সাকিব মেসেজটি দিলে সবাই মানবে
স্পোর্টস ডেস্ক: টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকাগুলোতে এখন প্রচার হচ্ছে লাইফবয় লাইফসেভারের নতুন একটি বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনটিতে মডেল হিসেবে পারফর্ম করেছেন বিশ্ব-ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। এর পেছনের গল্প জানাচ্ছেন আতিফ আতাউর
বিজ্ঞাপনটিতে বিভিন্নজনকে এক ঘণ্টায় তুমি কি বাঁচাতে পারো প্রশ্নটি করা হচ্ছে। তাতে প্রথম মেয়েটির ভাবনা শেষ হতে না হতেই একজন উত্তর দেয়, মোবাইলের ব্যাটারি বাঁচাতে পারব। আরেকজন জানায়, চা না খেয়ে অনেক টাকা বাঁচাতে পারি। আরেকজন মেয়ে জানায়, রোদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারি। এমনি ফ্যান অফ রেখে ইলেকট্রিসিটি বাঁচাতে পারব, পুরো পৃথিবী বাঁচাতে পারব, গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচাব, বাইকের তেল বাঁচাতে পারি-এমন নানা উত্তর দেয়। এ সময় আর কী বাঁচানো যায় জানতে চাইলে ভাবনায় বুঁদ হয়ে যায় তারা। এমন সময় সাকিব আল হাসান বের হয়ে জানান, চাইলে এক ঘণ্টায় বাঁচাতে পারো কোনো শিশুর জীবন।
যে জন্য এমন গল্প
লাইফবয়ের সঙ্গে লাইফসেভার প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তরুণদের যোগদানে উৎসাহিত করার জন্য এই বিজ্ঞাপনের এমন গল্প বেছে নেওয়া হয় বলে জানান বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা আদনান আল রাজিব। প্রোগ্রামটি ১ ঘণ্টার। এতে অংশ নিতে আগ্রহীদের রেজিস্ট্রেশনের আহ্বান জানানো হয়। তরুণদের মধ্যে শিশুর জীবন বাঁচানোর বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করাই প্রোগ্রামের লক্ষ্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই এর প্রধান প্রতিপাদ্য, সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞাপনের শেষ অংশে।
শুটিং যেখানে
এক মিনিটের এই বিজ্ঞাপনের শুটিং হয়েছে রাজধানীর উত্তরার আইইউবিএটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ও মোহাম্মদপুরের একটি মাঠে। পুরো বিজ্ঞাপনের দৃশ্য ধারণে সময় লেগেছে তিন দিন।
পেছনের কারিগর
বিজ্ঞাপনটির গল্প লিখেছেন ফারজানা তন্বী ও রিহান খান। এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ছিলেন তৌফিক মাহমুদ, কপি সুপারভাইজার ছিলেন আরিফুর রহমান। বিজ্ঞাপনটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা আদনান আল রাজিব। এর দৃশ্যগুলো ক্যামেরায় ধারণ করেছেন সিনেমাটোগ্রাফার মোরশেদ বিপুল। ভয়েস দিয়েছেন সামিউর রহমান। সাউন্ড ডিজাইন করেছেন রিপন নাথ। পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন ফারজানা সান। বিজ্ঞাপনটির এজেন্সি হাউস অ্যাডকম লিমিটেড ও প্রোডাকশন হাউস রানআউট ফিল্মস লিমিটেড।
যে কারণে সাকিব
এই বিজ্ঞাপনের জন্য সাকিবকে মডেল হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে নির্মাতা আদনান বলেন, সাকিব বাংলাদেশের এক নম্বর তারকা এবং এর পাশাপাশি তিনি পণ্যটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরও। তাঁর মাধ্যমে মেসেজটি দিলে মানুষ বেশি আকৃষ্ট হবে। তার কারণ দেশজুড়েই সাকিবের অসংখ্য ভক্ত আছে। তাঁর কাছ থেকে কিছু শুনলে তা মেনে চলার একটি অভ্যাস গড়ে উঠবে তাঁর ভক্তদের মধ্যে। সাকিবকে নিয়ে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? আদনান বলেন, সাকিব ইজ অলওয়েজ কো-অপারেটিভ। তাঁর সঙ্গে আমি এর আগেও অনেক কাজ করেছি। ওর সঙ্গে আমার একটি বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শুট করতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
ফর্ম ডকুমেন্টারি
ক্লায়েন্ট ও নির্মাতাদের পরিকল্পনা ছিল, বিজ্ঞাপনটি দেখে যেন মনে না হয় এটা সাজিয়ে-গুছিয়ে শুটিং করে বানানো কোনো কিছু। দর্শক যেন দেখে বুঝতে পারে, বিভিন্নজনকে হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করা হয়েছে ব্যাপারটা যে এক ঘণ্টায় তুমি কী করতে পারো। এর জন্য সহ-মডেল বাছাই করা হয় আলাদা করে। এরপর তাদের নিয়ে উত্তরার আইইউবিএটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে শুটিং করা হয় বিজ্ঞাপনের।
রি শুটের বিজ্ঞাপন
এখন লাইফবয়ের যে বিজ্ঞাপনটি প্রচার হতে দেখা যায়, সেটি আসলে রি শুটের বিজ্ঞাপন। প্রথমে প্রচলিত বিজ্ঞাপনের মতো করে ঝকঝকে একটি বিজ্ঞাপন বানিয়ে ক্লায়েন্টের হাতে তুলে দেন আদনান। কিন্তু বেঁকে বসে তারা। তারা জানায়, তারা একটি ডকুমেন্টারি টাইপ বিজ্ঞাপন বানাতে চায়। অনেক খেটেখুটে তৈরি করে দ্বিতীয় এই বিজ্ঞাপন চিত্র। তার জন্য খরচও হয় দ্বিগুণ। ক্লায়েন্ট দ্বিতীয়বার নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্রটি দেখে অনেক খুশি হয়।
হঠাৎ বৃষ্টির বিড়ম্বনা
শুটিংয়ের সব কাজ মোটামুটি শেষ ততক্ষণে। মাত্র দুটি শট বাকি। ক্যামেরা নিয়ে বসে আছেন মোরশেদ বিপুল। সাকিবও প্রস্তুত শট দেওয়ার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করেই শুরু হয় বৃষ্টির বিড়ম্বনা। বৃষ্টি দেখে নির্মাতার মাথায় হাত। সাকিব কাল চলে যাবেন আমেরিকা। তাঁর স্ত্রী শিশির সন্তানসম্ভবা। তাহলে শুটিং? শেষমেশ অবশ্য বৃষ্টি থেমে যায়। সচল হয় ক্যামেরা। শেষ দুটি দৃশ্য নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন আদনান।
সাকিবের সঙ্গে হাত ধোয়ার প্রশিক্ষণ
বিজ্ঞাপনটির পরের একটি দৃশ্যে দেখা যায়, সাকিব আল হাসান বাচ্চাদের হাত ধোয়া শেখাচ্ছেন। এই দৃশ্যের শুটিং করার সময় বাচ্চারা অনেক মজা পেয়েছে। সাকিবকে এত দিন তারা টিভিতে আর খেলার মাঠেই দেখে এসেছে। শুটিংয়ে তাঁকে কাছাকাছি দেখে এবং তাঁর কাছ থেকে হাত ধোয়া শিখে অনেক খুশি ছিল তারা।-কালের কন্ঠ
১৩ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস
�