঙিন পোশাকে খেলার পরিকল্পনা আছে কি?
সাকিব: আমার ইচ্ছা আছে, সবার পরে টেস্ট থেকে অবসর  নেবো। তার আগে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে  থেকে অবসর  নেব। কিন্তু আমার মনের কথা সবসময় সবাইকে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। আমার ভেতরে কী আছে, আমি জানি। লোকে যেমন সচেতন, আমিও সচেতন কী করলে ভালো হয়, কী করা যায়। আমি ওভাবেই  চেষ্টা করবো। আমার কাছে মনে হয়, ২-১ বছর  খেলার  থেকে ৫ বছর মন দিয়ে খেলা  বেশি জরুরি।

প্রশ্ন: দলের অন্যকেউ যদি একইভাবে আপনার মতো করে ভাবে তার প্রতি পরামর্শ কী থাকবে?
সাকিব: যদি কখনও কারও মনে হয় যে খেলা বেশি হয়ে যাচ্ছে একটি বিরতি দরকার, আমি মনে করি তাদের অবশ্যই মন থেকে বলা উচিত। এতে বরং তাদের ক্যারিয়ার আরও ভালো হতে পারে। জোর করে খেললাম, ভালো করতে না পারলে আপনারাই বলবেন আমাকে বাদ দেয়া  হোক।
প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আপনার না থাকার প্রভাব কতটা পড়বে বলে মনে করেন?
সাকিব: আমার থাকা না থাকায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ দুনিয়াতে কোনো জিনিসই কারও জন্য অপেক্ষা করে না। আমি আশা করি এবং মন  থেকে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ অনেক ভালো করবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ধারাটা অব্যাহত থাকবে। যে যাবে, সে ভালো করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সবার জন্য চ্যালেঞ্জিং।

প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যালেঞ্জিং সেই বিবেচনাতে ছুটিটাকি একটু পরে নিলে হতো না!
সাকিব: আমার কাছে যদি মনে হতো যে পরে নিলেও চলবে, তাহলে পরেই নিতাম। আমার কাছে মনে হলো, এখনই বিশ্রামের উপযুক্ত সময়। এ কারণেই নেয়া। সবার মনের সঙ্গে সবার মিল থাকবে না, মতের সঙ্গে মতের মিল হবে না- এটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে কতদিন ধরে ভেবেছেন?
সাকিব: বেশ কিছুদিন ধরেই মনে হচ্ছে। এটা আমি আগে আলোচনাও করেছি। এমনকি এই টেস্ট সিরিজের আগে কথা বলে রেখেছি। স্ত্রীর সঙ্গে এবং আমার কাছের যারা আছে, সবাই জানত যে, আমি এ রকম চিন্তা করছি।

প্রশ্ন: ছুটির সময়টুকু কিভাবে কাটাবেন?
সাকিব: পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া। মাঝে-মধ্যে ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকা খুবই জরুরি। চেষ্টা থাকবে যত বেশি বাইরে থাকতে পারি। যেহেতু ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি আছে,  কয়েকদিন পর সেটা প্রস্তুতি শুরু করবো।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে