শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৭:১১

এর ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পান না হান্নান

এর ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পান না হান্নান

স্পোর্টস ডেস্ক: রেকর্ড কখনো আনন্দদায়ী স্মৃতি, কখনো সেটি যাতনার। কাল কলকাতা টেস্টের প্রথম বলেই সুরঙ্গা লাকমলের বলে আউট হওয়া লোকেশ রাহুলও নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবেন রেকর্ডটা। ম্যাচের প্রথম বলে আউট হয়ে ভারতীয় ওপেনার নাম তুলেছেন রেকর্ড বইয়ের পাতায়। টেস্টের এত দীর্ঘ ইতিহাস তুলনা করলে খুব বেশি ব্যাটসম্যান একেবারে ম্যাচের প্রথম বলেই আউট হননি।

রাহুলের আগে পাঁচ ভারতীয় ওপেনারের এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। টেস্ট ইতিহাসেই মাত্র ২৭ ব্যাটসম্যানের আছে এই অভিজ্ঞতা। অবশ্য এর মধ্যে এক সুনীল গাভাস্কারই ম্যাচের প্রথম বলে আউট হয়েছেন তিনবার। যেটি বিশ্বরেকর্ড। আর এই বিশ্বরেকর্ডে বাংলাদেশের হান্নান সরকার গাভাস্কারের পাশে বসেছেন। টেস্ট ম্যাচের প্রথম বলে তিনিও আউট হয়েছেন তিনবার। গাভাস্কার তবুও ভিন্ন প্রতিপক্ষ, ভিন্ন বোলারের শিকার। কিন্তু হান্নান ফিরেছেন একই বোলারের বলে!

পেড্রো কলিন্স যেন পেয়েই বসেছিলেন হান্নানকে। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা টেস্টের প্রথম বলেই ক্যারিবীয় বাঁহাতি পেসারের বলে হান্নান বোল্ড কোনো রান না করেই। ২০০৪ সালের মে-জুনে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে কলিন্সের বলে আবারও একই পরিণতি—শূন্য রানে এলবিডব্লিউ! হান্নানের কাছে ভুলে যাওয়ার মতো হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবশ্য স্মরণীয় হয়ে আছে সেই টেস্ট। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে টেস্টটা ড্র করেছিল হাবিবুল বাশারের দল। একই সফরে স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে একই দৃশ্য—আবার কলিন্সের বলে আউট হান্নান!

তিনবার ম্যাচের প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট হয়ে গাভাস্কারের পাশে নাম উঠে গেল হান্নানের। গাভাস্কারের পাশে নাম কে না লেখাতে চায়। কিন্তু তাই বলে এমন রেকর্ডে! হান্নান পারলে মুছেই দিতেন রেকর্ডটি। রাহুল আউট হওয়ার পর আবারও এই তালিকা নিয়ে নাড়াচাড়া হলো। আর তাতে অনিবার্যভাবে এল হান্নান ও গাভাস্কারের প্রসঙ্গও।

এবার বিপিএলে বাংলাদেশ দলের এই সাবেক ওপেনার আছেন রাজশাহী কিংসের সঙ্গে। আজ দুপুরে যখন রেকর্ডটি তাঁকে আবারও মনে করিয়ে দেওয়া হলো, মুখে তাঁর ম্লান হাসি, ‘প্রতিটি খেলোয়াড়ের ভালো-খারাপ সময় থাকে। একইভাবে আমারও খারাপ সময় গেছে। এটা মনে পড়লে আসলে খারাপ লাগে। এভাবে আউট হওয়াটা অবশ্যই দুঃখজনক। তবে একজন খেলোয়াড়ের জীবনে এটা ঘটতেই পারে। সুনীল গাভাস্কারের মতো কিংবদন্তির জীবনেও ঘটেছে। তাঁর সঙ্গে নিজেকে তুলনা করছি না। হ্যাঁ, অবশ্যই এটা আমার জন্য কষ্টের ঘটনা।’

টানা ব্যর্থতায় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা কঠিন। হান্নানও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তখন। দুর্দান্তভাবে তাঁর ফিরে আসা আর হয়নি। ২০০৪ সালেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা থেমে যায় ১৭ টেস্ট ও ২০ ওয়ানডে খেলা হান্নানের। কিন্তু কেন কলিন্সের বলে বারবার একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি, সেটির উত্তর খুঁজে পান না আজও, ‘যখন খেলেছি, তখন অস্বাভাবিক বা ভৌতিক কিছু মনে হয়নি। কিন্তু ঘটে যাওয়ার পরে ভেবেছি একই সংস্করণে, একইভাবে একই বোলারের বলে বারবার কেন একই ঘটনা ঘটেছে!’

যে বোলার অনপনেয় দাগ লাগিয়ে দিয়েছেন তাঁর ক্যারিয়ারে, সেই কলিন্সের সঙ্গে হান্নানের দেখা হয়েছিল ২০০৮ সালে লন্ডনে। যদিও দুজনই তখন পেছনে ফেলে এসেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অধ্যায়। স্মৃতি হাতড়ে হান্নান বললেন, ‘২০০৮ সালে নটিংহ্যামশায়ারে একটি লিগ খেলতে গিয়ে লন্ডনে ওর সঙ্গে একদিন দেখা। হঠাৎ আমাকে দেখে চেনেনি। যখন নাম বললাম, তখন চিনেছে!’

হান্নান-কলিন্স—কেউ কাউকে ভোলার কথাও নয়। এই রেকর্ড একজনের কাছে মহা আনন্দের, আরেকজনের কাছে যে ভীষণ যন্ত্রণার!-প্রথম আলো
এমটি নিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে