সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:৪৪:৩২

মায়ের পরামর্শেই বিশ্বসেরা স্পিনার: অশ্বিনের বাবা

মায়ের পরামর্শেই বিশ্বসেরা স্পিনার: অশ্বিনের বাবা

অগ্নি পান্ডে, নাগপুর থেকে: ‘আমি আর কী বলব? আপনারাই বলুন। ও যেন এইরকম পারফরমেন্স দেশের হয়ে নিয়মিত করে যেতে পারে। যেন ওর ক্রিকেট জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ও দেশকে জেতাতে পারে। এটাই আশীর্বাদ করে থাকি আমরা সবসময়।’ ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে? জানা গেল, নাগপুরে দলকে সিরিজ জিতিয়ে ছেলে নিজেই বাড়িতে ফোন করেছিলেন। বাবা রবিচন্দ্রন বললেন, ছেলে জানতে চেয়েছিলেন, ‘বাবা, কোথায় ভুল দেখলে? কোনও ভুল কি চোখে পড়ল?’ প্রতিটি ম‍্যাচের পর নিয়মমাফিক জিজ্ঞাসা ছেলে করেই থাকেন। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা অফস্পিনার অশ্বিনের বাবা রবিচন্দ্রনকে নাগপুর থেকে মোবাইলে শনিবার দুপুরে ধরতে পেরেছিলাম। বাবা তখন চেন্নাইয়ে বাইক চালিয়ে ছেলের তৈরি করা আকাদেমিতে যাচ্ছিলেন। বললেন, আধঘণ্টা পরে আবার ফোন করতে। ঘড়ি ধরে তিরিশ মিনিট পরে ফোন করতেই ছেলে সম্পর্কে নিজের আবেগ, ভালবাসা সব কিছু উজাড় করে দিলেন গর্বিত বাবা। ছেলে তা হলে আকাদেমি তৈরি করেছেন? হাসলেন রবিচন্দ্রন। ‘হ্যাঁ, তৈরি করেছে। খুব সুন্দর নাম দিয়েছে। ‘জেন–নেক্সট’। অর্থাৎ জেনারেশন নেক্সট। পরের প্রজন্মের জন‍্য। সেটা আমি এখন দেখাশোনা করি। কারণ, কোচেরা অনেক সময় ফাঁকি দেয়। সময়মতো আসে না। অশ্বিন শহরে থাকলে দেখাশোনা করে থাকে। শহরে না থাকলে আমি দেখি। কী করব? অবসর নেওয়ার পর বাড়িতে বসে সময় কাটে না।’ বাবা রবিচন্দ্রন ছিলেন চেন্নাইয়ে দক্ষিণ রেলের অ‍্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী। নিজে মিডিয়াম পেস বল করতেন। মনে, মনে চাইতেন ছেলে ক্রিকেট খেললে যেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলে। সেইমতো ছেলেকে নিয়ে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন কোচের দরজায় ঘুরেছেন। কিন্তু এখন ছেলে তো বিশ্ব ক্রিকেটই কাঁপাচ্ছেন। হাসছেন সিনিয়র রবিচন্দ্রন। ‘আমি আর কী বলব। সবই দেখছেন। সত্যি গর্বে বুক ভরে যায়। সবচেয়ে বড় কথা সাফল‍্য পেয়ে ওর মাথা ঘুরে যায়নি। আমি আমার ছেলেকে চিনি। জানি সেটা ঘুরে যাবে না। ছোটবেলা থেকে আমি অশ্বিনকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত বিভিন্ন কোচিং ক‍্যাম্পে নিয়ে যেতাম। তারপর কাজের চাপ বাড়ায় অশ্বিনের ঠাকুর্দা নিয়ে যেতেন রোজ স্কুলের পর কোচিং ক‍্যাম্পে। আমার বাবাই মূলত একটা সময়ে অশ্বিনকে দেখভা‍ল করেছেন। বাবা রোজ টিফিন নিয়ে বসে থাকতেন অশ্বিনের স্কুলের বাইরে।’ অশ্বিনের ঠাকুর্দার বয়স এখন ৯২। চেষ্টা করেন নাতির খেলা থাকলে টেলিভিশনে চোখ রাখতে। তবে ইদানীং দেখেন না। বাড়িতে বলে থাকেন, ‘অশ্বিনকে খেলতে দেখলে টেনশন হয়।’ অনেকটা শচীনের দাদা অজিতের মতোই যেন লাগল ব‍্যাপারটা। ঠাকুর্দার সঙ্গে নিয়মিত ক্রিকেট নিয়ে কথা হয় অশ্বিনের? জানা গেল ঠাকুর্দা এখন আর বেশি কথা বলেন না। অশ্বিন বাড়িতে থাকলে সময় কাটান ঠাকুর্দা নারায়ণ স্বামীর সঙ্গে। দারুণ তথ‍্য দিলেন সিনিয়র রবিচন্দ্রন। অনেকেই এখন জানেন অশ্বিন আগে অফস্পিনার ছিলেন না। ওপেনিং ব‍্যাটসম‍্যান ছিলেন। সেই মতো নিজেকে তৈরি করছিলেন। কিন্তু সেই ছেলে ব‍্যাটসম‍্যান থেকে অফস্পিনার হয়ে গেলেন কার পরামর্শে? চমকে উঠতে হয়। মা চিত্রাদেবীর পরামর্শে! বাবা জানালেন,‘একটা সময়ে অশ্বিনের মা চিত্রাই বলেছিল ছেলেকে স্পিনার হতে। সেইমতো অশ্বিন নিজেকে তৈরি করা শুরু করে। বাকিটা তো সবাই দেখছেন।’ সত্যি, ভাবা যায় না। ক্রিকেট নিয়ে খুঁটিনাটি জানা চিত্রাদেবী এখনও চাকরি করেন। আগে করতেন হিন্দুস্তান লিভারে। তারপর কেমপ্লাস্ট হয়ে এখন কাজ করেন নবীন বিল্ডার্সে। বোঝাই যায় শিক্ষিত মধ‍্যবিত্তের সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে। অশ্বিন থাকেন বাবা–মা, ঠাকুর্দা আর স্ত্রীকে নিয়ে চেন্নাইয়ের পশ্চিম মাম্বালামে। বাবা বলছেন,‘বিয়ের পর অশ্বিনকে বলেছিলাম ওর কোনও অসুবিধে হলে আলাদাভাবে থাকতেই পারে। আমাদের কোনও অসুবিধে হবে না। জানেন, ছেলে কি বলে তা শুনে? বলেছিল,বাবা তোমরা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন আমাদের ছেড়ে আলাদা থাকবে না। আমরা সতি‍্য সাধারণ আর পাঁচটা পরিবারের মতোই থাকি। ছেলে তারকা হয়ে গেছে বলে বদলে যায়নি আমাদের জীবনদর্শন। ছেলেরও বদলায়নি।’ তারকা ছেলে চেন্নাইতে থাকলে ফোর্ড এনডেভার কিংবা হন্ডা সিটি চড়েন। না, বাড়িতে এখনও ঢোকেনি বি এম ডাব্লু অথবা মার্সিডিজ বেঞ্জ! সত্যি, অন‍্যরকম অশ্বিন। এখন তো আই পি এল দু’মরশুম খেলার পরই ক্রিকেটাররা বি এম ডাব্লু কিনে ফেলেন। নইলে নাকি ‘স্টেটাস’ থাকে না। অশ্বিনের কিন্তু সেই তকমার প্রয়োজন হয়নি। মাঠে যান বাবা খেলা দেখতে? উত্তর পেলাম,‘আগে যেতাম। এখন যাই না। ২০১১–তে অস্ট্রেলিয়াতে টেস্ট দেখতে গেছিলাম। আমি বরং এখন চেন্নাইতে রনজি দেখি। বুচিবাবু দেখি। এমনকি পাড়ায় খেলা হলেও সেটা দেখি। মাঠে অশ্বিনের খেলা দেখতে গেলে টেনশন হয়।’ অনেকক্ষণ কথা বলে একটা পরিষ্কার ধারণা তৈরি হল ইঞ্জিনিয়ার–ক্রিকেটারের পরিবার সম্পর্কে যে এরা বদলে যাননি। কারণ, উটকো বদলের মানসিকতায় বিশ্বাসী নয় অশ্বিনের পরিবার। কারণ, শিকড় থেকেই যে শিক্ষা। ৩০ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে