স্পোর্টস ডেস্ক: কার বাঁশির ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি বলুন দেখি? রোমান্টিক হলে বলবেন, কৃষ্ণের কিংবা প্রেমিকের। যাঁর বাঁশির সুর শুনে আনচান করে ওঠে ঘরবন্দী প্রেয়সীর মন। বাস্তববাদী হলে বলতে পারেন, ট্রাফিক পুলিশের। এক ফুঁতেই কেমন থেমে যায় গাড়ি! আর ফুটবলপ্রেমী হলে বলবেন, রেফারি!
ফুটবল মাঠে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। পুরো খেলার নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে। রাখালিয়ার বাঁশির মতো মনে ভাবের সৃষ্টি হয়তো করে না, তবে তাঁর কর্কশ আওয়াজের বাঁশির শক্তিও কম নয়। রেফারির আরও ক্ষমতাশালী দুটো অস্ত্র আছে—লাল আর হলুদ কার্ড! সতর্ক করে দেওয়া কিংবা কোনো খেলোয়াড়কে একেবারেই মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার ‘জাদুকরী’ ক্ষমতা আছে এই কার্ডের।
কিন্তু কখনো কি দেখেছেন, খোদ রেফারিই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ছেন? এ তো অভাবিত দৃশ্য!
অভাবিত হতে পারে, তবে অভূতপূর্ব নয়। একবার নয়, দুবার এমন কাণ্ড হয়েছে। পেশাদারি ফুটবলে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই, হয়ওনি। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হওয়া দুই রেফারিই অপেশাদার লিগের ম্যাচ পরিচালনা করছিলেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধেছিল কে?’ কার এমন সাহস রেফারিকেই লাল কার্ড দেখায়! উত্তরটা সোজা। অন্য কারও এমন দুঃসাহস করতে হয়নি, রেফারি নিজেই নিজেকে লাল কার্ড দেখিয়ে বের হয়ে গেছেন।
এমন অবাক করা কাণ্ড হয়েছিল ২০০৫ সালে। ইংল্যান্ডের অপেশাদার সানডে লিগে পিটারবরো নর্থ এন্ড ও রয়্যাল মেইল এওয়াইএলের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। রেফারি ছিলেন অ্যান্ডি ওয়েইন। ম্যাচে খানিক পরপর তাঁর কানের কাছে এসে অভিযোগের প্যানপ্যানানি শোনাচ্ছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। মোটামুটি সহ্য করেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু নর্থ এন্ড একটি গোল খাওয়ার পর তাদের গোলরক্ষক রিচার্ড ম্যাকগাফিন এসে অভিযোগ করতে শুরু করল, যে ফ্রি কিক থেকে গোল হয়েছে, তার আগেই পিটারবরোর এক খেলোয়াড় নাকি ফাউল করেছে। এতেই বাঁধ ভেঙে গেল ওয়েইনের। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! পুরো নাটকীয় অ্যাকশনের মতো, প্রথমে তাঁর বাঁশি ছুড়ে ফেলে দিলেন। দৌড়ে গিয়ে চোখ পাকালেন ম্যাকগাফিনকে।
এতটুকু পর্যন্ত তা-ও মানা যাচ্ছিল। কিন্তু এর পরই মাঠে উপস্থিত গুটিকয়েক দর্শককে ‘জীবনে একবার হয়’ ধরনের ঘটনার সাক্ষী বানিয়ে দিলেন ওয়েইন। নিজেই নিজেকে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে গেলেন মাঠ থেকে। আর কেউ তাঁর বদলে ম্যাচ পরিচালনা করার মতো না থাকায় ম্যাচ ওখানেই বাতিল হয়ে যায়। পরে অবশ্য ওই ঘটনাকে ‘অপেশাদার আচরণ’ স্বীকার করে নিয়ে এর জন্য লজ্জা প্রকাশ করেন ওয়েইন। ম্যাচের আগের দিন তাঁর কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল বলেও জানিয়েছেন।
তবে ওয়েইনের ঘটনা তো মেলভিন সিলভেস্টারের কাছে নস্যি। বরং নিজেই নিজেকে লাল কার্ড দেখানোর ‘পথিকৃৎ’ হিসেবে ওয়েইন নয়, নাম আসবে সিলভেস্টারেরই। ১৯৯৮ সালে ঘটেছিল এই ঘটনা, এটিও ইংল্যান্ডের অপেশাদার লিগে। সাউদাম্পটন আর্মস ও হার্স্টবোর্ন ট্যারেন্ট ব্রিটিশ লিজিওনের ম্যাচে এক খেলোয়াড়কে কিল-ঘুষি মারার পর নিজেই নিজেকে কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সিলভেস্টার।
নিজের অমন অদ্ভুত আচরণের ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ‘আমাকে প্রভাবিত করা হচ্ছিল। ওই খেলোয়াড়টি যখন আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারল, তখন আর সহ্য হলো না। মেজাজ হারিয়ে কয়েকটা ঘুষি মেরে বসেছিলাম।’
রেফারির ‘আত্মাহুতি’ লাল কার্ডের পরও অবশ্য ওই ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়নি। এক দর্শক এসে ম্যাচের বাকি অংশটুকুর রেফারি হয়ে ফুটবলকে উদ্ধার করেছেন। তবে সিলভেস্টারের ঝামেলা ওখানেই শেষ হয়নি। হ্যাম্পশায়ার ফুটবল ফেডারেশন তাঁকে ২০ পাউন্ড জরিমানা ও ছয় ম্যাচ বহিষ্কার করেছিল। এই সিদ্ধান্ত নিয়েও বেশ ক্ষোভ ছিল সিলভেস্টারের মনে, ‘আমি ক্ষুব্ধ। শৃঙ্খলা কমিটি কাকে বেশি গুরুত্ব দেবে বুঝতে পারেনি। আমাকে ওঁরা আক্রমণের জন্য দোষী করেছে, কিন্তু পুরো ঘটনাটা দেখেনি। ওই খেলোয়াড়ের পক্ষ নিয়েছে ওরা।’
ম্যাচ শেষে রেফারিং নিয়ে এন্তার অভিযোগ করেন নাখোশ কোচরা। কখনো কখনো খেলোয়াড়রাও। ম্যাচ নিয়ে রেফারিকেও তাহলে অভিযোগ করতে শোনা যায়! সূত্র : প্রথম আলো
১১ জানুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর