বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৫:০৬

সবচেয়ে উন্নতি করা দলের নাম বাংলাদেশ: কপিল দেব

সবচেয়ে উন্নতি করা দলের নাম বাংলাদেশ: কপিল দেব

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ সত্যিই দারুণ খেলেছে। দারুণ বলতে, বিশ্বকাপের সব দলকে যদি আমরা দেখি তাহলে বাংলাদেশই একমাত্র দল, যারা নিজেদের খেলাটাকে ওপরে নিয়ে গেছে আগের সময়ের তুলনায়।

কপিল দেবকে যেখানেই সাংবাদিকরা পাচ্ছেন ঘিরে ধরছেন। সেই একই প্রশ্ন, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ-সেই ১৯৮৩-কে তিনি কিভাবে ফিরে দেখেন পুরনো দিনগুলোকে। আর তাই এসব গতানুগতিকতার ভিড়ে কাল বাংলাদেশি কয়েকজন সাংবাদিক যখন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলেন, তখন দেখা গেল তিনি দারুণ আগ্রহী। আমাদের আলোচনায়ও ১৯৮৩ এলো; কিন্তু তার আগে বাংলাদেশ  নিয়ে এমন মুগ্ধতা দেখালেন যে তাঁকে আর বলা হলো না যে বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সে বাংলাদেশে হুলুস্থুল হচ্ছে। কচুকাটা চলছে কোচিং স্টাফের। আর অদ্ভুত একটা ব্যাপার, তাঁর মনে হয় বাংলাদেশে ফুটবল এখনো দারুণ জনপ্রিয়। নিজের সময়ে বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতাতেই হয়তো...

প্রশ্ন : এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে কেমন দেখলেন?
কপিল : বাংলাদেশ সত্যিই দারুণ খেলেছে। দারুণ বলতে, বিশ্বকাপের সব দলকে যদি আমরা দেখি তাহলে বাংলাদেশই একমাত্র দল, যারা নিজেদের খেলাটাকে ওপরে নিয়ে গেছে আগের সময়ের তুলনায়। আমার কাছে এটাকে দারুণ ব্যাপার মনে হয়। নতুন একটা দল যখন এগিয়ে যায়, তখন সেটা ক্রিকেটের জন্যই উল্লেখযোগ্য একটা ব্যাপার।

প্রশ্ন : নিশ্চয়ই সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স আপনাকে মুগ্ধ করেছে?
কপিল : সাকিব অসাধারণ খেলেছে। ব্যাটসম্যান হিসেবে সে ১ নম্বর হওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। বোলিংয়ে তো ও সব সময়ই ভালো।

প্রশ্ন : বিশ্বকাপের মতো আসরে একজন অলরাউন্ডার যখন এমন খেলে, তখন আপনার কাছে তো সেটা বিশেষ ব্যাপার; যখন আপনিও এ রকম একজন অলরাউন্ডার ছিলেন?
কপিল : অলরাউন্ডার হিসেবেই সে এই বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলে গেছে। ১ নম্বর অলরাউন্ডার। অলরাউন্ডার মানে দুটোতেই ভালো। কিন্তু শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখলেই তো সে সবার ওপরে ছিল অনেকটা সময়। একজন অলরাউন্ডার যখন নিজের খেলার দুটো দিককেই এত ওপরে নিয়ে যায়, তখন তা দারুণ ব্যাপার। আরো দারুণ লাগল সাকিব বাংলাদেশের বলে। এ রকম দেশের কোনো একজন খেলোয়াড় সর্বোচ্চ উচ্চতায় গেলে পুরো দলের জন্যই তা দারুণ ব্যাপার।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের আরেকজন পারফরমার মুস্তাফিজ। একজন পেসার হিসেবে ওর প্রতি আপনার পরামর্শটা কী?
কপিল : সত্যি যদি জানতে চাও, মুস্তাফিজকে আরো ভালো করতে হবে। আরো পরিশ্রম করতে হবে। এসব তরুণের জন্য তাদের একজন নতুন অধিনায়ক দরকার, যে তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। তবে আমি মনে করি সব মিলিয়ে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ দল।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের কোনো একটা ঘাটতির কথা যদি জানতে চাই, যে জন্য দলটা এমন শুরু করেও শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে যেতে পারল না।
কপিল : আমি নেতিবাচক কিছুর কথা বলব না। নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক কথাই বেশি বলা উচিত। আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চান নেতিবাচকের চেয়ে আপনাকে ইতিবাচক জিনিসই বেশি দেখতে হবে। আর আমিও ইতিবাচক মানুষ, নেতিবাচক নই। কাজেই নেতিবাচক কিছুর কথা আমি বলতে পারব না। আমি সব সময় বলি দলটা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। ১০ বছর আগে তারা যে রকম ছিল, তার চেয়ে এখন অন্য রকম। তবে এর পরও যদি জানতে চাও, তাহলে বলতে পারি বাংলাদেশ পজিটিভ ছিল; কিন্তু আক্রমণাত্মক ছিল না। কখনো কখনো তোমাকে আক্রমণাত্মক হতে হবে। না হলে সবার কাছে প্রেডিক্টেড হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : আচ্ছা বাংলাদেশের এই ব্যাপারটা আপনার কেমন লাগে, যখন তাদের সমর্থকরা আবেগে এমনকি ভারতের সঙ্গেও পাল্লা দেয়। ক্রিকেটে ভারতীয় উন্মাদনার কথাও সবাই জানে, নতুন একটা দেশ ক্রিকেটকে এভাবে বরণ করছে!
কপিল : বাংলাদেশের এই আগ্রহ আমি লক্ষ্য করেছি। আসলে সবাই-ই খেয়াল করেছে। বাংলাদেশের মানুষ এখনো ফুটবল ভালোবাসে। তবে এখন তারা ক্রিকেটকেও পছন্দ করতে শুরু করেছে। তাদের এক্সট্রা অর্ডিনারি খেলোয়াড় দরকার। নিজেদের শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করেই ওদের খেলা উচিত। স্পিন, কবজির ব্যবহার—এসব। কাউকে অনুকরণ করার দরকার নেই। ওরা নিজেরা কী হতে চায়, সেটাই চেষ্টা করতে হবে। সেভাবেই আচরণ করা উচিত।

প্রশ্ন : আপনি বলছেন বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলকে ভালোবাসে! এই তথ্যের ভিত্তি কী, কারণ বিষয়টা এখন আসলে আর ওই রকম নয়। ফুটবল এখন অনেক নিচে নেমে গেছে।
কপিল : আমি তো এই বিশ্বেই বাস করি। বাংলাদেশে গেছি কাজেই বাংলাদেশ সম্পর্কে জানি। ওদের ফুটবলপ্রেমও আমার জানা।

প্রশ্ন : সেটা বোধ হয় আপনি যখন খেলতে গিয়েছিলেন সেই ১৯৮৮ সালের অভিজ্ঞতায় বলছেন। এখন ক্রিকেটের ধারেকাছে ফুটবল বা অন্য কোনো খেলা নেই।
কপিল : তাই কি! এটা হওয়া উচিত নয়। ফুটবল ভালোবাসায় তো সমস্যার কিছু নেই। ফুটবল একটা চমত্কার খেলা। তরুণদের অবশ্যই এই খেলাটা খেলা উচিত। সব পর্যায়ের অ্যাথলেটদের জন্য এটা খুবই জরুরি।

প্রশ্ন : ১৯৮৮ এশিয়া কাপ খেলতে গিয়েছিলেন, সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে অদ্ভুত লাগে না যে তখন বাংলাদেশের মানুষ আপনাদেরই দেখতে আসত শুধু। এখন তাদের নিজেদেরই অনেক তারকা।
কপিল : এখনকার বাংলাদেশ একেবারেই অন্য রকম। তারা খুবই ক্রীড়াপ্রেমী একটি জাতি। উপমহাদেশের সব দেশই আসলে এ রকম। শ্রীলঙ্কার জন্য খারাপ লাগে, তারা একটু পিছিয়ে গেছে। পাকিস্তানের জন্যও খারাপ লাগে। তারা নিজেদের দেশে খুব বেশি ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো এখন এগিয়ে আসছে।

প্রশ্ন : ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ হলেই ভারতীয়দের কাছে আপনি বারবার ফিরে আসেন। সেই একই প্রসঙ্গ, একই প্রশ্ন। উপভোগ করেন না একঘেয়ে লাগে?
কপিল : সেটা ছিল অন্য একটা সময়। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় ওটা অন্য কেউ ছিল। আমি নই। ৩৫-৩৭ বছর চলে গেছে। ভালো লাগে, তবে এটা এখন ইতিহাস।

 প্রশ্ন : সেই বিশ্বকাপে আপনার ১৭৫ রানের ইনিংসটাকে অনেকেই মনে করেন ভারতের ওয়ানডে অগ্রগতির ভীত। ওই সেঞ্চুরি, তারপর বিশ্বকাপ জয়, তাতেই ক্রিকেটটা ভারতে এত জনপ্রিয় হয়েছে। আজকের পরিবর্তনও সেই কারণেই।
কপিল : আমরা ভাগ্যবানও ছিলাম সেবার। সব হয়েছিল। মানুষ তখনো আমাদের কাছে অনেক কিছু চাইত। তারা চাইত আমরা সব করে ফেলি। সেবারই প্রথম আমরা মানুষকে দেখাতে পারি যে বিশ্বকে জয় করার ক্রিকেট ভারত খেলতে পারে। সেই সূত্রে জনপ্রিয়তা, আরো সাফল্য—হয়তো অনেকে এভাবেই ভাবে। আর এ রকম কিছু হলে আপনি গর্ববোধ করবেনই।

প্রশ্ন : ভারতীয় দল তো আপনাদের সময়ের তুলনায় অনেক আগানো। তখন ভারতের জয় ছিল একরকম ফ্লুক, অথচ এই বিশ্বকাপে বা এখনকার সময়ের ওয়ানডেতে ভারত কাগজে-কলমেই প্রতিষ্ঠিত দল।
কপিল : দারুণ করছে ভারত। কোহলির অধিনায়কত্ব খুব আগ্রাসী। ধোনির চেয়ে সে অন্য রকম; কিন্তু খুবই কার্যকর। নেতৃত্ব দেয় সামনে থেকে। দলের এমন হয়ে ওঠার পেছনে ওর বিরাট ভূমিকা।

প্রশ্ন : ধোনিকে নিয়ে কিন্তু সমালোচনা হচ্ছে।
কপিল : অকারণ সমালোচনা। কত ম্যাচ জিতিয়েছে। আর কোনটা নিয়ে কথা হচ্ছে। ধোনির যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ভারতীয় ব্যাটিংকে বদলাতে সাহায্য করেছে, সেটারই সমালোচনা হচ্ছে। আমরা খুব বেশি অধৈর্য।

প্রশ্ন : এখনকার ক্রিকেটকে কিভাবে দেখেন? অনেকে বলেন, আপনাদের সময়ের সেই উপভোগ্যতা আর নেই। অনেক বেশি অর্থ আর বাণিজ্যকেন্দ্রিক।
কপিল : খুব বেশি জানি না আমি এই সময়ের ক্রিকেট নিয়ে। আমি খুব একটা মাঠে যাই না। যখন যাই, তখন দর্শক হিসেবেই দেখি। এরচেয়ে বেশি ভেতরে আসলে ঢুকতে চাই না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে