শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৫:৫৭

পাঁচ উপহার নিয়ে সৌরভের কাছে সান্তা

পাঁচ উপহার নিয়ে সৌরভের কাছে সান্তা

বৈশালী ডালমিয়া : মেরি ক্রিসমাস বলতে যদি আজ সৌরভ গাঙ্গুলীর বেহালার বাড়িতে ঢুকে পড়তেন সান্তা ক্লজ? কী উপহার পেতেন সাবেক অধিনায়ক? প্রয়াত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার কন্যা বৈশালী নিজেই সান্তা হয়ে লিখলেন তার পছন্দের পাঁচ উপহারের কথা: হ্যালো সৌরভ, মেরি ক্রিসমাস। এ বছর আমিই তোমার সান্তা ক্লজ হিসাবে হাজির হয়ে গেলাম। ব্যাগে করে পাঁচটা ‘গিফ্‌ট’ নিয়ে এসেছি। এক-একটা করে বার করছি... ১) নতুন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘমেয়াদী হোক : অনেক ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, আমার বাবা সিএবি প্রশাসন সামলেছেন। সিএবি প্রেসিডেন্ট থেকেছেন অনেকদিন। সেই পদে এখন তুমি। আর তুমি এমন একজন, যে কি না আমাদের পরিবারেরও খুব কাছের। বাবা কতটা তোমাকে স্নেহ করতেন, সেটার সাক্ষী থেকেছি বহুবার। ক্রিকেট প্রশাসনে তোমার আসা নিয়েও বাবা খুব উৎসাহী ছিলেন। এবং, কোনও সন্দেহ নেই যে, উনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, তুমিও একদিন সিএবি প্রেসিডেন্টের পদে বসার যোগ্য ব্যক্তি। একটা ছবির কথা খুব মনে পড়ছে। ‘এবেলা খেলা’র পাতাতেই দেখেছিলাম। একটা অনুষ্ঠানে বাবার মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন সংগঠকেরা। বাবা সেটা খুলে তোমাকে দিচ্ছেন। ছবিটা খুবই অর্থবহ মনে হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে বাবার কথাবার্তা শুনে আমার তো মনে হতোই যে, উনিও চান সিএবি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে একদিন স্নেহের সৌরভই বসুক। সান্তা ক্লজ হিসাবে হাজির হয়ে তাই প্রথম চাইব, বাবা যে চেয়ারে বসে বাংলা এবং ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করেছেন, সেটাকে তুমি এগিয়ে নিয়ে যাও। ২) সফল বিশ্বকাপ ফাইনাল : এটা নিয়েও আমার মতো প্রচুর বাঙালির আবেগ জড়িয়ে থাকার কথা। এবং, সেই সঙ্গে ইতিহাস। সাতাশিতে আমরা শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখেছি ইডেনে। তখন আমি খুবই ছোট। সেই সময় বয়সে আরও অনেক তরুণ এক জগমোহন ডালমিয়া ছিলেন ব্যস্ত ক্রিকেট প্রশাসক। বাড়িতে বসে দেখতাম খাওয়া, ঘুম ত্যাগ করে শুধু বাবা পড়ে আছেন বিশ্বকাপ ম্যাচের সফল সংগঠন করা নিয়ে। সারাক্ষণ সিএবি সতীর্থদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছেন। কখনও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছেন। কখনও ক্রমাগত ফোনে ব্যস্ত। সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত খেলতে পারেনি। সেমিফাইনালেই ছিটকে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের কাছে হেরে। ফাইনাল হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের। আর কাপ জিতেছিল বর্ডারের অস্ট্রেলিয়া। তারপর আঠাশ বছর পর আবার একটা বিশ্বকাপ ফাইনাল ইডেনে। আমার মনে হচ্ছে, দু’টো যুগের সাক্ষী থাকতে চলেছি। আগের যুগটায় বাবাকে দেখেছি চণ্ডীদার (সৌরভের প্রয়াত পিতা চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে। এখন সিএবি-তে তুমি প্রেসিডেন্ট আর আমার ভাই অভিষেক সচিব। আগের প্রজন্মের মতোই যদি তোমাদের দারুণ একটা পার্টনারশিপ হয়, তার চেয়ে আনন্দের আর কিছু থাকবে না। সান্তার দ্বিতীয় বরটা যদিও আগের আক্ষেপ মেটানোর জন্যও থাকছে। সফল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে কাপ জিতুক ভারত। যেটা সাতাশিতে দেখা হয়নি। ৩) বাংলা জিতুক রঞ্জি : প্রেসিডেন্ট নিজে যখন ক্রিকেটার, তখন তার কাছে ক্রিকেটীয় প্রাপ্তির একটা অন্যরকম অর্থ থাকবেই। বাংলা শেষবার রঞ্জি জিতেছে ১৯৮৯-৯০ মরসুমে। সেই টিমে অভিষেক ঘটেছিল বাঁহাতি সৌরভের। এখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিশ্চয়ই তুমি চাইবে এতবছরের ট্রফিহীনতার দুঃখ মুছে যাক। আশার কথা হচ্ছে, এবারে আমাদের ছেলেরা ভাল করছেও। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছে দল। আর তিনটে ম্যাচ। জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারলেই রঞ্জি বাংলার। নতুন বছরে যদি সেই লক্ষ্যপূরণ হয়ে যায়, কে বলতে পারে লর্ডসের মতো আবার জামা খুলে ওড়ানোর দৃশ্যও তো ফিরে আসতে পারে। তখন ছিল ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি। এখন প্রেসিডেন্ট সৌরভ। সান্তার তৃতীয় বর তাই এটাই— রঞ্জি ট্রফি জিতুক বাংলা। ৪) বাংলা থেকে ভারত : এই আক্ষেপটা তোমার নিজেরও আছে বুঝতেই পারছি। ভারতীয় দলে বাংলা থেকে আরও নিয়মিতভাবে ক্রিকেটারদের না থাকা। এই মুহূর্তে টেস্ট দলে আছে ঋদ্ধিমান (সাহা)। আর সমস্ত ফর্ম্যাটের দলেই নিয়মিত ক্রিকেটার শামি। চোটের জন্য যদিও শামি অনেকদিন মাঠের বাইরে ছিল। আবার অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে ফিরেছে। এর বাইরে অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ দলে কেউ নেই বাংলার। ভারতীয় ‘এ’ দলেও কাউকে দেখছি না। এটা নিয়ে খচখচানি তো থেকেই যায়। এই বাংলা থেকে তুমি ভারতের অধিনায়কত্ব করেছ সফলভাবে। আমাদের সকলের কাছে সেটা ছিল খুবই আনন্দের একটা সময়। তোমার নেতৃত্বে সোনার বাংলা ফিরুক, সান্তা হিসাবে সেই উপহার দিতে চাই। ৫) ৫) অফসাইডের ঈশ্বরের ঝলক : শোনো, প্রশাসনের ব্যাপারটা তো আছেই। সে নিয়ে চারটে বর দিয়েছি। পঞ্চমটা দিতে চাই জনতার স্বার্থে। মাঝেমধ্যে মাস্টার্স লিগ-টিগে নেমে পড়তে পারো। আমেরিকায় গিয়ে হাফসেঞ্চুরি তো করে এলে। তাহলে আর একটু চেষ্টা করলে সেঞ্চুরিও হয়ে যাবে। আর তোমার ভক্তরাও পুরনো দিনের ঝলক দেখতে পাবে। অফসাইডে সেই ড্রাইভগুলো অথবা স্টেপ আউট করে ছক্কা। এই তো দুবাইয়ে মাস্টার্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হবে শুনছি। তোমার নামও তো দেখলাম রয়েছে সেখানে ‘মার্কি প্লেয়ার’দের মধ্যে। নেমে পড়ো, একদম নেমে পড়ো। মনে রেখো ফ্যান-রা কিন্তু চাইছে... মেরি ক্রিসমাস বৈশালী ডালমিয়া ২৬ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে