সেই ছক্কাই কাল হলো দু’দেশের
স্পোর্টস ডেস্ক: মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ।
স্বাগতিকদের হয়ে ওপেনিং করেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। তবে প্রথম ওভারে জিম্বাবুয়ে পেসার তিনাশে পানিয়াঙ্গারা বেশ টাইট বোলিং করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রথম ৫ বল থেকে রান দিয়েছিলেন মাত্র ১টি। বাউন্স এবং ফুল লেন্থ, স্লোয়ারে ব্যস্ত রাখেন দুই ব্যাটসম্যানকে। তবে কিছুটা মোড ঘুরে শেষ বলে গিয়ে একটি বাউন্ডারি হাঁকান ইমরুল কায়েস।
দ্বিতীয় ওভারও প্রায় একই দশা। প্রথম ৫ বল থেকে একটি নো বলসহ ২ রান। ফ্রি হিট পেয়ে তামিম ইকবাল ওটাকে ছক্কায় পরিণত করেন। তৃতীয় ওভারে আর পানিয়াঙ্গারাকে ছেড়ে কথা বলেননি তামিম। তৃতীয় বলেই মারলেন বাউন্ডারি।
এরপর একই ওভারের শেষ বলে আরও একটি বাউন্ডারি। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ওভার বাউন্ডারি। এবার ছক্কা হাঁকালেন তামিম ইকবাল। মাদজিবাকে পেয়ে যেন নিজের ওপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিলেন তামিম ইকবাল। তৃতীয় বলে ২ রান নিলেও চতুর্থ বলে এসে সেই নিয়ন্ত্রণহীন শট খেলতে গিয়েই লং অফে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন চিগুম্বুরার হাতে। ১৫ বলে ২১ রান করে সাজ ঘরে ফিরেন তামিম ইকবাল।
এর কিছুক্ষণ পরই তামিমেরে পথে পা বাড়ান ইমরুল কায়েসও। ৫ম ওভারের ৫ম বলে তেন্দাই চিসোরোর একটি বল ইমরুল কায়েস স্কয়ার ড্রাইভ করতে যান অফ সাইডে। কিন্তু তার বলটি উঠে গেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শন উইলিয়ামস ক্যাচ লুফে নেন।
বাংলাদেশর রান তখন ৩৫। এরপর এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে জুটি বাধতে মাঠে নামেন মুশফিকুর রহিম। পারলেন না মুশফিক। দ্রুতই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। মাত্র৮ বলে ৯ রান করেন মুশফিক। বাংলাদেশের রান এ সময় ৫৯।
মুশফিক আউট হয়ে যাওয়ার পর মাঠে নামেন সাব্বির।১৮ বল মোকাবেলায় ১৭ রান তোলেন সাব্বির। এরপরই গ্রায়েম ক্রেমারের একটি বল রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে প্যাডে লাগান তিনি। এরপরই জোরালো আপিল ওঠে। আম্পায়ারও আঙ্গুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। এরপর এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে জুটি বাধেন নাসির হোসেন।
দু’জন মিলে ১৫ রানের জুটি গড়ার পর পানিয়াঙ্গারার উঁচু হয়ে আসা একটি বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কোনায় লাগান নাসির। সেই নবল গতি পরিবর্তণ করে সোজা আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন নাসির। ৫ বল খেলে রান করলেন মাত্র ৩। তার আউটে সত্যি সত্যি বিপদে পড়ে গেলো বাংলাদেশের ব্যাটিং।
ব্যাটিংয়ে শেষ ভরসা হিসেবে মাঠে নামলেন মাহমদুল্লাহ রিয়াদ। মাঠে নেমেই পানিয়াঙ্গারাকে পর পর দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। ওভারের শেষ বলেও শট খেলেন তিনি। কিন্তু কভার অঞ্চলে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন লুক জংউই। অসাধারণ একটি ক্যাচ ছিল সেটি।
এরপর এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে জুটি বাধেন মাশরাফি। আগের কয়েকটি ম্যাচের মত আশা ছিল কিছু রান করবেন মাশরাফি। কিন্তু নেভিল মাদজিভার বলে স্রেফ স্ট্যাম্পই উড়ে গেল মাশরাফির। ১ বল খেলে কোন রান করেই ফিরতে হলো মাশরাফিকে। ১২২ রানে পড়ে গেল বাংলাদেশের ৭ উইকেট। আক্ষরিক অর্থেই চরম ব্যটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
তবে এনামুলের রানের ওপর ভর করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২০ ওভা্রে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান। অর্থাৎ জিম্বাবুয়েকে ১৩৬ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে একের পর এক ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দেন জিম্বাবুয়েন ব্যাটসম্যানরা। অতিথিদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন রেগিস চাকাভা আর সিকান্দার রাজা। বাংলাদেশের হয়ে বোলিং শুরু করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য মেলে টাইগার দলে। আল আমিনের করা প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৫ রান করা সিকান্দার রাজা। পরের বলেই উইলিয়ামসকে বোল্ড করেন আল আমিন।
এর পর বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার দ্বিতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দিয় ফিরে গেছেন রেগিস চাকাভা। রান আউট হয়ে ফিরে যান ক্রেইগ আরভিন। লুক জংউই কাভারে ঢেলে দিয়েই একটি রান নিতে চেয়েছিলেন, রান নেওয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরে ফিরে যান তিনি। ততক্ষণে অনেক দূর এগিয়ে আসা আরভিন আর ফিরতে পারেননি। মাশরাফি বিন মুর্তজার থ্রো ধরে নাসির স্টাম্প ভেঙে দেন। এর পর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়েনরা ।
তবে সব নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে শেষ ওভারে ১৮ রানের কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে দিয়ে ১ বল আর ৩ উইকেট থাকতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি–টোয়েন্টি জিতে নেয় সফরকারীরা। নাসিরের এক ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার হাঁকিয়ে সেই সমীকরণ মিলিয়ে দিয়েছেন ১৯ বলে ২৮ করা মাদজিভা।
প্রসঙ্গত: সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি ছয় পিটিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ একাদশ :
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, আরাফাত সানি, আল-আমিন হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান।
জিম্বাবুয়ের একাদশ :
এল্টন চিগুম্বুরা (অধিনায়ক), সিকান্দার রাজা, তিনদাই চিসোরো, নেভিল মাদজিভা, ম্যালকম ওয়ালার, গ্রায়েম ক্রেমার, ক্রেইগ আরভিন, লুক জংউই, রেগিস চাকাভা, তিনাশে পানিয়াঙ্গারা ও শেন উইলিয়ামস।
১৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর