বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১, ০৭:১১:১০

জীবন চালাতে চা-সিঙ্গাড়া বিক্রি করছেন কোচরা

জীবন চালাতে চা-সিঙ্গাড়া বিক্রি করছেন কোচরা

করোনার তাণ্ডবে দীর্ঘদিন বন্ধ থেকেছে খেলাধুলা। সম্প্রতি অবশ্য বড় আসরের খেলা শুরু হয়েছে। তবে ছোট মাঠের খবর কী! ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়াও বাকি অনেক খেলার অস্তিত্বই রয়েছে।  

গত বছর থেকে শুরু হওয়া মহামারি করোনার তাণ্ডবে কাজ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। লকডাউনে নিজের কাজ হারানোর পর হাতের কাছে যা কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন অনেকে। এই কোভিডের প্রভাবেই ভারতের উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন খেলাধুলার বহু কোচ নিজেদের কাজ হারিয়েছেন। এখন সংসার চালানোর জন্য তারা কেউ চা বিক্রি করছেন, কেউ আবার করছেন কাঠমিস্ত্রির কাজ। খবর কলকাতা ২৪ ঘণ্টার।

লখনউর সঞ্জীব কুমার গুপ্ত একজন অভিজ্ঞ ফেন্সার। তবে এখন তিনি কাঠমিস্ত্রি। দিনে ৩০০ রুপি আয় করেন সঞ্জীব। একাধিক পদকজয়ী এই ফেন্সার দীর্ঘদিন ভারতীয় সামরিক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। সঞ্জীবের ১২ বছরের মেয়ে খ্যাতি গুপ্ত জাতীয় স্তরে সোনাজয়ী। কিন্তু তাকে পোল্যান্ডে পাঠাতে পারেননি সঞ্জীব। সাহায্য চাইতে হয়েছে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েকের কাছে।

মুখ্যমন্ত্রীর থেকে কোনো সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন সঞ্জীব। স্কুল যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে খ্যাতির। টাকা জমা দিতে না পারায় পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার ফল পায়নি সে। সঞ্জীবের একটি ১৪ বছরের ছেলেও রয়েছে। সেও ফেন্সিংয়ে পারদর্শী। কিন্তু বাবার অবস্থা দেখে সেই দিকে এগোতে রাজি নয় ছোট দিব্যাংশু।

মহেন্দ্র প্রতাপ সিং পেশাগতভাবে তিরন্দাজির কোচ। তিনি কলকাতার ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্টস থেকে তিরন্দাজিতে ডিপ্লোমা করেছেন। ৮ বছর জাতীয় স্তরে তিরন্দাজিতে উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কোচ হিসেবেও তার প্রায় ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোচ হিসেবে তিনি উত্তরপ্রদেশ স্পোর্টস ডিরেক্টরেট এবং ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে কাজ করেছেন। কিন্তু এই ৪৪ বছর বয়সী মহেন্দ্র এই লকডাউনের কারণে এখন অর্থাভাবে ভুগছেন। তার অর্থাভাব এতই চরমে উঠেছে, তার দুই ছেলে দেবাংশ (৮) এবং বেদাংশের (৫) স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

মহেন্দ্র এখন সংসার চালাতে নিজের বাড়ির সামনে সিঙ্গাড়া বিক্রি করেন। তিনি ভারতের সংবাদমাধ্যমের কাছে আক্ষেপ করে বলেছেন, সারা জীবন ধরে শুধু তিরন্দাজদের তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন। এদের মধ্যে অনেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের রাজ্য ও দেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। কিন্তু এখন নিজের দুর্দশা দেখে তার মাঝেমধ্যে মনে হয় খেলাধূলাকে পেশা হিসেবে বেছে তিনি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কিনা।

মোহাম্মদ নাসিম কুরেশি জাতীয় পর্যায়ে বক্সিংয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি চুক্তিগত প্রশিক্ষক হিসেবে ৩২ বছর ধরে বহু জাতীয় স্তরের বক্সারদের অনুশীলন করিয়েছেন। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই কাজ করছিলেন। লকডাউনের পরে তিনি অর্থের সংস্থানের জন্য চা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তবে তার কিছু ছাত্ররা তাকে এই কাজ করতে বাধা দেন এবং নিজেরা এই কঠিন সময়ে গুরুর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ৫৬ বছর বয়সী নাসিম সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যাতে এই কঠিন সময়ে তাকে কিছু সাহায্য করা হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে