অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ফিরতি ম্যাচ, পরীক্ষা হবে নিরাপত্তার
স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফিরতি ম্যাচ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল গতকালই ঢাকায় পৌঁছেছে। সব ঠিক থাকলে আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেলে শুরু হবে ম্যাচটি। প্রশ্ন হলো র্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল দলের ভালো করার সম্ভবনা কতটুকু?
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ যত কারিগরি দিয়েই খেলুক এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফুটবলারদের পায়ে অলৌকিক কিছু ভর করলেই কেবল অন্যথা হবে। এ দেশের দুর্ভাগা ফুটবলে সেটা কোনো কালেই হবে না। এমন একটা ম্যাচের আগের দিন যারা জাতীয় দলের দায় উপেক্ষা করে টাকার জন্য ক্লাবে ছুটে যায়, সেই ফুটবলারদের সঙ্গী হবে অক্ষমতা। দলের প্রতি টান যখন এতই ঠুনকো তখন অক্ষমের আর্তিও শোনেন না ফুটবল দেবতা। ম্যাচের ফল আগে থেকেই জানা। আজ পরীক্ষা হবে শুধু নিরাপত্তার। এই পরীক্ষায় উতরালেই বাংলাদেশের বড় জয়।
দলের এ চেহারাটার প্রতিফলন ঘটেছে ফাবিও লোপেজের সংবাদ সম্মেলনে। তাজিকিস্তান-কাণ্ডের পর বাংলাদেশ দলের এই ইতালিয়ান কোচ প্রথমে হাসিখুশি চেহারা নিয়ে হাজির হয়ে পরে নানা তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে নিজেকে নামিয়ে নিয়েছেন সাধারণের কাতারে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের প্রশ্ন শুনেই তিনি একপশলা হাসির ফুরসত করে দিয়েছেন, ‘আমি সব ম্যাচই জিততে চাই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জেতার জন্য খেলব।’ এই কথা শুনে না হেসে উপায় কী! তিনি তাজিকিস্তানে গিয়েছিলেন জেতার কথা বলে আর ফিরেছেন ৫-০ গোলের হার নিয়ে। হারার পর যুক্তি দিচ্ছেন, তাজিক হ্যাটট্রিকম্যান ‘জালিলভকে ওই অঞ্চলে লেভেনদোস্কি বলে ডাকে।’ এই লেভেনদোস্কি তো ঢাকা মাঠেও এসেছিলেন গত জুনে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি জিততে জিততে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। এবার যুক্তি দিলেন, ‘ওই ম্যাচে ওদের চারজন ফুটবলার আসেনি।’ এই ইতালিয়ানের কুযুক্তিতে তাজিকিস্তান পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়ার মানে!
এবার সত্যি সত্যি কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ। ফাবিও লোপেজ একটু দমে গিয়ে বলছেন, ‘এই সময়টা আমার খেলোয়াড়দের জন্য সহজ নয়। গত দুই মাসে তারা পরিশ্রম করেছে।’ তারপর ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ‘আমি মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় পেয়েছি দল নিয়ে কাজ করার জন্য। এখানে এসেছি আমি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে একটা ভালো দল তৈরির জন্য। তাই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যখন আমি দায়িত্ব নিই তখনই বাছাই পর্ব থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ দল।’ আসলে গ্রুপিং হওয়ার পরপরই তো বাংলাদেশ ছিটকে গেছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ফুটবল-নিয়তি এমনই। এর মধ্যেও বৃত্ত ভেঙে বের হওয়ার নিত্য চেষ্টা চলছে, ডাচ কোচ পাল্টে আনা হয়েছে ইতালিয়ান কোচ।
কোচ বদল হয়েছে তবে মাঠের খেলা বদলায়নি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও নিয়তি বদলাবে না। পার্থের ম্যাচে ৫-০ গোলে হারার পর দেশের মানুষ বিমর্ষ হয়নি। এশিয়ান ফুটবলের গালিভারের সঙ্গে লিলিপুটের ব্যবধান পাঁচ গোলের হতেই পারে। ওই লড়াইয়ের কথা শোনা গেছে দলের অনেকে কাছ থেকে। মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট যেমন চাইছেন, ‘তাজিকিস্তানে আমরা যে ফুটবল খেলেছি সেটা আমাদের মান নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আমরা সেটা প্রমাণ করতে চাই। হয়তো হারব, তবে হারার মধ্যেও যেন আমাদের সর্বোচ্চ লড়াইয়ের চিত্রটা ফুটে ওঠে।’ লড়াইয়ের সব কৌশল ডিফেন্সকে ঘিরেই। কোনোভাবেই অস্ট্রেলিয়াকে জায়গা দেওয়া যাবে না, ওখানে তাজিকিস্তান ম্যাচের মতো ভুল করা যাবে না। এমন কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে বাংলাদেশ দল। আর অস্ট্রেলিয়া? ঢাকায় না খেলার অনেক ওজর-আপত্তির পর শেষ পর্যন্ত খেলতে আসছে। আসলে ফিফার চোখরাঙানি উপেক্ষা করতে না পেরে বাধ্য হয়েছে আসতে। কয়েক দিন সিঙ্গাপুরে ট্রেনিং করে গতরাতে ঢাকা পৌঁছেছে, আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলেই ড্রেসিংরুম থেকে সোজা বিমান ধরতে যাবে এয়ারপোর্টে। আসলে ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়া তাদের ফুটবলারদের মস্তিষ্কে এমনই অনিরাপদ হিসেবে এই দেশকে চিত্রিত করেছে, তারা কেবল ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা সারতেই আসছে।
তারা নিরাপত্তা ইস্যুটাকে এমন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে যেন হুট করে পুরো ভিন্ন এক দেশে যাওয়া, সেখানকার জল-হাওয়ায় একটুখানি অভ্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। খেলতে নামলেই জিতবে, এ রকমই আত্মবিশ্বাস অস্ট্রেলিয়ার। তা-ই হবে হয়তো। বাংলাদেশ ফুটবল হয়তো হারবে। তবে জেতার সুযোগ আছে পুরো বাংলাদেশের। এই একটি ম্যাচই যেন সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে পারে নিরাপদ বাংলাদেশের বার্তা। অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ানরাও এখানে আসতে পারে, খেলতেও পারে। দু-একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলেও সবার জন্যই নিরাপদ এ দেশ।
১৭ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ
�