সোমবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:৪৫:১৭

বাবাকে দেয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন আলিম দার

বাবাকে দেয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন আলিম দার

স্পোর্টস ডেস্ক : পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলা হয়নি তার। অথচ তিনি নির্বাচিত হয়েছেন আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার। সেরা আম্পায়ারও নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার। বলা হচ্ছে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের কথা। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ। আর ওই টেস্টেই ১০০ ম্যাচে পরিচালনার গৌরব অর্জন করলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হওয়া আলিম দারের। আলিম দার হলেন তৃতীয় এলিট আম্পায়ার যিনি ১০০ টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে স্টিভ বাকনার এবং রুডি কোয়ের্টজেন এ গৌরব অর্জন করেছিলেন। আলিম দারের জীবনের গল্পটা ছিল একটু ভিন্ন ধরনের। আলিম দার এবং পাকিস্তানের কিংবদন্তি বোলার ওয়াসিম আকরাম একই সঙ্গে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। আলিম দার ছিলেন ব্যাটসম্যান এবং আকরাম ছিলেন বোলার। লাহোরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজে নাম লেখান এই দুইজন। আকরামকে প্রথমেই বোলার হিসেবে এবং দারকে ব্যাটসম্যান হিসেবে নির্বাচন করেন নির্বাচকরা। আলিম দার জানান, তারা একই সঙ্গে খেলতেন। তবে আকরাম খুব শিগগিরই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়ে গেল। এবং খুব তাড়াতাড়ি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিল। কিন্তু দার ভালো খেলেও দলে সুযোগ পেলেন না। তাই তিনি বুঝতে পারলেন যে তার জন্য জাতীয় দলে খেলা খুবই কঠিন। আলিম দার বলেন, আমি সত্যিই একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। আমি দ্বিতীয় বিভাগ এবং প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ভালো করেছি। কিন্তু জাতীয় দলের খেলোয়াড় হওয়া আমার পক্ষে খুবই কঠিন বিষয়। এভাবে তার স্বপ্ন যখন নষ্ট হতে যাচ্ছিল তখনই তার বাবাকে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে তিনি অনেক বড় কিছু হবেন। এবং সেটা তিনি সেরা আম্পায়ার নির্বাচিত হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আলিম দারের ভাষ্য, আমি গুজরানওয়ালা থেকে আসার সময় আমার বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে অনেক বড় কিছু হবো। আমার সেই প্রতিজ্ঞা আমি রক্ষা করতে পেরেছি। আলিম দারের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট: পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে প্রফেশনাল আম্পায়ার তৈরি করতে একটি কর্মসূচি শুরু করে। তখন আজহার জাইদি আলিম দারকে সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে বলেন। সেই সুযোগটাই আজ আলিম দারকে এই পর্যায়ে এনেছেন বলে জানিয়েছেন দার। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর থেকেই আম্পায়ারিং বিষয়টাকে উন্নতি করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পান দার। আলিম দার মাত্র একবছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পান। আলিম দার এ বিষয়ে বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমাকে মাত্র এক বছরের অভিজ্ঞতায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়। কোনো টেস্ট খেলোয়াড় যদি আম্পায়ার হতে চায় তাহলেও তাকে ৫-৬ বছরের সময় লাগে ম্যাচ পরিচালনা করার সব প্রকল্প শেষ করতে। তিনি বলেন, আমার জীবনের সব থেকে টার্নিং পয়েন্ট হলো ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ। সেসময় মাত্র ১২ ম্যাচ পরিচালনা করার পরও আইসিসি আমাকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। এটা মাত্র ৪ জন আম্পায়ার করতে পেরেছিল। এটা আমার জন্য ছিল অনেক বড় একটি অর্জন। মূলত ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে আলিম দারের ভালো আম্পায়ারিংয়ের জন্য খুব দ্রুত টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার জন্য সুযোগ পান দার। ওই বছরেই অক্টোবর মাসে ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যকার ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পান আলিম দার। ওই ম্যাচের পরেই দার আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে ঢুকে পড়েন। তবে ৪৭ বছর বয়সী এ পাকিস্তানি এতো বড় মাপের আম্পায়ার হয়েও দেশের কথা ভুলেননি। তিনি যখন প্রথম সেরা আম্পায়ারের পুরস্কার পান তখন তিনি ভাবতে থাকেন যে দশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার চোখে জল চলে এসেছিল। আমি ভাবতেও পারিনি জীবনে এতো বড় কিছু হবো। আলিমদার যাকে ফলো করতেন তিনি হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টিভ বাকনার। আলিম দার বলেন, শুধু আম্পায়ারিং নায়, যেকোনো পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করলে এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে করলে অনেক বড় কিছু হওয়া যায়। কোনো স্বপ্ন সেটা যতই বড় হোক না কেন সেটার বাস্তবায়ন করা কঠিন নয়।-যুগান্তর ৪ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে