সব রকম সুবিধাই খুঁজছে ভারত
অগ্নি পান্ডে, বেঙ্গালুরু থেকে: ‘সেলফি লে রে…’। ঠিক যেন সল্লুভাইয়ের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’–এর গানের লাইন! প্রথম টেস্টে বিপক্ষকে দুরমুশ করে দিল খুশ ভারতীয় অধিনায়কের। বৃহস্পতিবারের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস সেরে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে বিরাট কোহলি নয় নয় করে ১৭টি সেলফি তুললেন অনুরাগী–অনুরাগিণীদের সঙ্গে! বোঝাই যায়, না, কোথাও কোনও বিরক্তি নেই বিরাটের। তিনি সব আবদার মিটিয়ে দিলেন ভক্তকুলের।
শুধু ভারত–অধিনায়কই নন। একে একে বেশির ভাগ ক্রিকেটারই আবদার মেটালেন ভক্তদের। ‘ফিল গুড’ হাওয়া এখন দেশের প্রধান শাসক দলের শিবির ছেড়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলে বইছে। বইবে না–ই বা কেন? দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি–২০ ও একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজ হেরে যাওয়ার পর মোহালির প্রথম টেস্ট তিন দিনে উড়িয়ে দেওয়ার আনন্দ তো থাকবেই। সেটাই দেখা গেল রাহুল দ্রাবিড়ের শহর বেঙ্গালুরুতে।
টানা পাঁচ দিন পরে ভারতীয় দলের সঙ্গেই সূর্যের প্রবেশ গার্ডেন সিটিতে। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বেলায় রোদ উঠল। আকাশ পরিষ্কার হল। পিচের মুখও দেখা গেল। কী হবে বেঙ্গালুরুর বাইশ গজ? ভারতীয় দলের টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী মাঠে পৌঁছেই ছুটলেন পিচ দেখতে। সঙ্গী বোলিং কোচ ভরত অরুণ। বেশ কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারও পিচ দেখতে ছুটলেন। গেলেন না ভারত অধিনায়ক। পিঠে কিটস নিয়ে পিচ এড়িয়ে সোজা নিজেদের নেটে। ভর্তি সাংবাদিক থাকার জন্যই কি কোহলি গেলেন না পিচ দেখতে? হয়ত সেটাই। চেন্নাই থেকে উড়ে এসেছেন এন শ্রীনিবাসনের কাছের লোক (নিন্দুকেরা বলে থাকেন) পি আর বিশ্বনাথন। কিন্তু তিনি তো কাজই করতে পারেননি। বৃষ্টির বদান্যতায়। মুখে তিনি নাকি ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, স্পোর্টিং উইকেট হবে। র্যাঙ্ক টার্নার বলতে যা বোঝায়, তা নয়। কিন্তু পিচ দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, কিছু মরা ঘাস রয়েছে। তবে ভারতীয় দল কি সহজে ছেড়ে দেবে ঘূর্ণ পিচ না হলে?
নিশ্চয়ই নয়। কেনই বা ছাড়বে? ঘরের সুবিধে পৃথিবীর প্রতিটি দলই নিয়ে থাকে। এতে কোনও অন্যায় নেই। তবে তা দৃষ্টিকটু না হলেই হল। রেকর্ড বলছে, শেষ দুটো টেস্ট চিন্নাস্বামীতে জিতেছে ভারত। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখানে টেস্ট জিতেছে। এবার খেলতে আসার আগে যেবার শেষ টেস্ট খেলতে এসেছিল প্রোটিয়ারা। ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে ফর্মে–থাকা ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘দেখুন, প্রথম টেস্ট জেতায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা মানসিক দিক থেকে এগিয়ে। আর পরিসংখ্যান এক্ষেত্রে কোনও ফ্যাক্টর নয়। এটা সম্পূর্ণ নতুন টেস্ট শুরু হতে চলেছে। তবে আমাদের বিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। ওরা যথেষ্ট শক্তিশালী দল। আমাদের লক্ষে্য স্থির থাকতে হবে। পাশাপাশি টেস্ট জিততে হবে। বিপক্ষ কেমন দল, ওরা কী কী করতে পারে— তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। যতক্ষণ আমরা সিরিজে ফোকাসড থাকব, ততক্ষণ আমাদের টেস্ট জেতার সম্ভাবনা বজায় থাকবে।’
ব্যক্তিগতভাবে পুজারা চিন্নাস্বামী নিয়ে আবেগতাড়িত। কারণ, এই মাঠেই পাঁচ বছর আগে তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়। ‘২০১০–এ আমি অভিষেক করেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। খুব ভাল স্মৃতি রয়েেছ। তার পর ২০১২ সালে এখান নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলি। সতি্য, টেস্টের উপযুক্ত জায়গা। এই স্টেডিয়াম আমার অন্যতম সেরা মাঠ। এখানে ভাল করতে চাই।’ মোহালিতে দারুণ ব্যাট করেছেন। স্পিনিং ট্র্যাকে। কারণ নিজেই বাতলে দিলেন পুজারা। ‘ভাল খেলার কারণ হল অভিজ্ঞতা। ঘরোয়া ক্রিকেেট স্পিনিং পিচে বড় বড় রান করেছি। যা সাহায্য করে ভাল েখলতে। জানি, কীভাবে গেমপ্ল্যান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, জানি কীভাবে স্পিনকে সামলাতে হয়।’
নিজের ব্যাটিং স্টান্সের রদবদল ঘটিয়েছেন। বাবা অরবিন্দ পুজারা ও রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা বলে। ‘শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগে বাবা এবং রাহুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ব্যাটিং স্টান্সের বদল ঘটাই। যার ফলে উপকৃত হচ্ছি। আগে ব্যাটিং স্টান্সে দু’পায়ের মাঝের ফাঁকটা বড় ছিল। এখন সেটা খানিকটা কমিয়েছি। যার ফলে খেলতে সুবিধেই হচ্ছে। স্টান্স নিতে সুবিধে হচ্ছে।’
সবরকম সুবিধেই খুঁজছে বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় শিবির। তামিলনাড়ুর নিম্নচাপ যেন কেটে যায়। বেঙ্গালুরুতে যেন বৃষ্টি থেমে যায়। চিন্নাস্বামীর বাইশ গজ যেন মনোমতো হয়। আবার যেন আমলাবাহিনীর ওপর স্পিন–হামলা করা যায়। সব যেন নিজেদের আয়ত্তে থাকে। স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু রাতে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বেঙ্গালুরুর আকাশে মেঘ কালো করে এসেছে। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষমতা তো আর ভারতীয় দলের নেই। তা যে কারুরই নেই।
১৩ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস