সর্বকালের সেরা ফুটবল একাদশ ঘোষণা, মেসি-রোনালদোর চমক
স্পোর্টস ডেস্ক : মেসি-রোনালদো—দুজনকেই রেখেই এল ক্লাসিকোর স্বপ্নের একাদশ। মাদ্রিদের এস্তাদিও দেল হিপিওদ্রোমো। মূলত ঘোড়দৌড়ের জন্য ব্যবহৃত এই মাঠে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। চাইলে কিছুটা প্রতীকী ভেবে নিতে পারেন বিষয়টিকে।
এরপর প্রায় শত বছর ধরে তো মাঠে, মাঠের বাইরে একে অন্যের সঙ্গে স্প্যানিশ ফুটবলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ‘ঘোড়দৌড়ে’ই নেমেছে বার্সা-রিয়াল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কাল যখন এল ক্লাসিকো ইতিহাসের ২৬৩ তম ম্যাচটি খেলতে মাঠে নামবেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা, প্রেরণার ভূমিকায় থাকবে পেছনে পড়ে থাকা শত বছরের ইতিহাস।
কত ইতিহাস সৃষ্টি করা ম্যাচ, কত লড়াই, কতশত যুগস্রষ্টা খেলোয়াড়...। যুগে যুগে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে খেলে গেছেন ফুটবলের বড় বড় তারকা। এখনো খেলছেন। এদের মধ্য থেকে শুধুই সেরা এগারোজন খুঁজে নেওয়া বেশ কঠিন। এই কঠিন কাজটিই করেছে গোলডটকম। পাঠকদের ভোটে তারা নির্বাচন করেছে এল ক্লাসিকোর সর্বকালের সেরা একাদশ।
৪-৩-৩ ফরমেশনে এই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন পরিচিত মুখগুলোই। বাদও পড়েছেন অনেক ইতিহাস গড়া খেলোয়াড়। চলুন দেখে আসা যাক, অন্য সব দলকে উড়িয়ে দেওয়ার মতো হয়েছে কিনা একাদশটি -
গোলরক্ষক দিয়েই শুরু করা যাক। দুই দলের ম্যাচে যে গোলরক্ষকরাই সবচেয়ে 'নিপীড়িত'। ২৬২ ম্যাচে দুই দলের গোলরক্ষকদের মোট ৮৮৪ বার পোস্ট থেকে বল কুড়িয়ে আনতে হয়েছে। তার মধ্যেও অসাধারণ রিফ্লেক্স, ম্যাচের ফল পাল্টে দেওয়া সেভ দিয়ে কেউ কেউ নিজেদের আলাদা করে রেখেছেন।
এর মধ্যে যদি একজনের নামই বলতে বলা হয়, তবে কী হবে সেটি? চোখ বন্ধ করুন - ইকার ক্যাসিয়াসের মুখটাই প্রথম ভেসে আসবে কল্পনায়। সবচেয়ে বেশি, ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সন্ত ইকার। জামোরা-জুবিজারেতা-ভালদেসদের হারিয়ে সর্বকালের সেরা এল ক্লাসিকো একাদশের হয়ে গ্লাভস হাতে মাঠে নামার গৌরব এই সাবেক রিয়াল গোলরক্ষকের।
ডিফেন্ডার রাখা হয়েছে ৪ জন। রাইট ব্যাকে জায়গা পাচ্ছেন দানি আলভেজ। উল্টো দিকে ডিফেন্সের বাঁপাশেও পাচ্ছেন আরেক ব্রাজিলিয়ানকে - রবার্তো কার্লোস। আর রক্ষণের মূল ভিত্তি এনে দিতে থাকছেন দুই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার—কার্লোস পুয়োল ও সার্জিও রামোস। ভোটে যাঁরা দ্বিতীয় হয়েছেন সেই নামগুলো একবার দেখে নিন - ফার্নান্দো হিয়েরো, রোনাল্ড কোম্যান, জেরার্ড পিকে, মিশেল সালগাদো...
সবচেয়ে বেশি তর্ক-বিতর্ক হতে পারে মিডফিল্ডের তিনটি পজিশন নিয়ে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নষ্ট করে দিতে থাকছেন সার্জিও বুসকেটস। তিনি পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ ভোট। দলের ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে তাঁর সঙ্গী হয়ে মাঝমাঠে থাকছেন জাভি (৩২%) ও জিদান (৪৬%)। এই তিন ‘ভাগ্যবান’কে জায়গা করে দিতে বাদ পড়ে গেছেন ইয়োহান ক্রুইফ, আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, রিভালদো, মাইকেল লাউড্রপ, লুইস ফিগোদের মতো কিংবদন্তিরা। আফসোস হতেই পারে, মিডফিল্ডেই কেন দশজন খেলে না!
ফরোয়ার্ড ত্রয়ী কে হবেন, অনুমান করতে পারছেন? ফুটবলের সবুজ পিচকে সৃষ্টিশীলতায় রাঙিয়ে যাওয়া কত শত খেলোয়াড়ই তো যুগে যুগে দুই ক্লাবের হয়ে খেলে গেছেন। সর্বকালের সেরা এই একাদশের দুই উইঙ্গার নির্বাচিত হয়েছেন রোনালদিনহো ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রোনালদিনহো পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ ভোট, আর রোনালদো ৪২ শতাংশ।
এই দুজন ভোটে পেছনে ফেলেছেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, রিস্টো স্টইচকভ, হুয়ানিতো, পাকো গেন্তোদের। আর ‘ফলস নাইন’ পদ্ধতিতে মূল ফরোয়ার্ড হিসেবে কে খেলছেন সেটি এতক্ষণে অনুমান করতে পারার কথা— লিওনেল মেসি। এল ক্লাসিকোর ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা ভোট পেয়েছেন ৬৪ শতাংশ! আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ভোটে পেছনে ফেলেছেন রোনালদো নাজারিও, রাউল, পুসকাস, ইতো, কুবালাদের।
একটা বিষয়, পাঠকদের ভোটের ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়, এখানেও তাই হলো। নিকট অতীতে খেলে গেছেন বা এখনো খেলছেন এমন খেলোয়াড়ই বেশি থাকছে। এই দল যেকোনো প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সন্দেহ নেই। সবুজ মাঠে সৃষ্টিশীলতার ফুল ফোটাবে এ নিয়েও সংশয় সামান্যই। তবে ভোটে যারা বাদ পড়েছেন তাদের নিয়েও আরও এমন দুই তিনটি একাদশ গড়ে নেওয়া যাবে, যারা এই দলের সঙ্গে সমানে সমানে লড়ার ক্ষমতা রাখে।-প্রথম আলো
২০ নভেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর