স্পোর্টস ডেস্ক : ভরতে শুরু করেছে ঢাকা মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি। তারজালের ওপাশে পাহারায় বাংলাদেশ পুলিশের দুই নারী সদস্য।
ঠিক পাহারা নয়, জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখছিলেন আর যেন আক্ষেপ ঝরে পড়ছিলো একজনের চোখেমুখে। সত্যটাও জানা গেলো। ছিলেন ক্রিকেটার। তাই পুলিশের চাকরি পেয়ে বাংলাদেশের ম্যাচে ‘ডিউটি’ নিতে একবারও ভুল করেননি তিনি। কিন্তু আক্ষেপটা নিয়তি হয়ে গেছে।
নাম রুনা ইসলাম। পুলিশের কনস্টেবল। এক দৃষ্টিতে দেখছিলেন জিম্বাবুয়ের অনুশীলন। দুই বছর আগে ক্রিকেট ছেড়েছেন। কিন্তু নেশা কাটেনি। হয়তো নিজেকে অনেক বড় অবস্থায় দেখার সুযোগ হারানোর ব্যর্থতা তাকে কষ্ট দেয়। স্টেডিয়ামে আসেন ক্রিকেটের তাড়নায়। কিন্তু তাতে মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়।
জানালেন, দুই বছর হলো পুলিশের চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু মিরপুরে বাংলাদেশের ম্যাচ হলে প্রতিটি ম্যাচে নিরাপত্তার দায়িত্বে এসেছেন। অসুস্থতা হোক, পারিবারিক সমস্যা হোক; কখনই মাশরাফি বিন মুর্তজা-সাকিব আল হাসানদের ম্যাচ সরাসরি দেখা থেকে বিরত থাকেননি। তিনি বললেন, ‘দুই বছর চাকরি করছি, প্রতিটি ম্যাচেই এখানে এসেছি। টিভিতে দেখলে দেখাই যায়। কিন্তু সুযোগ থাকতে কেন টিভিতে দেখবো!’
চাইলেই তো আর এখানে ডিউটি পাওয়া সম্ভব না। শুরুতে তাই অনুরোধ করতে হয়েছে কর্মকর্তাদের কাছে। এখন তারাও জানে রুনার ক্রিকেট প্রীতি। তাই আর নতুন করে বলতে হয় না। রুনা বলছেন, ‘শুরুর দিকে রিকোয়েস্ট করে নেওয়া লাগতো। তারা এখন বুঝে ফেলেছে। তাই আমার নাম এমনিতেই থাকে। আমি আসি, ভালো লাগে। আবার খারাপও লাগে খেলা ছেড়েছি বলে। ’
কিশোরগঞ্জের এই মেয়ে স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। কলেজে থাকতে সেটাকে আরও আঁকড়ে ধরেছেন। ছিলেন বাঁহাতি পেসার। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট যখন সুদিনের পথে হাঁটছে তখন রুনার সামনেও সুযোগ ছিলো। দূর্ভাগ্য, পরিবারই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়!
রুনার ভাষায়, ‘আমি ক্রিকেট খেলি সেটা পরিবার চায় না। বারবার সরিয়ে এনেছে। চেষ্টাও কম করিনি। শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য ছাড়তেই হয়েছে। এই যে আপনাকে বলছি তাতেও খবর ছাপা হলে তারা রাগ করে কি না আমার জানা নেই। ’
অল্প করে কথা বলছিলেন রুনা। অনুরোধের ঢেকি গিলে নিজের দুর্ভাগ্যের গল্প শোনাচ্ছিলেন। ভয়, প্রতিবেদন ছাপা হলে পুলিশ বিভাগ জেনে যাবে। আবার পুলিশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে না হয়! পরিবারও জেনে যাবে! তিনি বলেন, ‘এখন যদি আমার ডিপার্টমেন্ট জেনে যায় তাহলে আবার ঝামেলা। পুলিশ বিভাগের হয়ে খেললে পরিবার জেনে যাবে, তারা আবারও আপত্তি করবে। ’
খুব চাপাচাপি করেও তাই নিজের সেরা বোলিং ফিগার নিয়ে মুখ খুললেন না রুনা ইসলাম। বরং বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতেই আগ্রহী তিনি। দলের কোন ক্রিকেটার ভালো, কার কোথায় সমস্যা সবকিছু নিয়েই রুনার বিশ্লেষণ বেশ ভালো। সবচেয়ে ভালো লাগে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। শুরুতে বাংলাদেশের কথা বললেও পরে স্বীকার করলেন মাশরাফিকে দেখতেই ম্যাচেরদিন এখানে দায়িত্ব নেন!
মাশরাফির টানেই স্টেডিয়ামে চলে আসেন এই তরুণী। তিনি বললেন, ‘উনাকে (মাশরাফিকে) খুব ভালো লাগে। তার কারণেই আসি। যতদিন খেলবেন ততদিন আসবো। ক্রিকেটও উনার কারণেই খেলেছি। ’
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের সমর্থক রুনা। তারপরও অন্য কোনো পছন্দের দল আছে কি না প্রশ্ন করতেই রুনার সরল উত্তর, ‘বাংলাদেশের এমন একটা দল থাকতে কেন অন্য দলকে সমর্থন করবো!’
রুনার মতো শত শত মেধাবী ক্রিকেটার হয়তো ছড়িয়ে আছে পুরো বাংলাদেশে। তৃণমূল ক্রিকেটের অবকাঠামো কতটা ভঙ্গুর তা টের পাওয়া যায় এদের ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়ার গল্প শুনলে। পারিবারিক চাপটাও আসে এসব কারণেই।
শুধুমাত্র জাতীয় দল নয়, তৃণমূল ক্রিকেটের ভিত শক্ত করার দায়িত্বটাও নিতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। সেটা করতে না পারলে একদিকে যেমন নতুন মাশরাফি-সাকিবকে পেতে অপেক্ষার বাড়বে, তেমনই সালমা খাতুন-জাহানারা আলমদের উত্তরসূরি খুঁজে না পেয়ে সমান তালে এগোতে পারবে না দেশের নারী ক্রিকেট।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস