মানসিক বিধ্বস্ত জিদান, প্যারিসে খেলতে চান না লুইজ
স্পোর্টস ডেস্ক : এক বছরের মধ্যেই পরপর দুটি জঙ্গি হামলা। গোটা শহর যখন শোকে মুহ্যমান, তখনই উঠে আসছে একের পর এক তথ্য। যার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে ফ্রান্স–জার্মানি প্রীতি ম্যাচ। যদি জঙ্গিরা প্ল্যানমাফিক কাজ করতে পারত, তবে ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়াতে পারত। আমেরিকার একটি সংবাদপত্রের দাবি, যারা প্যারিস আক্রমণের সঙ্গে জড়িত, তাদের একজনের সঙ্গে ছিল ফ্রান্স–জার্মানি ম্যাচের টিকিট।
আপাদমস্তক বিস্ফোরকে ঠাসা একটি জ্যাকেট পরে স্তাদ দ্য ফ্রান্সে ঢুকতে চেয়েছিল সে। কিন্তু গেটেই তাকে আটকান এক নিরাপত্তারক্ষী। বাধা পেয়ে একটু দূরে গিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয় সে। ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান বহু মানুষ। এর কিছু পরেই স্টেডিয়ামের পাশেই নিজেকে উড়িয়ে দেয় আরেক জঙ্গি। এর পর নিকটবর্তী ম্যাকডোনাল্ডসের দোকানের সামনে তৃতীয় জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটায়। গোটা ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক নিরাপত্তারক্ষীর।
খেলতে চান না লুইজ: চেলসি ছেড়ে এক বছর আগেই প্যারিস সাঁ জাঁয় যোগ দিয়েছেন ডেভিড লুইজ। সাহসী ডিফেন্ডার হিসেবেই তার নামডাক রয়েছে। কিন্তু প্যারিসের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে সেই লুইজই আর ফিরতে চাইছেন না ক্লাবে। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের নিরাপত্তার স্বার্থেই তার এই অনীহা।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্যারিসের আমার বান্ধবী, পরিবার এবং বন্ধুরা রয়েছে। ওরা ভীষণ ভীত এবং দুঃখিত। আমি ফিরে যাব কি না ঠিক করে উঠতে পারিনি। অবশ্যই প্যারিসের হয়ে খেলা আমার দায়িত্ব, কিন্তু ফেরা না–ফেরা আমার ওপর নির্ভর করছে।’ আগামী ২১ তারিখের পি এস জি–র পরবর্তী ম্যাচ লোরিয়েন্তের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ব্রাজিলের হয়ে পেরু ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লুইজ। তিনি ফিরবেন কি না জানা যাবে মঙ্গলবারের পর।
কোচরা ঘটনার ব্যাপারে জানতেন? ফ্রান্স–জার্মানির খেলার প্রথমার্ধেই দু’বার শোনা গেছিল বিস্ফোরণের আওয়াজ। দর্শক, খেলোয়াড় বা কোচ, কেউই আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি খবরে আলোড়ন পড়ে গেছে গোটা বিশ্বে। তাদের দাবি, বিরতির সময়ই দুই কোচ জোয়াকিম লো এবং দিদিয়ের দেশঁকে হামলার ব্যাপারে জানানো হয়।
তবে মনঃসংযোগ নষ্ট হতে পারে ভেবে দু’জনেই এই কথা খেলোয়াড়দের কাছে চেপে যান। ম্যাচ হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে ফেরার সময়ই ফুটবলাররা ঘটনার কথা জানতে পারেন। টানেলের মনিটরে চোখ রেখে দেখেন স্টেডিয়ামের বাইরে হামলার দৃশ্য। ফ্রান্সের খেলোয়াড় গ্রিজম্যানের বোন বাতাক্লঁ কঁসর হলের অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানকার ঘটনা দেখেই গ্রিজম্যান বোন–কে ফোন করার চেষ্টা করেন। তৎক্ষণাৎ না পেলেও তিন ঘণ্টা পরে গ্রিজম্যান টুইট করে জানান, তার বোন ভালই আছেন।
শোকবার্তা প্লাতিনির: বর্তমানে ফিফা–কাণ্ডে তিনি জড়িয়ে গেলেও একসময় ফ্রান্সের হয়ে বহু খেতাব এসেছে মিশেল প্লাতিনির হাত ধরে। নিজের দেশকে এই অবস্থায় দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি তিনিও। একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এই অন্ধ বর্বরতার বিরুদ্ধে গভীর ধিক্কার জানাচ্ছি এবং মৃতদের পরিবারের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করছি।’
মানসিক বিধ্বস্ত জিদান: দীর্ঘদিন পর শনিবার নিজের প্রিয় জায়গা ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফিরেছিলেন ডেভিড বেকহ্যাম। উদ্দেশ্য ছিল, জাতিসংঘের হয়ে শিশুদের সাহায্যার্থে একটি চ্যারিটি ম্যাচ খেলা। একই ম্যাচে খেলার কথা ছিল ফ্রান্স তারকাদ্বয় জিনেদিন জিদান এবং প্যাট্রিক ভিয়েরারও। কিন্তু নিজের দেশকে আক্রান্ত হতে দেখে শেষ মুহূর্তে দু’জনেই যাওয়া বাতিল করেন। ম্যাচের পর যা নিয়ে বেকহ্যাম বলেন, ‘আমি জিজুর অবস্থা বুঝতে পারছি। কেন ও খেলতে এলো না সেটা অনুধাবন করা খুব একটা কঠিন নয়। ও খেলবে বলে কথা দিয়েছিল।
কিন্তু প্যারিসে যা হয়েছে তা দেখে ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।’ বেকহ্যাম এও জানান, প্যারিসের ঘটনার পর ম্যাচ বাতিল করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু ছোট ছোট শিশুদের কথা ভেবে খেলা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন। বেকহ্যাম, যিনি নিজেও প্যারিস সাঁ জাঁ–তে কিছু সময় খেলেছেন, জানান, ‘প্যারিস সবসময়েই আমার অন্যতম প্রিয় শহর। প্রচুর স্মৃতি রয়েছে। ইংল্যান্ডের হয়ে ১০০তম ম্যাচ ওখানেই খেলেছি। ঘটনার আকস্মিকতা দেখে আমি স্তম্ভিত।’
শিক্ষা নিচ্ছে বেলজিয়াম: প্যারিসের ঘটনার দু’দিনও কাটেনি। কিন্তু সাবধানের মার নেই। ফের এই হামলা হতে কতক্ষণ? ফলে স্পেনের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচের আগে ঢালাও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে বেলজিয়াম। পুলিস নয়, ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করার দায়িত্ব নিতে নামানো হয়েছে সেনাকে। মঙ্গলবার ম্যাচের দিন স্টেড ডে বাউডিনে দেখা যাবে প্রচুর সেনাকে। প্যারিসে হামলার চক্রান্তে জড়িত থাকার অপরাধে রবিবারই আটক করা হয়েছে তিন ব্যক্তিকে। তাই ফ্রান্সের ঘটনা ব্রাসেলসে হতে দিতে নারাজ বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ।
১৬ নভেম্বর ২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস