সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৪:৩৮

টি-টোয়েন্টির কথা শুনলে টি-ব্যাগের কথা মনে পড়ে!

টি-টোয়েন্টির কথা শুনলে টি-ব্যাগের কথা মনে পড়ে!

ইকবাল খন্দকার: পাড়ার খেলার মাঠের কোণায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ বিপিএল নিয়ে কথা উঠল। আমাদের মধ্যে একজন ছিল ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। সে বিপিএল-এর ফরম্যাট বোঝাতে গিয়ে টি-টোয়েন্টি নিয়ে কথা বলতে লাগল। আমাদের ঠিক মাঝখানে বসা ছিলেন জুলহাশ ভাই। তিনি বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করলেন। আমরা ধরেই নিলাম ক্রিকেটের আলোচনা তার ভালো লাগছে না। তাই রাগ করে চলে যাচ্ছেন। তাকে ডাক দিয়ে থামালাম। বললাম, ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা শুনতে ভালো লাগছে না, রাগ উঠে গেছে, এটা বললেই পারেন। এভাবে চলে যাওয়ার কী আছে? জুলহাশ ভাই বললেন, আমারে ভুল বুঝতাছোস ক্যান? তোরা যা মনে করতাছোস, ঘটনা কিন্তু তা না। আমি চইলা যাইতেছি অন্য কারণে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অন্য কারণটা কী বলেন তো! জুলহাশ ভাই বললেন, এইখানে যেই টি-টোয়েন্টি নিয়া কথা উঠল, আৎকা আমার মনে পইড়া গেল তোর ভাবীর কথা। আমি হেসে বললাম, ও, বুঝতে পেরেছি। ভাবীও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেট পছন্দ করেন। জুলহাশ ভাই মৃদু ঝাড়ি মারলেন, ধুর, সেইরকম কিছু না। ‘টি’টোয়েন্টির কথা শুইনা তোর ভাবীর কথা মনে পড়ার কারণ হইল সে আমারে ‘টি’ ব্যাগ নিয়া যাইতে কইছিল। এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠল, টি-টোয়েন্টির কথা শুনলে টি-ব্যাগের কথা মনে পড়ে, বিশ্বকাপের কথা শুনলে নিশ্চয়ই চায়ের কাপের কথা মনে পড়ব। জুলহাশ ভাই কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেলেন। অতএব জুলহাশ ভাইয়ের ঘটনাও এখানেই শেষ। তবে মোটামুটি একই ধরনের একটা ঘটনা ঘটল আমার আরেক বন্ধুর ক্ষেত্রে। সে বলল, টি-টোয়েন্টির কথা শুনলেই নাকি তার প্রাক্তন প্রেমিকার কথা মনে পড়ে। আমি জানতে চাইলাম, টি-টোয়েন্টির সঙ্গে তোর প্রাক্তন প্রেমিকার সম্পর্ক কী? বন্ধু বলল, সম্পর্ক তেমন কিছু নেই। আসলে সে একটা ফোর টোয়েন্টি ছিল তো। তাই টি-টোয়েন্টির কথা শুনলেই ঠোঁটের আগায় ফোর টোয়েন্টি চলে আসে। আর মাত্র দু-চার দিনের অপেক্ষা। তারপরই শুরু হবে বিপিএল। তবে বিপিএল শুরু হতে দু-চার দিন বাকি থাকলেও ঘরে ঘরে ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আমার এক প্রতিবেশী বলল, বিপিএলের প্রভাবে আমার ঘরে যেন সুখের স্বর্গ নেমে এসেছে। চিন্তা করতে পারবেন না আমার বউ কী পরিমাণ আদর-যতেœ রেখেছে আমার মা-বাবা-ভাই-বোনকে। অথচ অন্য সময় সে তাদের কাউকে পাত্তাই দিতে চায় না। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে প্রতিবেশীর কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে না পেরে অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। ভদ্রলোক বুঝিয়ে বললেন, আমার বউ সারা বছরই টিভিতে বিদেশি সিরিয়াল দেখে। আমি তাকে দুই দিন আগে বললাম, বিপিএল শুরু হচ্ছে, অতএব কদিন তুমি সিরিয়াল দেখতে পারবে না। আমি খেলা দেখব। বউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, অসম্ভব। আমি সিরিয়াল মিস করতে পারব না। আমি বললাম, তাহলে এক কাজ করো। ফ্যামিলিতে মা-বাবা-ভাই-বোনসহ আরও যারা আছে, সবার ভোট নেওয়া হোক। তারা যদি সিরিয়ালের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলে সিরিয়াল চলবে। আর যদি বিপিএলের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলে আমি খেলা দেখব। বিশ্বাস করবেন না ভাই সাহেব, এটা বলার পর থেকেই বউ ফ্যামিলির সবার সেবা যতœ শুরু করে দিল। তার একটাই উদ্দেশ্য- তার দলে সবাইকে টানা। যাতে সবাই সিরিয়ালের পক্ষে ভোট দেয়। কী বলব ভাই, এই কদিন ধরে সে এত মজার মজার খাবার রান্না করছে যে, আমার ভয় হচ্ছে এই খাবার খেয়ে আমি নিজেও পটে যাই কিনা। মানে আমিও বিপিএল বাদ দিয়ে সিরিয়াল দেখতে শুরু করি কি না। আমার এক ছোট ভাই বলল, ভাই, আমি চাই এবারের বিপিএলটা অনেক বেশি জমজমাট হোক। কারণ খেলা যদি জমজমাট না হয়, তাহলে আবার আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। আমি তাজ্জব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তার মুখের দিকে। বলে কী ছেলেটা! ছোটভাই বলল, পুরো ঘটনা খুলে না বললে বুঝবেন না ভাই। চেহারা সুন্দর বলে মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন নাকি? খুলে বলছি। কিছুদিন আগে একটা খেলা হয়েছিল। খেলাটা এত ঠাণ্ডা ছিল যে, আমি নিজেও ঠাণ্ডা হয়ে বসে খেলা দেখছিলাম। নো নড়াচড়া। এতে মশারা ভালোই সুযোগ পেয়েছিল। কামড়িয়ে ডেঙ্গুজ্বর বাধিয়ে দিয়েছিল। তাই আমি চাই বিপিএলটা উত্তেজনাপূর্ণ হোক। একটু পরপর চার ছক্কা মারুক। যাতে ‘চার’ ‘ছক্কা’ ‘আউট’ ইত্যাদি বলে বলে লাফিয়ে উঠতে পারি। বেশি বেশি লাফালে গায়ে মশা বসারও সুযোগ পাবে না, ডেঙ্গুও হবে না। আরামসে খেলা দেখব। -সূত্র রকমারি রম্য পাতা বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে