ধোনির নামটা মুখেই আনলেন না শেহবাগ!
অগ্নি পান্ডে, দিল্লি থেকে: ভারতীয় ড্রেসিংরুমের ঠিক নিচের গ্যালারিতে সপরিবারে তিনি, হাসছেন। ছোট্ট দুই ছেলে আর্যবীর ও বেদান্ত কখনও বাবার কাঁধে ঝুলে পড়ছে, আবার কখনও হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বিরাট কোহলির দিকে। পাশে মা কৃষ্ণা দেবী। স্ত্রী আরতি।
আরও রোগা হয়েছেন মনে হচ্ছে। মাথার চুল যেন আরও পাতলা। চোখে চশমা, গায়ে ব্লেজার। বীরু রয়েছেন নিজের মতোই। তিনি পারেন সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলতে। ঠিক যেন ব্যাটিংয়ের মতোই। হাসতে, হাসতে বলেই ফেললেন,‘আমার ৩১৯ রান যদি কোনও ধরনের ক্রিকেটে আমার ছেলেরা টপকে যেতে পারে তা হলে ওদেরকে ফেরারি গাড়ি কিনে দেব বলে ঠিক করে রেখেছি। এই কথা আমি প্রায়ই বলে থাকি ওদের।’
বীরেন্দ্র শেহবাগ বলছেন কী? হ্যাঁ, তিনি এমনই। বৃহস্পতিবার সকালে যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণ কোটলা মেতে থাকল তাকে নিয়েই। কেন না তিনি যে সবার চেয়ে আলাদা। তিনি বীরেন্দ্র শেহবাগ। তিনি যখন কিছু বলেন তা ভেতরে যা বিশ্বাস করেন সেটাই বলেন। তাই সবার নাম মুখে আনলেও মহেন্দ্র সিং ধোনির নামটাই উচ্চারণ করলেন না শেহবাগ! ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার সব অধিনায়ককে। সৌরভ, রাহুল, কুম্বলের কাছে কৃতজ্ঞ। ওদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই শচীন তেন্ডুলকারকে। আমার বাবাকে। যিনি আমাকে ক্রিকেট খেলতে দিয়েছিলেন। মনে রাখব আমার কোচ এ এন শর্মাকে। আজকে আমি যা হয়েছি তা সম্পূর্ণ ওনার জন্যই।’ কিছু করার নেই। এককালে নজফগড় থেকে দু’দু’বার বাস বদলে কোটলায় প্র্যাকটিস করতে আসা শেহবাগ যা বিশ্বাস করেন তাই বলেন। মনে হয়নি তাই উচ্চারণ করলেন না ধোনির নাম।
সেরা ছবিটা অবশ্য সকালেই হয়ে গেছিল কোটলায়। দেখা হতেই দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলেন। একজন এবার ভারতে পা দিয়েই জানিয়েছিলেন তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা। প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে কঠিন ব্যাটসম্যান হল বীরেন্দ্র শেহবাগ। ওর বিরুদ্ধে বল করতে সবচেয়ে অসুবিধে হয়েছে।’
সেই শেহবাগই বৃহস্পতিবার তাকে দেখে এগিয়ে গেলেন। উষ্ণ আলিঙ্গনে শেহবাগ ও ডেইল স্টেন! মাঠের বাইরের সেরা ছবিটা হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফিরোজ শাহ কোটলা বীরুময়। টসের ঠিক পরেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সম্মানিত করল বীরুকে। বিদায়ী সংবর্ধনা। সুদৃশ্য ট্রফি বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর তুলে দিলেন শেহবাগের হাতে। থাকলেন না ডিডিসি এ–র কোনও কর্তারা! বোর্ডের পক্ষ থেকেই দেওয়া বিদায়ী সম্মান। সংবর্ধিত হওয়ার পর শেহবাগ ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলান। ডিডিসি এ বীরুকে কোনও আলাদা করে সম্মান না জানালেও তবে কোটলার প্যাভিলিয়ন প্রান্ত ও স্টেডিয়াম প্রান্তের নাম এই টেস্ট ম্যাচ উপলক্ষে ‘বীরু ৩০৯ এন্ড’ ও ‘বীরু ৩১৯ এন্ড’ রেখেছে।
তবে এতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, শেষ মুহূর্তে স্পনসর পাওয়া যায়নি বলেই রাতারাতি শেহবাগকে এভাবে সম্মান জানাতে চেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুকুল মুদগল। চেতন চৌহানদের মাথায় কিন্তু এই ভাবনা আসেনি। মুদগলেরই মস্তিষ্কপ্রসূত।
০৪ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস