‘অধিনায়ক হয়ে বাবার স্বপ্ন পুরণ করেছি’
স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব পাওয়া এক বছর হতে যাচ্ছে। মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এই একটা বছর সত্যিই ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিশ্বের বাঘা বাঘা দলকে হারিয়ে সিরিজ জেতার পাশাপাশি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অসাধারণ পারফর্মেন্স। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কিভাবে সামছেন এতো কিছু?
জবাবে মাশরাফি বলেন, আমি এর আগেও অধিনায়ত্ব পেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম দুই দফায় অধিনায়ক হয়ে আমি নিজেকে ফিট রাখতে পারিনি। দুবারই ইনজুরড হয়েছি, ছিটকে গেছি। এবার যখন দায়িত্ব পেলাম, আমি ঠিক করেছিলাম, একটু দূর ভবিষ্যতেও তাকাব না। প্রতিটি ম্যাচ আর সিরিজ ধরে এগোবো। নেতৃত্ব পাওয়ার পর বিশ্বকাপ নিয়েও ভাবিনি, নিজের ভবিষ্যত নিয়েও ভাবিনি। জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে ভেবেছি। খুব বাজে সময় যাচ্ছিল আমাদের গত বছর। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, জয়ে ফেরা খুব দরকার ছিল।
৫-০ তে জিতলাম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর বিশ্বকাপের আগে সব প্র্যাকটিস ম্যাচে আমরা হেরেছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস হারাইনি। কোয়ার্টার-ফাইনাল জিতলেই কিন্তু শিরোপার মাত্র ২ ধাপ দূরে থাকতে পারতাম। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি, বড় কিছু অর্জন করতে হলে বড় স্বপ্ন দেখতে হয়।
আপনার মনে আছে হয়ত, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, ‘এই বছর আমাদের অনেক বড় সিরিজ আছে। বিশ্বকাপে ভালো করলে আমরা পরের সব সিরিজেও ভালো করব।’ সেটাও সত্যি হয়েছে।
বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে তামিম অসাধারণ খেলেছে। এরপর ভারত সিরিজে তো মুস্তাফিজ চলে এলো। ওকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি, আমি বলব আমাদের ক্রিকেটের অন্যতম বড় অধ্যায়। মুস্তাফিজ আসায় আমাদের অনেক কিছু অনেক সহজ হয়ে গেছে।
পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি অধিনায়কত্বের অতিরিক্ত চাপ নেয়া প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, পরিবারকে অনেক কম সময় দেয়া হচ্ছে। মিটিং করতে হয়, কোচ-সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করতে হয়। এতে অনেক অনেক সময় লাগে। তবে আমার স্ত্রী, পরিবার সব সময়ই সমর্থন দিয়ে গেছে। কখনও অভিযোগ করেনি।
চাপ অবশ্যই আছে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা জেনেই আমি অধিনায়ক হয়েছি। চাইলে আমি অধিনায়ক না হয়ে বাকি ক্যারিয়ার নিরিবিলি খেলে যেতে পারতাম। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা আমি নিতে চেয়েছি। আমার বাবারও এতে বড় অবদান। জানি না কেন, বাবা সবসময় চেয়েছেন, যেন আমি অধিনায়ক হই। বাসায় অনেক সময়ই আলোচনা হয়েছে, আমি বলেছি নেতৃত্ব নিতে চাই না। কিন্তু বাবা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
দল যদি সফল না হতো, এত দিনে আমি হয়ত অধিনায়ক থাকতাম না। এটাও আমি জানি। সব জেনে ও মেনেই অধিনায়ক হয়েছি। সব সময়ই বিশ্বাস করি, ভাগ্য বীরদের পাশে থাকে। আমি যদি নিজের প্রতি সৎ থেকে দেশের জন্য উজার করে দেই, প্রতিদান ভালো পাবই। খারাপ সময় আসবেই, তবে নিজের কাছে যেন প্রশ্ন না থাকে।
ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে এসে নেতৃত্বটা নিয়েছিলেন, ব্যর্থতার ভয় জাগেনি?
জবাবে মাশরাফি বলেন, আমি হার পছন্দ করি না। আবার হারলেই এমন মনে করি না যে সব শেষ হয়ে গেল। নতুন উদ্যমে শুরু করি। কখনই হাল ছাড়ি না। ২০০১ সালে প্রথমবার যখন ইনজুরি হলো, লম্বা সময় মাঠের বাইরে। নড়াইলে ফিরে গেলাম। অনেকেই আমার বাবা-মা কে বলেছে, “ছেলে শেষ, আর হবে না।” ওই অপারেশন সাকসেসফুল ছিল না। তার পরও আমার নিজের ভেতর সংশয় জাগেনি। ৬ মাস আমি ঠিকমত হাঁটতে পারিনি। পা ভাঁজ করতে পারতাম না। তারপরও রাতের পর রাত পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে চেপে চেপে, ব্যথা দিয়ে দিয়ে পা ভাঁজ করার অবস্থায় এনেছি।
২০০৩ সালে যখন লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেল, ডাক্তার পরীক্ষা করে বলল, ‘তোমার তো বাঁ হাঁটুর অবস্থা আরও খারাপ।’ আমি বলে দিলাম, ‘দুই পায়ের অপারেশন করেন’। এক মাস পর বাঁ পায়ে আবার অপারেশন হলো। আমি এসবের ভেতর দিয়ে আজকের জায়গায় এসেছি। কখনই হাল ছাড়িনি। কারণ ক্রিকেটকে যেভাবে ভালোবেসেছি, তাতে আমি বুঝে গিয়েছিলাম, অন্য কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না। শান্তি পাব না। আমিও অনেক সময় নিজের যত্ন ঠিকমত করতে পারিনি, মানুষ হলে ভুল হতেই পারে। ভুল থেকে শিখেছি।
চাপটা তাই কখনও বড় করে দেখিনি। যখন বেশি চাপ মনে হয়েছে, নিজের জীবনকেই উদাহরণ দাঁড় করিয়েছি। বাংলাদেশে নেতৃত্বের কাজটা কঠিন। মানুষ দ্রুত খুশি হয়। আবার দ্রুত ভুলে যায়, আস্থা হারিয়ে ফেলে। এটা আমাদের দোষ না, ধরনটাই এ রকম। চাপ তাই সবসময়ই থাকে। চ্যালেঞ্জ দেখে কখনো পিছপা হইনি। আমি ভাগ্যবান যে বোর্ডের এবং দলের সবাইকে পাশে পেয়েছি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।-বিডি নিউজ
১৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ