সোমবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০১৬, ০১:০৭:৫৬

শর্ত লঙ্ঘন করেছে বিপিএলের পাঁচটি দল

শর্ত লঙ্ঘন করেছে বিপিএলের পাঁচটি দল

স্পোর্টস ডেস্ক : বিপিএলে মানা হয়নি বৈদেশিক মুদ্রা আইন। এমনটাই অভিযোগ উঠলো। কোনও বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি মুদ্রায় পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হলে প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমতি। এবং আয়ের বিপরীতে আয়কর হিসেবে যে কোন বিদেশিকে দিতে হবে ৩০ শতাংশ। আর বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ওই বিদেশিকে পারিশ্রমিক পরিশোধ করবে, তারা সরকারকে দেবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জারি করা নির্দেশে (এসআরও) সে শর্ত রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ( বিপিএল)-এর তৃতীয় সংস্করণে ওই শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিপিএল ৩-এর সফল সমাপ্তি শেষে ক্রিকেটারদের পেমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। অথচ মাত্র একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ছাড়া অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিতে যথাযথ আইন মানেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈদেশিক মুদ্রায় পাওনা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। তা সত্ত্বেও বরিশাল বুলস ছাড়া অন্য কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি নাকি বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ক্রিকেটারদের পাওনা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করেনি। ব্যাঙ্কের এক মুখপাত্র এমন তথ্যই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেবল একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের ন’জন বিদেশি খেলোয়াড়ের পাওনা বাবদ মোট দু’লাখ ২৫ হাজার ডলার বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধের অনুমোদন চেয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ( বিসিবি)-ও এ বিষয়ে সুপারিশ করেছিল। আমরা অনুমোদন দিয়েছি।” বিপিএলে নুতন ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েও বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক মেটাতে সকল প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে মেনেছে বরিশাল বুলস। দলটির শেয়ারহোল্ডার এম এ আউয়াল চৌধুরী বুলু তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কী ভাবে পরিশোধ করতে হবে, তা চুক্তিপত্রে বলা রয়েছে। বিষয়টি চুক্তিতেও আছে। আমরা বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক শোধের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমতি নিয়েছি।” অথচ, বিপিএলের তৃতীয় সংস্করণে অংশগ্রহণকারী ছ’টি ফ্র্যাঞ্চাইদের মধ্যে পুরনো রংপুর রাইডার্স এ শর্ত পালন করেনি। দলটির মালিক মোস্তফা রফিকুল ইসলাম বিদেশি ক্রিকেটারদের পেমেন্ট পুরোপুরি মিটিয়ে দেওয়ার কথা বললেও বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। উল্টো দায়টা তিনি চাপিয়েছেন বিসিবি’র উপর। রফিকুন আরও বলেন, “আমরা তো চুক্তিবদ্ধ বিসিবি’র সঙ্গে। বিসিবিকে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দেওয়া আছে। সুতরাং এ ব্যাপারটি বিসিবি-ই ভাল বলতে পারে।” বিপিএল ৩-তে ছ’দলের হয়ে খেলে গিয়েছেন ৫১ জন বিদেশি ক্রিকেটার। ন্যূনতম ৩০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার মার্কিন ডলারে বিদেশি ক্রিকেটারদের যে দক্ষিণা হিসেব দাখিল করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা, তাতে ওই ক্রিকেটারদের প্রাপ্ত পারিশ্রমিকের ট্যাক্স (৩০ শতাংশ) থেকেই শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনার পরিমাণ ৪ কোটি ৫২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমতি না নেওয়ায় শর্ত লঙ্ঘন করেছে পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এ ব্যাপারে বিসিবি-কে তিন বার চিঠিও দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু তার কোন উত্তর এখনও পায়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে বিদেশি ক্রিকেটারদের পাওনা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমতি না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। তিনি বলেন, “প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি কোম্পানী অ্যাক্ট অনুযায়ী নিবন্ধিত। এবং সবাই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বিসিবি’র সঙ্গে যে পেপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা, সেখানে প্রচলিত বিধি বিধান মানতে হবে, তা বলা আছে। বিদেশি ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধে তারা যদি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে না চলে, তার দায়ভার তো আমরা নিতে পারি না। তাদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা আছে বিসিবি-তে। সুতরাং, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যদি ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে কোন অনিয়মের অভিযোগ তোলে, তা হলে সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি থেকে আমরা তা কেটে নেব।” বিপিএলের উদ্বোধনী আসরের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব সিরাজউদ্দিন মহম্মদ আলমগীর অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্লেয়ার্স পেমেন্টের অনুমতি এবং ক্রিকেটারদের ট্যাক্স ও ভ্যাটের দায়িত্বটা বিসিবিকেই নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তিনি বলেন, “ট্যাক্স এবং ভ্যাট-সহ খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের পুরোটা ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে বিসিবি বুঝে নিয়ে পেমেন্টের প্রক্রিয়াগুলো নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারে। তা হলে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা পেমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে বিসিবি-কে বিব্রত করতে পারবে না।” তিন কিস্তিতে বিপিএল’র প্লেয়ার্স পেমেন্টের শর্ত ছিল বিসিবি’র। আসর শুরুর আগে পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পরিশোধ করার কথা ফ্র্যাঞ্চাইদের। বিসিবি’র এই শর্ত মেনে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিয়েও কিন্তু ধন্যবাদ পাচ্ছে না পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজি। স্থানীয় ক্রিকেটারদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দেওয়া হলেও ৫১ জন বিদেশী ক্রিকেটারের মধ্যে ৪২ ক্রিকেটারের বৈদেশিক মুদ্রায় পেমেন্টে দেওয়ার ক্ষেত্রে সে আইন মানা হয়নি। ৪ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে