স্পোর্টস ডেস্ক : লম্বা সাক্ষাৎকার৷ সময় হচ্ছিল না৷ অবশেষে নিজেই ফোন করে, সময় ঠিক করে বসে গেলেন ২৪ ঘণ্টার চ্যানেলের স্টুডিওয়৷ আসন্ন দুর্গোৎসব থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ, এডিলেডে নৈশালোকে গোলাপি বলে টেস্ট ক্রিকেট, অ্যাটলেটিকো দ্য কলকাতার নতুন মরশুম, চাওয়া–পাওয়া, মমতা ব্যানার্জির অনুরোধে বিশেষ টেলিভিশন শো, পেলের কলকাতায় আসা, এমন নানা প্রসঙ্গ ছুঁয়ে গেলেন একের পর এক৷
খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে৷ সি এ বি–র অন্যতম যুগ্ম সচিবের চেয়ার থেকে উঠে এলেন মনে হচ্ছে?
সৌরভ গাঙ্গুলি: হঁ্যা, প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সি এ বি-তে দিতে হয়৷ ১৩ মাস আগে যখন এই দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন মনে হয়নি এতটা পরিশ্রম করতে হবে৷ সি এ বি-র গঠনতন্ত্র এমন যে, সভাপতি, সচিব, কোষাধ্যক্ষ— এঁদেরই কাজ করতে হয়৷ মানে নিচের তলায় যাঁরা আছেন, তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷
এরই মাঝে তো নিয়ে ফেললেন আরও দুটো দায়িত্ব৷ এক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অনুরোধে বিশেষ টিভি প্রোগ্রাম৷ দুই, ত্রিপুরার উঠতি ক্রিকেটারদের কোচিং?
সৌরভ গাঙ্গুলি: প্রথমে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নিই৷ ত্রিপুরা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সৌরভ দাশগুপ্ত আমার খুব বন্ধু৷ প্রথম যখন দলীপ ট্রফি খেলেছিলাম, তখন ও ছিল আমার রুমমেট৷ ওর অনুরোধ ফেলা যায়? বছরে দু’বার যাওয়ার ইচ্ছা আছে৷ ঠিক কোচিং নয়, একটু গাইড করে দেওয়ার মতো ব্যাপার আর কী৷ এবার ওই নতুন টিভি প্রোগ্রাম৷ মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করা যায়? ওই প্রোগ্রামে আমার ভূমিকা অ্যাঙ্করের৷ জি বাংলায় দেখানো হবে৷ সরকারের আশা, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অনুপ্রাণিত হবেন৷ সময় আমার সত্যিই নেই৷ কিন্তু, যদি দেখি নিজের শহর, রাজ্য উপকৃত হচ্ছে, বিনিময়ে আমাকে যদি সময় খরচ করতে হয়, তা হলে তো এগিয়ে যাওয়াই উচিত৷
সময় পাবেন?
সৌরভ গাঙ্গুলি: আমি তো সব ক’টা এপিসোডে অ্যাঙ্করিং করব না৷ প্রথম ৭-৮টায় করব৷ তারপর শেষের দিকে আবার৷
হ্যাঁ, মাঝে তো অ্যাটলেটিকো নিয়ে ব্যস্ততাও থাকবে?
সৌরভ গাঙ্গুলি: সে তো থাকবেই৷ শচীন তেন্ডুলকার-শেন ওয়ার্ন মিলে যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে আমেরিকায়, সেখানে যেতে হবে৷ নভেম্বরে যাব এডিলেডে নিউজিল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ডে অ্যান্ড নাইট টেস্ট ম্যাচ দেখতে৷ এম সি সি-র ক্রিকেট কমিটির সদস্য হিসেবে৷ তাই, দৌড়ের মধ্যেই থাকতে হবে৷
ফিরছি মমতা ব্যানার্জি পরিকল্পিত ওই টিভি প্রোগ্রামে৷ অনেকে মনে করছেন, আপনি বোধ হয় তৃণমূলে যোগ দেবেন৷ সত্যি?
সৌরভ গাঙ্গুলি: এত দিনেও চিনলেন না? রাজনীতি ইজ নট মাই কাপ অফ টি৷ মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি অনুরোধ করেছেন সহযোগিতা করার জন্য৷ আমি হঁ্যা বলে দিয়েছি৷ এর সঙ্গে তৃণমূলে যোগদানের ব্যাপারটা আসছে কোথা থেকে?
জনতার মুখ আটকে রাখা যায়?
সৌরভ গাঙ্গুলি: তা ঠিক৷ তবে, এক সময় বলা হয়েছিল আমি সি পি এমে যোগ দিচ্ছি৷ মাঝে রটল বি জে পি-তে যাওয়ার ব্যাপার৷ এখন আবার তৃণমূলে৷ এটাও দেখবেন, অচিরে বুদ্বুদের মতো মিলিয়ে যাবে৷
কেউ কেউ তো বলছেন, এখন নয়, ভবিষ্যতে আপনি নাকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন?
সৌরভ গাঙ্গুলি: ওরেব্বাস! আমার সে–সব পরিকল্পনা নেই৷ ভাবছিই না৷
শচীন-ওয়ার্নদের সঙ্গে কত বছরের চুক্তি?
সৌরভ গাঙ্গুলি: ওরা চাইছে ৩ বছর৷ তখন আমার বয়স হবে ৪৫৷ আমি তাই শচীনকে বলেছি, আগে একটা বছর খেলে নিই৷ তার পর দেখা যাবে৷ নতুন করে ট্রেনিং শুরু করেছি৷ গায়ে, হাতে–পায়ে জোর বাড়াতে হবে তো? এর পর নেটে ব্যাটিং শুরু করব৷ ছয়টয় মারতে গেলে গায়ে শক্তি থাকা চাই৷
আমেরিকায় খেলতে যাওয়ার ব্যাপারটা কি শুধুই টাকা রোজগার, নাকি পেলে যেভাবে কসমসের হাত ধরে ওদেশে ফুটবলের প্রসার ঘটিয়েছিলেন, শচীনদের উদ্যোগ তেমনই?
সৌরভ গাঙ্গুলি: টাকার অঙ্কটা একটা ফ্যাক্টর৷ তবে, আমি চাইছি, আবার দুনিয়ার সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে৷ খেলার মজাটা টাকা দিয়ে মাপা যায় না৷
পেলের কথাই যখন উঠল, তখন অক্টোবরে পেলের কলকাতায় আসার ব্যাপারে যদি কিছু বলেন।
সৌরভ গাঙ্গুলি: পেলের খেলা আমি দেখিনি৷ কলকাতায় যখন এসেছিলেন ৭৫ সালে, তখন আমার বয়স ২৷ মারাদোনার খেলা দেখেছি৷ এত বড় ফুটবলার আমি দেখিনি৷ পেলের কাছেও জানতে চাইব, মারাদোনার চাইতেও তিনি নিজেকে বড় ফুটবলার বলেন কি না৷ কোনও দিন ভাবিনি ওর সঙ্গে পাশাপাশি বসে খেলা দেখব৷
তার মানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আপনি কমেন্ট্রি বক্সে থাকবেন না?
সৌরভ গাঙ্গুলি: সময় কোথায়? নতুন যে দায়িত্ব নিচ্ছি, তার প্রত্যেকটাতেই সময় দিতে হয়৷ ফলে, সবার আগে বলি দিতে হল কমেন্ট্রিকে৷ স্যাড, কিন্তু কিছু করার নেই৷ অন্তত এখন যা পরিস্থিতি, তাতে টানা কমেন্ট্রি করতে হলে, অন্য কোনও কাজ করতে পারতাম না৷
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ কে জিতবে?
সৌরভ গাঙ্গুলি: মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু শ্রীলঙ্কার থেকে শক্তিশালী দল৷ এবং ওরা সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশে হারেনি৷ বিরাট কোহলিরা যদি জিততে চায়, তা হলে সত্যিকারের ভাল খেলতে হবে৷
আপনি কি দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটু এগিয়ে রাখতে চাইছেন?
সৌরভ গাঙ্গুলি: এ বি ডি’ভিলিয়ার্সরা সত্যিই ভাল দল৷ স্টেন, মর্কেলরা তো থাকবেই, ওরা এগিয়ে থাকবে ইমরান তাহিরের জন্য৷ খুব ভাল লেগ স্পিনার৷ আলগা বল দেয় না৷ উইকেটে বাউন্স থাকলে, ইমরান কিন্তু উইকেট পাবে৷ অনেক বোলার আছে ৪টে ভাল বল করার পর, ২টো আলগা বল দিয়ে ফেলে৷ ইমরান তাহির কিন্তু সত্যি সত্যি এক উঁচুমানের লেগ স্পিনার৷ টেস্ট সিরিজে ওদের ক্যাপ্টেন হিসেবে থাকবে হাসিম আমলা, যে কিনা আমাদের ভারতে সেঞ্চুরি, ডবল সেঞ্চুরি করেছে৷ ক্যাপ্টেন হিসেবে যদি একই রকম ভাবে রানের মধ্যে থাকে, তাহলে তো দক্ষিণ আফ্রিকার সুবিধা হবে৷
ভারতের কি হরভজনকে নিয়ে ৩ স্পিনারে খেলা উচিত?
সৌরভ গাঙ্গুলি: এটা ডিপেন্ড করবে উইকেটের ওপর৷ প্রথম টেস্ট মোহালিতে৷ সবে মরশুমের শুরু৷ মনে হয় না, বল এখন থেকেই স্পিন করবে৷ মোহালির উইকেটে জোরে বোলাররা সুবিধা পাবে৷ পেয়েও থাকে৷ ইশান্তের না থাকাটা একটা ফ্যাক্টর হয়ে যাবে৷ ফলে, প্রথম টেস্টের জন্য প্রথম ১১ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন৷
শুনলাম, আপনি ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধ টি ২০ ম্যাচে নেলসন ম্যান্ডেলার এক বক্তৃতার ভিডিও চালাবেন৷ তাতে তো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররাই উদ্দীপ্ত হবে বেশি৷ ধোনিরা চাপে পড়ে যাবেন তো?
সৌরভ গাঙ্গুলি: নেলসন ম্যান্ডেলা হলেন সব মানুষের নেতা৷ শুধু আমলারা কেন, তাঁর কথা শুনে ভারতীয়দেরও উদ্দীপ্ত হওয়া উচিত৷ আপনার কথা শুনে নতুন একটা আইডিয়া মাথায় এল৷ তা হলে, মহত্মা গান্ধীর কোনও বক্তৃতা সম্প্রচার করা উচিত একই সঙ্গে৷ জমবে ব্যাপারটা৷ তা হলে, গান্ধীজির লেকচারের টেপ জোগাড় করার জন্য উঠেপড়ে লাগতে হবে৷
সম্প্রতি স্টিভ ওয়া বলেছেন, বিরাট কোহলির নেতৃত্বে আপনার ছায়া আছে।
সৌরভ গাঙ্গুলি: (হেসে) ক্রিকেট জীবনে যে লড়ালড়ি ছিল, তা এখন নেই৷ এখন আমরা বন্ধু৷ স্টিভও খুব বড় জাতের ক্রিকেটার৷ অস্ট্রেলিয়ান আইকন৷ দেখা কম হয়৷ তবে, ক্রিকেটার হিসেবে তো স্যালুট করতেই হয়৷
স্টিভ ওয়া, রিকি পন্টিংরা চাইছেন, টেস্ট ক্রিকেট থেকে টস উঠিয়ে দিতে৷ আপনার মত?
সৌরভ গাঙ্গুলি: আমি তা চাই না৷ কারণ, অনিশ্চয়তা ব্যাপারটা ক্রিকেট খেলার অঙ্গ৷ যদি আয়োজক দেশ জেনে যায়, টস করতে হবে না, তা হলে উইকেটের চরিত্র হিসেবে প্রথম ১১ বেছে নিতে সুবিধা হবে৷
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি